হত্যার মূলপরিকল্পনাকারি শাহেদ গ্রেফতার

বন্ধুর প্রেমিকার আপত্তিকর ছবি ও ভিডিওতেই খুন হলেন মামুন

Abid Rayhan Jaki
আনছার হোসেন, কক্সবাজার প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ৪:১৭ অপরাহ্ন, ১১ জুলাই ২০২৪ | আপডেট: ১১:৩৭ পূর্বাহ্ন, ০৬ অগাস্ট ২০২৫
ছবিঃ সংগৃহীত
ছবিঃ সংগৃহীত

বন্ধু শাহেদ হোসেন ও তার প্রেমিকার অন্তরঙ্গ মুহুর্তের ছবি ও ভিডিও ছিল আবদুল্লাহ আল মামুনের মোবাইলে। আর সেই ছবি ও ভিডিওই কাল হয়েছে মামুনের জন্য। বন্ধু শাহেদ ও তার ভাড়াটে খুনিদের হাতে প্রাণ দিতে হয়েছে টগবগে যুবক মামুনকে। ঘর থেকে ডেকে নিয়ে মোটর সাইকেলে ঈদগাঁও যাওয়ার পথে খুন করা হয় কক্সবাজার শহরের অনতিদূরের ইউনিয়ন ঝিলংজার খরুলিয়া এলাকার ইলেকট্রনিক ব্যবসায়ি মামুনকে।

মামুন হত্যার মূলপরিকল্পনাকারি মোহাম্মদ শাহেদ হোসেন র‌্যাবের হাতে ধরা পড়ার পর এভাবেই বন্ধুকে খুনের অকপট স্বীকারোক্তি দিয়েছে সে। কক্সবাজার শহরতলির লিংকরোড বাজার এলাকা থেকে শাহেদকে গ্রেফতার করা হয়। মোহাম্মদ শাহেদ হোসেন কক্সবাজারের ঈদগাঁও উপজেলার ঈদগাঁও মাছুয়াখালী সিকদার পাড়ার মোহাম্মদ মতিউর রহমানের ছেলে। সে কক্সবাজার শহরের ঝাউতলা গাড়ির মাঠ এলাকায় থাকতো। বন্ধুর হাতে নির্মম হত্যার শিকার আবদুল্লাহ আল মামুন ঝিলংজা ইউনিয়নের খরুলিয়া ঘাটপাড়ার মৃত নবী হোসেনের ছেলে। সে হত্যা পরিকল্পনাকারি শাহেদ হোসেনের ব্যবসায়িক পার্টনার। শহরতলির লিংকরোড বাজারে তাদের ইলেক্ট্রনিক ব্যবসা রয়েছে।

আরও পড়ুন: নাসিরনগরে আন্তর্জাতিক যুব দিবস পালিত

কক্সবাজারে দায়িত্বরত র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব-১৫) সিনিয়র সহকারি পরিচালক (ল’ এন্ড মিডিয়া) ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আবু সালাম চৌধুরী বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। বুধবার (১০ জুলাই) দুপুরে র‌্যাব-১৫ হেডকোয়ার্টারে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে ঘটনার বিস্তারিত তুলে ধরা হয়।

সুত্র মতে, গত ৬ জুলাই রাতে আবদুল্লাহ আল মামুনকে শ^াসরোধ করে হত্যা করা হয়। পরদিন সকাল ১০টার দিকে রামু উপজেলার রশিদনগর ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের খাদেমের পাড়া এলাকায় রেললাইনের পূর্বপাশে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় তার মরদেহ পাওয়া যায়।র‌্যাবের তথ্য মতে, গত ৬ জুলাই রাত ৮টার দিকে আব্দুল্লাহ-আল-মামুনকে হোয়াটসঅ্যাপে ফোন করে শাহেদ হোসেন। সে মামুনকে জানায়, কক্সবাজার শহরের ভিশন শোরুম থেকে মোটর সাইকেল নিয়ে বাহারছড়া বাজারে আসার জন্য, তারা দুইজন এক জায়গায় যাবে। শাহেদ ও মামুন মোটর সাইকেল নিয়ে রাত সাড়ে ৮টার দিকে বাহারছড়া বাজারে পৌঁছায়। পরে শাহেদ বন্ধু মামুনের মোটর সাইকেলের পিছনে উঠে এবং দুইজনেই মোটর সাইকেলে ঈদগাঁওর উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। তারা কালিরছড়া বাজারের একটু আগে পৌঁছালে মামুনকে মোটর সাইকেল থামাতে বলে শাহেদ। মামুন মোটর সাইকেল থামানোর সাথে সাথেই আগে থেকে ভাড়া করা সন্ত্রাসিরা তাকে টেনে-হিচড়ে নিয়ে যায়।

আরও পড়ুন: সাভারে পাচারকালে পিকআপসহ সাড়ে ৬ লাখ টাকার টিসিবি’র পণ্য জব্দ, আটক-১

 শাহেদ হোসেন র‌্যাবকে জানিয়েছে, মোটর সাইকেল থামানোর পরপরই শাহীন প্রকাশ ডাকাত লালুসহ কয়েকজন এসে মামুনকে টেনে হিছড়ে নিয়ে যায় এবং মামুনের মোবাইল ফোনটি তার কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়ে শাহেদকে বুঝিয়ে দেয়। ওই সময় শাহেদ ভাড়া করা সন্ত্রাসিদের এক লাখ টাকা দিয়ে মামুনের মোটর সাইকেলটি চালিয়ে কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে রওনা করে। কিছুদূর আসার পর তার কাছে থাকা মামুনের মোবাইল ফোনটি ইট দিয়ে ভেঙে চুরমার করে পাশের ডোবায় ফেলে দেয়। পরে মোটর সাইকেল চালিয়ে রামুর চাকমারকুল ইউনিয়নের কলঘর বাজার এলাকায় পৌঁছালে জ্বালানি না থাকায় মোটর সাইকেলটি বন্ধ হয়ে যায়। তখন মোটর সাইকেলটি কলঘর বাজারে একটি দোকানের সামনে রেখে সিএনজি

অটোরিক্সায় কক্সবাজার শহরের ঝাউতলা গাড়ির মাঠ এলাকায় তার বোনের বাসায় চলে আসে। ধৃত শাহেদের ভাষ্য মতে, ঝাউতলায় বোনের বাসায় এসে সে মোবাইলে ইমু মেসেঞ্জারের মাধ্যমে তার নিয়োজিত সন্ত্রাসীর মোবাইলের ইমুতে ফোন করে মামুনের বিষয়ে জানতে

চাইলে তারা জানায়, মামুনকে হত্যা করে হাত-পা বেঁধে রেললাইনের পাশে ফেলে রাখা হয়েছে। শাহেদ হোসেনকে গ্রেফতারের পর র‌্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে উঠে আসে বন্ধু আবদুল্লাহ আল মামুনকে হত্যার নির্মম ও রোমহর্ষক কাহিনী। শাহেদ র‌্যাবকে জানায়, ঈদগাঁও এলাকার

একটি মেয়ের সাথে তার প্রেমের সম্পর্ক ছিল। সম্পর্ক চলাকালে তারা দুইজনেই কিছু আপত্তিকর ছবি ও ভিডিও শাহেদের মোবাইলে ধারণ করে রাখে। মেয়েটির সাথে তার প্রেমের সম্পর্কের অবনতি হলে মেয়েটি বলে, তার কাছে (শাহেদ) থাকা তাদের আপত্তিকর ছবি ও ভিডিওগুলো তার সামনে এসে যেন ডিলেট করে দেয়। কিন্তু ঘটনার আগে শাহেদ তার মোবাইলে থাকা আপত্তিকর ছবি ও ভিডিওগুলো মেয়েটির অজান্তে তার বন্ধু ও ব্যবসায়িক পার্টনার মামুনের মোবাইলে সংরক্ষণ করার জন্য পাঠিয়ে দেয়। তারপর মেয়েটির সামনে গিয়ে শাহেদ তার মোবাইলে থাকা আপত্তিকর ছবি ও ভিডিওগুলো ডিলেট করে দেয়। পরে শাহেদ সেই আপত্তিকর ছবি ও ভিডিওগুলো ফেরত দেয়ার জন্য মামুনকে বললে সে তা ফিরিয়ে দিতে অস্বীকার

করে। ছবি ও ভিডিওগুলো মামুনের কাছ থেকে পাওয়ার জন্য এবং মোবাইল থেকে ডিলেট করার জন্য চেষ্টা করেও ব্যর্থ হলে শাহেদের মনে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। এই ক্ষোভ থেকেই শাহেদ বন্ধু মামুনকে মেরে ফেলার পরিকল্পনা করে। র‌্যাব জানিয়েছে, পরিকল্পনা অনুযায়ী সন্ত্রাসিদের সাথে চুক্তি ছিল এক লাখ টাকার

বিনিময়ে মামুনের কাছ থেকে মোবাইলটি উদ্ধার করে তাকে মেরে ফেলবে। পরিকল্পনা মতো ৬ জুলাই দিবাগত রাত সাড়ে ১১টার দিকে ঈদগাঁও উপজেলার কালিরছড়া বাজারের কিছু আগে গিয়ে বন্ধু আব্দুল্লাহ-আল-মামুনকে ভাড়াটে সন্ত্রাসিদের হাতে তুলে দেয়া ধৃত শাহেদ হোসেন।

সুত্র মতে, হত্যার শিকার আবদুল্লাহ আল মামুন, হত্যার পরিকল্পনাকারি শাহেদ হোসেন ও শাহেদের ভগ্নিপতি জসিম উদ্দিনের যৌথ শেয়ারে কক্সবাজার শহরতলির লিংকরোড বাজারে ভিশন ইলেক্ট্রনিক্সের সামগ্রী বিক্রির শো-রুম রয়েছে। ওই সুত্র ধরেই ব্যবসায়িক পার্টনার


শাহেদ হোসেনকে মঙ্গলবার (৯ জুলাই) বিকালে গ্রেফতার করে র‌্যাব-১৫। র‌্যাবের তথ্য মতে, ২৭ লাখ টাকা পুঁজির ওই শো-রুমে হত্যার শিকার আবদুল্লাহ আল মামুনের ৬ লাখ টাকা, শাহেদ হোসেনের ৬ লাখ টাকা ও শাহেদের ভগ্নিপতি জসিম উদ্দিনের ১৫ লাখ টাকা বিনিয়োগ ছিল।

কক্সবাজারে দায়িত্বরত র‌্যাব-১৫ অধিনায়ক লেফট্যানেন্ট কর্ণেল এসএম জাহেদ হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, ধৃত শাহেদ হোসেনের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। র‌্যাব দাবি করছে, এই হত্যাকান্ডটি ছিল একটি ক্ল্যু-লেস হত্যাকান্ড। র‌্যাব দুইদিনের মধ্যেই হত্যাকান্ডের ক্ল্যু উদ্ধার ও হত্যার মূলপরিকল্পনাকারিকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছে।