ঢাবি ডাকসু নির্বাচনে বিজয়ীদের অভিনন্দন জানালেন সালাহ উদ্দিন আহমদ

Sanchoy Biswas
বাংলাবাজার রিপোর্ট
প্রকাশিত: ৭:৪৬ অপরাহ্ন, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫ | আপডেট: ৪:২৫ পূর্বাহ্ন, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫
ছবিঃ সংগৃহীত
ছবিঃ সংগৃহীত

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে বিজয়ীদের অভিনন্দন জানিয়েছেন সালাহ উদ্দিন আহমদ।

বুধবার দুপুরে এক আলোচনা সভায় ডাকসু নির্বাচন বিষয়ে স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যক্তিগতভাবে নিজের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।

আরও পড়ুন: ঢাবি ভিসির সঙ্গে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময়, গণেশ রায়ের পাশে দাঁড়ালেন নিপুণ

তিনি বলেন, গণমাধ্যমগুলো সকাল থেকে জানতে চাইছে... ডাকসু নির্বাচন হলো এবং বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদগুলোর নির্বাচন হবে এই নির্বাচনগুলোর ট্রেন্ড কি এবং এই নির্বাচনের ফলাফল সম্পর্কে আপনাদের মন্তব্য কি?”

যারা আজকে জয়ী হয়েছে তাদের প্যানেলটা ছিল ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট। সেই ব্যানারে যারা জয়ী হয়েছে আমি ব্যক্তিগতভাবে তাদেরকে অভিনন্দন জানাই... এটাই গণতন্ত্রের রীতি। কিছু ত্রুটি-বিচ্যুতি নির্বাচনে হয়েছিল যেহেতু যাত্রা অনেক বছর পরে হয়েছে কিন্তু ত্রুটি-বিচ্যুতি ছিল।”

আরও পড়ুন: ডাকসু নির্বাচনে আ.লীগের সঙ্গে আঁতাত করে জিতেছে শিবির: মির্জা আব্বাস

সালাহ উদ্দিন আহমদ বলেন, দুই-একটি পত্রিকায় দেখলাম যে, ছাত্র শিবিরের প্যানেল জয়ী হয়েছে আমি সাংবাদিক বন্ধুদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই, আমার জানা মতে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র শিবির এই ডাকসু নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি, এই নামে এই ব্যানারে কোনো প্যানেল প্রদান করা হয়েছে কি? না। তো পত্রিকায় বিভিন্ন মিডিয়াতে এভাবে আসছে কেন প্রশ্ন সেখানেই?

সালাহ উদ্দিন আহমদ বলেন, একটা বিষয় লক্ষণীয়, ডাকসু নির্বাচনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল নিজের দলীয় ব্যানারে ঘোষণা দিয়ে নির্বাচন অংশগ্রহণ করেছে।

আর অন্যান্য কয়েকটি দল এমনকি ইসলামী ছাত্র আন্দোলন নামে একটি দল নামে করেছে। কেউ কেউ স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্য নামে করেছে, কেউ সমন্বিত শিক্ষার্থী সংসদ নামে করেছে, বৈষম্য বিরোধী শিক্ষার্থী সংসদ নামে করেছে, অপরাজেয় একাত্তর অদম্য ’২৪ নামে করেছে। যারা স্বনামে ছাত্র সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে চায়নি তার একটা উদ্দেশ্য তো অবশ্যই আছে?

গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ নির্বাচনে আবু সাদিক কায়েম ভিপি, এসএম ফরহাদ জিএস, মো. মহিউদ্দিন খান এজিএসসহ ১২টি সম্পাদকীয় পদের মধ্যে ৯টিতে ইসলামী ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেলের প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন। বাকি তিনটি পদে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন।

কাকরাইলে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটের মুক্তিযোদ্ধা হলে জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে এই আলোচনা সভা হয়। ১৯৭৮ সালের ৯ সেপ্টেম্বর শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান নারীর ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠা করেন।

সালাহ উদ্দিন বলেন, ২৪ ছাত্র-গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে আমাদের সবচেয়ে বড় সংগ্রামের নাম হচ্ছে বাংলাদেশের নতুন যাত্রায় রাজনৈতিক সংস্কৃতি পরিবর্তনের সংগ্রাম। আমাদের এই রাজনৈতিক সংস্কৃতি পরিবর্তনের সংগ্রাম চালু রাখতে হবে, নতুন রাজনৈতিক সংস্কৃতির ধারা প্রচলন করতে হবে।

সেই সংস্কৃতি কি? গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি, সহনশীলতার সংস্কৃতি, সহমর্মিতার সংস্কৃতি এবং সহনশীলতা-সহমর্মিতার মধ্য দিয়ে আমরা পরস্পর রাজনৈতিক দলসমূহের মধ্যে প্রতিযোগিতা করব, রাজনৈতিক চর্চা করব।

তিনি বলেন, যদি আমরা ফ্যাসিবাদের পুনরুত্থান না চাই, ব্যক্তি স্বৈরতান্ত্রিক পদ্ধতি অথবা দলীয় স্বৈরতান্ত্রিক পদ্ধতির উত্থান না চাই, সংসদীয় একনায়কতন্ত্র না চাই এবং একদলীয় রাষ্ট্র ব্যবস্থা কামনা না করি তাহলে আমাদেরকে নতুন গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক সংস্কৃতির ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হবে, চর্চা করতে হবে, লালন করতে হবে।

এইভাবেই আমরা গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক সংস্কৃতির চর্চার মধ্য দিয়ে আমরা বিগত দিনের ফ্যাসিবাদী অগণতান্ত্রিক রাজনৈতিক অপসংস্কৃতিকে বিলুপ্ত করতে পারব, অপসারিত করতে পারব। ভালো রাজনৈতিক প্রচলনের মধ্য দিয়ে আমরা অপরাজনীতির বিলুপ্তি ঘটাতে পারব, সেই রাজনৈতিক চর্চা আমাদেরকে করতে হবে।

রাজনীতিতে প্রতিযোগিতা থাকবে, প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকবে। কিন্তু দিনশেষে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে আমরা সবাই সবাইকে অভিনন্দন জানাবো এটাই আমাদের নীতি হবে।

সালাহ উদ্দিন আহমদ বলেন, এখানে অনেকেই প্রশ্ন করেছে এটা কি জাতীয় রাজনীতিতে কোনো প্রভাব রাখবে? আমি বলতে চাই, ডাকসু, রাকসু, জাগসু, চাকসুসহ বিভিন্ন ছাত্র সংসদ নির্বাচন… আমার ছাত্র জামানাতেই আমরা তখন ভোট দিয়েছি… দেখেছি যাদেরকে নির্বাচিত করেছি… এটা ৮০’র দশকের কথা বলছি। ৭০ দশকের শেষের দিকের ছাত্র আমি।

যারা ডাকসুতে নির্বাচিত হয়েছে তারা বৃহৎ কোনো রাজনৈতিক মূল দলের নয়, ছাত্র সংগঠন না হলে জাতীয় রাজনীতিতে তারা আসতেই পারে না। কারো নাম নেবো না। এখনো ডাকসুতে ভিপি-জিএস হয়েছেন অনেক নেতা জাতীয় রাজনীতিতে আছেন, কেউ বা হারিয়ে গিয়েছেন। তাদের মধ্যে যারা বৃহৎ রাজনৈতিক সংগঠনের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন তাদের কেউ কেউ জাতীয় সংসদে এসেছেন। বাকিরা এখনো পর্যন্ত লড়াই করছেন, সংগ্রাম করছেন আসার জন্য। আমি কারো নাম নিয়ে বলাটা ঠিক হবে না। আমি তাদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ কামনা করি কিন্তু এখনো পর্যন্ত কামিয়াব হয় নাই। এটা হচ্ছে বাংলাদেশের জাতীয় রাজনীতি এবং ছাত্র রাজনীতির একটা পোস্টমর্টেম... বিশ্লেষণ।

তিনি বলেন, তবে এটা আমি উৎসাহিত করি যে, বাংলাদেশের ছাত্র রাজনীতির এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাস থেকে শুরু করে স্বাধীনতার পূর্ববর্তী ইতিহাস থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিবর্তন যা কিছুই হয়েছে, সামাজিক পরিবর্তন হয়েছে সেটা ছাত্র সংসদ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে সেটা হয়েছে অথবা ছাত্র রাজনীতির মধ্য দিয়ে সেটা হয়েছে।

সেই রাজনীতির সুতিকাগার এবং ছাত্র আন্দোলনের সুতিকাগার, রাষ্ট্রীয় পরিবর্তনের সুতিকাগার সেই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্র রাজনৈতিক চর্চা থাকতেই হবে। যারা ছাত্র রাজনীতির বিপক্ষে বলেন বা ছাত্র রাজনীতি বন্ধের কথা বলেন আমি তাদের বিরুদ্ধে। কারণ রাজনীতির চর্চা শিক্ষাঙ্গন পাঠশালা হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়। সেখান থেকে জাতীয় রাজনীতির নেতৃত্ব উঠে আসে ক্রমবিকাশের মধ্য দিয়ে।

সালাহ উদ্দিন বলেন, রাজনীতির শিক্ষা শুরু হতে হবে ছাত্র রাজনীতি দিয়ে। তবে এমন ছাত্র রাজনীতি চাই না যেই ছাত্র রাজনীতির ফ্যাসিবাদী গোষ্ঠীর অতীত নজির স্থাপন করে দিয়েছে। আমরা এমন ছাত্র রাজনীতি চাই, যেই ছাত্র রাজনীতির মূল সূত্র হবে বাংলাদেশে জবাবদিহিতামূলক সাম্যভিত্তিক সুশাসন এবং নৈতিকতার রাজনীতি প্রতিষ্ঠা করবে।

এটা আমাদেরই অঙ্গীকার যে, আমরা এমন রাষ্ট্রব্যবস্থা, এমন সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে চাই সামনের জীবনে যার মূল ভিত্তি হবে এই দেশের সমাজের রাষ্ট্রের সর্বক্ষেত্রে জনগণের কাছে জবাবদিহিতার রাজনীতি সৃষ্টি করা, সুশাসন-নৈতিকতার রাজনীতি সৃষ্টি করা, সাম্য এবং মানবিক মর্যাদা ভিত্তিক রাষ্ট্রব্যবস্থা গঠন করার রাজনীতি আমরা অব্যাহত রাখতে চাই। আমরা এই রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তনের জন্য আমরা নিজেরা সংগ্রাম করি, প্রস্তুত হই এবং প্রতিষ্ঠা করি এই আহ্বান আজকে আমি রাখছি।

মহিলা দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম তৃণমূল পর্যায় থেকে শক্তিশালী করার আহ্বানও জানান বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য।

মহিলা দলের সভানেত্রী আফরোজা আব্বাসের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদের পরিচালনায় আলোচনা সভায় মহিলা নেত্রী হেলেন জেরিন খান, নেওয়াজ হালিমা আরলি, নিলুফার চৌধুরী মনি, শাম্মী আখতার, নাজমুন নাহার বেবী, নুরজাহান মাহবুব, ইয়াসমীন আরা হক, শাহানা আক্তার শানুসহ কেন্দ্রীয় ও মহানগর নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।