স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলোতে ঔষধের সল্পতা এবং জনবল সংকট

সরকারিভাবে স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিতে গত ৭ মাস আগেও বিনামূল্যে জ্বর, সর্দি, কাশি ও মাথাব্যথাসহ নানা রোগ প্রতিরোধে প্রায় ২৭ প্রকার ওষুধ সরবরাহ করা হতো ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার এসব স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্রগুলো থেকে। কিন্তু বর্তমানে জ্বর, পাতলা পায়খানা ও হাঁচি-কাশিসহ অনেক প্রকার ওষুধ দেয়া বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
সম্প্রতি মগটুলা, উচাখিলা, মাইজবাগ, আঠারোবাড়ী সোহাগী ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কেন্দ্রে যেয়ে ঔষধ না থাকার তথ্য মিলে। যে সময় বিভিন্ন বয়সী রোগীর ভিড় লেগে থাকার কথা, সে সময় এসব স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোতে একদম নীরবতা দেখা গিয়েছে। এছাড়াও অন্যান্য ইউনিয়নের স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোতে খুঁজ নিয়ে একই চিত্র দেখা গেছে।
আরও পড়ুন: নাসিরনগরে আন্তর্জাতিক যুব দিবস পালিত
মগটুলা ইউনিয়নের বৈরাটি গ্রামের হোসনে আরা নামের এক বাসিন্দা বেশ ক্ষুব্দ হয়েই খালি হাতে স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে ফিরতে দেখা গেছে। আলাপকালে বিরক্তি নিয়েই বলেন, সরহারে (সরকারে) আজাইরা একটা হাসপাতাল দিয়া রাখছে। কোনো ঔষধেই পাওয়া যায় না। আচানকটা হুদাই ( শুধুই) দিয়া থইছে (রাখছে)। বেশির ভাগ সময় তাহে (থাকে) বন্ধ। ঔষধ চাইলে কয় নাই।
উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোতে জন্মনিয়ন্ত্রণ, মা ও শিশু স্বাস্থ্য এবং বয়ঃসন্ধিকালীন সেবা দেওয়া হয়। এছাড়াও প্যারাসিটামল, হিষ্টাসিন, মেট্রোনিডাজল, কৃমিনাশক, ভিটামিন বি-কমপ্লেক্স, আয়রন, ক্যালসিয়াম, ফলিক এসিডসহ প্রায় ২৭ প্রকারের ঔষধ সরবরাহ থাকার কথা। তবে হাতেগোনা কয়েক ধরনের ঔষধ ছাড়া কোনো সরবরাহ পাওয়া যায়নি। আবার কয়েকটি স্বাস্থ্য কেন্দ্রে একেবারে ঔষধ না পাওয়ার তথ্যও মিলেছে।
আরও পড়ুন: সাভারে পাচারকালে পিকআপসহ সাড়ে ৬ লাখ টাকার টিসিবি’র পণ্য জব্দ, আটক-১
জানা গেছে, শুক্রবার ছাড়া সপ্তাহের ছয় দিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত স্বাস্থ্যসেবা দেয়ার কথা স্বাস্থ্যকর্মীদের, কিন্তু বাস্তবে তার উল্টো চিত্র। ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার অধিকাংশ স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলো বন্ধ হয়ে যায় নির্ধারিত সময়ের আগেই। ফলে সেবা নিতে আসা রোগীদের পড়তে হচ্ছে ভোগান্তিতে। ওষুধ না পেয়ে ফিরে যাচ্ছে সেবাপ্রত্যাশীরা। ফলে অতিরিক্ত অর্থ খরচে নিম্ন আয়ের মানুষগুলো উপজেলা কেন্দ্রিক ফার্মেসীগুলো থেকে সংগ্রহ করছে প্রয়োজনীয় ওষুধ।
আরও জানা গেছে, ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রগুলোতে শুধু ঔষধেই নয় ব্যাপক জনবল সংকট রয়েছে। পরিবার কল্যাণ পরিদর্শক (এফডব্লিউভি), উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার (স্যাকমো), ফার্মাসিস্ট, নিরাপত্তা প্রহরী, আয়াসহ ৫ পদে ৩৫ লোকবল থাকার কথা, আছে মাত্র ১৪ জন। বাকি ২১ টি পদ জনবল শূন্য।
উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা দপ্তরে খুঁজ নিয়ে জানা গেছে, আঠারোবাড়ি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে ৫ পদের মধ্যে ১ জন ফার্মাসিস্ট ব্যতীত বাকি ৪ টি পদেই শূন্য । মগটুলা, বড়হিত, উচাখিলা, সরিষা ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোর দশা একই । সোহাগী ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে ৫ জনের মধ্যে শূন্য পদ সংখ্যা ১ জন। এছাড়া তারুন্দিয়া ও মাইজবাগ ইউনিয়নে স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোতে শূন্য পদ রয়েছে ২ টি ।
উচাখিলা ইউনিয়নের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রটি বেশ পুরনো এবং ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় প্রায় ১৫ বছর আগেই পরিত্যক্ত ঘোষণা করে বন্ধ করে দেয় কতৃপক্ষ । বর্তমানে উচাখিলা ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ের একটি কক্ষে একজন ফার্মাসিস্ট দিয়ে কোনো রকমে চলছে সেবা কার্যক্রম।
এ ব্যাপারে উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা কামাল হোসেন বলেন, “ প্রায় ৭ মাস ধরে ঔষধ সরবরাহ বন্ধ। আমরা উর্ধতন কর্মকর্তার সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছি। সম্প্রতি জানতে পারলাম, সব ধরনের প্রক্রিয়া সম্পন্ন। খুব তাড়াতাড়িই ঔষধ সরবরাহ শুরু হবে। “
জনবল সংকট বিষয়ে তিনি বলেন, এ সংকট ব্যাপক আকার রুপ নিয়েছে। বিশেষ করে পরিবার কল্যাণ সহকারী ও পরিদর্শিকার পদে সল্প সংখ্যক লোকবল রয়েছে। ফলে স্বাভাবিক কর্যক্রমে কিছুটা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে । লোকবল নিয়োগের জন্য উর্ধতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে। আর উচাখিলা ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র সম্পর্কে তিনি বলেন, “ পুরনো এবং ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় ভবনটি বন্ধ। নতুন ভবন নির্মাণের দরপত্র হয়েছে বলে জানতে পারলাম। “