আজ মুশফিকুর রহিমের ৩৭তম শুভ জন্মদিন

Any Akter
ক্রীড়া ডেস্ক
প্রকাশিত: ১২:০৭ অপরাহ্ন, ০৯ মে ২০২৪ | আপডেট: ৬:১৬ অপরাহ্ন, ২৮ নভেম্বর ২০২৫
ছবিঃ সংগৃহীত
ছবিঃ সংগৃহীত

আজ মুশফিকুর রহিমের শুভ জন্মদিন।  সাজানো গোছানো টেকনিক, পরিপাটি ব্যাটিং শৈলি আর নিশ্ছিদ্র ডিফেন্স- ক্রিকেট ব্যাকরণের সব শট খেলার সহজাত সামর্থ্যের অধিকারী তিনি। বলছি ক্রিকেটার মুশফিকুর রহিমের কথা। সময়ের প্রবাহতায় যিনি আজ দেশের অন্যতম সেরা, সফল ও স্বার্থক উইলোবাজ। মিস্টার ডিপেন্ডেবল খ্যাত এই ক্রিকেটার ৩৬ বসন্ত পেরিয়ে ৩৭-এ পা দিলেন আজ।

ধৈর্য, অধ্যবসায় ও একাগ্রতার প্রতিমূর্তি মুশফিকুর রহিম। উইকেটরক্ষক এই ব্যাটার বর্তমানে দলের ব্যাটিংয়ের অন্যতম স্তম্ভ। নিজ গুণে ব্যাট হাতে বাইশগজে ভরসার অন্য নাম হয়ে উঠেছেন মুশফিক। দলকে এখনও বড় কোনো শিরোপা জেতাতে না পারওে দেশের ক্রিকেটে মুশফিকের অবদান কম নয়।

আরও পড়ুন: আজ সন্ধ্যা ৬টায় বাংলাদেশ-আয়ারল্যান্ড প্রথম টি-টোয়েন্টি

১৯৮৭ সালের ৯ মে বগুড়ায় জন্মগ্রহণ করেন মুশফিক। তিনি বগুড়া জিলা স্কুল এবং বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের (বিকেএসপি) ছাত্র ছিলেন। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক, স্নাতকোত্তর শেষ করেছেন। ইতিহাসের ছাত্র মুশফিকুর রহিম এখন একই বিদ্যাপীঠ থেকে এম.ফিল করছেন। তার ইচ্ছে ভবিষ্যতে পিএইচডি করবেন। মুশফিক গবেষণা করতে চান উপমহাদেশের ক্রিকেট ইতিহাস নিয়ে। ঘরোয়া ও বয়সভিত্তিক ক্রিকেটে নিজেকে প্রমাণ করে ২০০৫ সালে ইংল্যান্ড সফরের জাতীয় দলে প্রথম সুযোগ পান মুশফিক। ইংল্যান্ডের মাটিতে সেটি ছিল বাংলাদেশের প্রথম সফর।

লর্ডসে সিরিজের প্রথম টেস্টে তিনি খুব একটা সাফল্য পাননি। নিজের অভিষেক টেস্টের প্রথম ইনিংসে মাত্র ১৯ রানেই প্যাভিলিয়নে ফিরে যান। অবশ্য সে ইনিংসে বাংলাদেশ মাত্র ১০৮ রানে অলআউট হয়েছিল। দ্বিতীয় ইনিংসে তিনি করেন মাত্র ৩ রান। তবে শুরুটা ভালো না হলে ১৭ বছরের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে অনেক অর্জন নিজের ঝুলিতে পুরেছেন মুশফিক।

আরও পড়ুন: বিয়ের তারিখ ঘোষণা করলেন রোনালদো-জর্জিনা

সবমিলিয়ে এখন পর্যন্ত ৪৬১টি ম্যাচ খেলে ১৪,৯৬৮ রান করেছেন মুশফিক। টেস্টে ১০টি ও ওয়ানডেতে ৯টি সেঞ্চুরি রয়েছে মুশফিকের। এখনও টি-টোয়েন্টিতে শতকের দেখা পাননি এই উইকেটরক্ষক ব্যাটার। মুশফিকের ক্যারিয়ারে তিনটি ডাবল সেঞ্চুরি রয়েছে। তার নেতৃত্বে অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ডের মতো দলের বিপক্ষে টেস্ট জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। কলোম্বোর পি সারা ওভালে বাংলাদেশের শততম টেস্টে তার নেতৃত্বে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বাংলাদেশ ঐতিহাসিক জয় পেয়েছে।

২০০৬ সালে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে মুশফিক বাংলাদেশ দলকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। সেই দলে ছিলেন সাকিব আল হাসান ও তামিম ইকবালের মতো খেলোয়াড়রা। সেই টুর্নামেন্টের কোয়ার্টার ফাইনালে উঠে ছিল বাংলাদেশ। এরপর ২০০৯ সালের জিম্বাবুয়ে সফরে মুশফিক বাংলাদেশ দলের সহ-অধিনায়ক নির্বাচিত হয়েছিলেন।

২০১০ সালের ২১ জানুয়ারি ভারতের বিপক্ষে হোম সিরিজের প্রথম টেস্টে মুশফিক তার ক্যারিয়ারের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি করেন। ২০১১ সালে বাংলাদেশ জাতীয় দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পান মুশফিক। তার নেতৃত্বে বাংলাদেশ এশিয়া কাপে রানার্সআপ হয়েছিল। তিনি ২০১৪ সাল পর্যন্ত দলকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।

২০০৬ সালে অনুষ্ঠিত অনূর্ধ-১৯ বিশ্বকাপে মুশফিক বাংলাদেশ দলকে নেতৃত্ব দেন। অন্যান্যদের মধ্যে এই দলে ছিলেন ভবিষ্যতের আন্তর্জাতিক তারকা সাকিব আল হাসান এবং তামিম ইকবাল মুশফিকের নেতৃত্বে দলটি কোয়ার্টার ফাইনাল পর্যন্ত যেতে সমর্থ হয়।  ২০০৬ সালের জিম্বাবুয়ে সফরে মুশফিক আবার জাতীয় দলে সুযোগ পান। ২০০৭ সালে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে দ্বিতীয় টেস্টে মুশফিক দলে ডাক পান। ২০১৫ ক্রিকেট বিশ্বকাপে অনবদ্য ৭১ রানের ইনিংসের জন্য বাংলাদেশ বনাম আফগানিস্তান ম্যাচে তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন।

২০০৯ এর জিম্বাবুয়ে সফরে মুশফিক বাংলাদেশের সহ-অধিনায়ক নির্বাচিত হন। তৎকালীন অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা আঘাতপ্রাপ্ত হওয়ায় সাকিব তার স্থলাভিষিক্ত হন এবং সহ-অধিনায়ক সাকিবের দায়িত্ব পান মুশফিক। ২০১০ এর ২১ জানুয়ারী ভারতের বিরুদ্ধে হোম সিরিজের প্রথম টেস্টের পঞ্চম দিনে মুশফিক তার ক্যারিয়ারের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি করেন। মাত্র ১১২ বলে সেঞ্চুরি করে তিনি বাংলাদেশের দ্রুততম টেস্ট সেঞ্চুরির মালিক হন।

মুশফিকুর রহিম বাংলাদেশ জাতীয় দলের টেস্ট খেলায় অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করছেন। সেপ্টেম্বর ২০১১ থেকে রহিম জাতীয় দলের অধিনায়ক নির্বাচিত হন। বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে তিনিই প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি তথা সর্বোচ্চ রান সংগ্রহকারী হিসেবে কৃতিত্ব অর্জন করেন।

মুশফিকুর রহিম প্রথম বাংলাদেশি ব্যাটসম্যান হিসেবে টেস্ট ক্রিকেটে ডাবল সেঞ্চুরি করেন। ৩২১টি বল মোকাবিলা করে ২২ চার ও ১টি ছয়ের সাহায্যে ২০০ রান করেন। ২০১৩ শ্রীলঙ্কা সফরে তিনি এই রেকর্ডটি করেন। তিনি ৮ম উইকেট-রক্ষক যিনি টেস্টে ডাবল সেঞ্চুরি করেছেন এবং ৯ম ব্যাটসম্যান যিনি টেস্টে ৬ নম্বরে ব্যাটিংয়ে নেমে ডাবল সেঞ্চুরি করেছেন। ২০১৮ সালের নভেম্বরে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দ্বিশতক করার মাধ্যমে ইতিহাসের প্রথম উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান হিসেবে টেস্টে দুইটি দ্বিশতক করার রেকর্ড গড়েন মুশফিক। এছাড়া প্রথম বাংলাদেশি হিসেবেও দুইটি দ্বিশতকের রেকর্ড তার।

টেস্ট ফরম্যাটে এখন পর্যন্ত ৭০ ম্যাচ খেলে ৩৬.৭৭ গড়ে করেছেন ৪৪১৩ রান। তিন ডাবল সেঞ্চুরি ছাড়াও শতরান করে ব্যাট উঁচিয়েছেন আরো ৪ বার। এছাড়া তার ব্যাট থেকে পঞ্চাশোর্ধ্ব ইনিংস এসেছে মোট ২১টি। ওয়ানডে ফরম্যাটে খেলেছেন ২১৮টি ম্যাচ। একদিনের ক্রিকেটেও এখনও পর্যন্ত হাঁকিয়েছেন টেস্টের সমান ৭টি সেঞ্চুরি। তবে আরও দুইবার তিনি আউট হয়েছেন ৯৮ ও ৯৯ রানে। সবমিলিয়ে ৩৬.৩১ গড়ে করেছেন ৬১৭৪ রান, ফিফটি মোট ৩৮টি।

টি-টুয়েন্টি ফরম্যাটে সে তুলনায় খানিক নিষ্প্রভই বলা যায় মুশফিকের ব্যাটকে। এখন পর্যন্ত ৮৬ ম্যাচে ২০.০৩ গড়ে করেছেন ১২৮২ রান, নামের পাশে রয়েছে মাত্র ৫টি ফিফটি। সর্বোচ্চ রানের ইনিংসটি শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ২০১৮ সালের নিদাহাস ট্রফিতে করা ৭২ রানের ম্যাচজয়ী ইনিংস।

দেশের ক্রিকেটে গত এক যুগের সকল উত্থানপতনের সাক্ষী তিনি। শুধু তাই নয়, মুশফিকের ব্যাট ধরেই অনেক সাফল্য পেয়েছে বাংলাদেশ। সকলের প্রত্যাশা আরও বেশ কয়েকবছর জাতীয় দলকে সার্ভিস দিয়ে যাবেন এ নির্ভরতার প্রতীক। তার জন্মদিনে এবিনিউজের পক্ষ থেকে সেই শুভকামনাই থাকবে।