বাংলাদেশের রাজনীতিতে ওসমান হাদির উত্থান যেভাবে
বাংলাদেশের রাজনীতিতে সম্প্রতি আলোচিত-সমালোচিত নামগুলোর একটি হয়ে উঠেছেন ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী শরীফ ওসমান হাদি। নিজের বক্তব্য, রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড এবং সামাজিক মাধ্যমে সক্রিয় উপস্থিতির কারণে তিনি সমর্থকদের কাছে জনপ্রিয় হয়েছেন। তবে প্রতিপক্ষের কাছে তিনি চক্ষুশূল হিসেবে পরিচিত।
রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর হাদি আওয়ামী লীগের ওপর নিষেধাজ্ঞা এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালের বিভিন্ন রায়ের বিষয়ে সোচ্চার ছিলেন। সামাজিক মাধ্যম এবং গণমাধ্যমে নিয়মিত সাক্ষাৎকার ও বিতর্কে অংশ নেওয়া তার পরিচয়ের অংশ। ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ি ভাঙচুর বা গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টি ও এনসিপি নেতাদের ওপর হামলার পর তার বক্তব্যে অশালীন শব্দ ব্যবহারের কারণে সমালোচনার মুখে পড়েন। তবে সমর্থকরা তাকে স্পষ্টভাষী হিসেবে প্রশংসা করেছেন।
আরও পড়ুন: পরিবারের সিদ্ধান্তে হাদিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেওয়ার প্রস্তুতি
জুলাই ২০২৪-এর অভ্যুত্থানের পর হাদি ইনকিলাব মঞ্চ নামে একটি রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক প্ল্যাটফর্ম গঠন করে রাজনীতিতে প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠেন। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দিয়ে তিনি নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেন। সম্প্রতি এই প্রচারণার সময় বন্দুকধারীর গুলিতে আহত হন। প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয় এবং পরে উন্নত আইসিইউ সাপোর্টের জন্য এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসকরা তার অবস্থাকে ‘অত্যন্ত শঙ্কটজনক’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
শিক্ষাজীবনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ থেকে পড়াশোনা শেষ করে হাদি একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতেন। বরিশালের ঝালকাঠি জেলার নলছিটি থেকে উঠে আসা এই যুবক সামাজিক-সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয় ছিলেন। জুলাই অভ্যুত্থানের সময় তার সক্রিয় ভূমিকা এবং পরে ইনকিলাব মঞ্চ গঠন তাকে রাজনৈতিক আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে নিয়ে আসে।
আরও পড়ুন: হাদির ওপর হামলা: ‘ভারতের স্বার্থরক্ষাকারী’ আখ্যায়িত করে শ্যুটারের প্রশংসা
ইনকিলাব মঞ্চের লক্ষ্য “সমস্ত আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে স্বাধীনতা–সার্বভৌমত্ব রক্ষা ও ইনসাফভিত্তিক রাষ্ট্র বিনির্মাণ”। এই প্ল্যাটফর্ম থেকে হাদির দেওয়া নানা বক্তব্য তাকে একটি সমর্থক গোষ্ঠী তৈরি করেছে। তবে এর কারণে প্রতিপক্ষের চক্ষুশূলও তিনি হয়েছেন। সামাজিক মাধ্যমে হত্যার হুমকি, বাড়িতে আগুন দেওয়ার হুমকি এবং পরিবারের নিরাপত্তার জন্য প্রাপ্ত বিভিন্ন হুমকির পরও হাদি নির্বাচনী কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন।
ঢাকা-৮ সংসদীয় আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন। লিফলেট বিতরণ, নির্বাচনী ইশতেহার প্রচারণা, অনুদান সংগ্রহ এবং সমর্থকদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগের ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের মাধ্যমে তিনি রাজনৈতিক সমন্বয়ও করেছেন।
রাজনীতিতে ইতিবাচক আলোচনার জন্ম দিয়েছেন হাদি, তবে বিতর্কও কম হয়নি। গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টি ও এনসিপি নেতাদের ওপর হামলার সময়ে তার ভাষা সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল। হামলার নিন্দা জানিয়ে তিনি গোপালগঞ্জের প্রতিটি উপজেলা ও আশপাশের জেলায় যুক্ত করার দাবি জানান।





