প্রতিবছর চাঁদা তুলে নির্মাণ করতে হয় বাঁশের সাঁকো
স্বাধীনতার ৫৪ বছরেও হয়নি সেতু, ভৈরব নদের দুপারের মানুষের ভরসা সাঁকো

মেহেরপুর জেলা সদরে বুড়িপোতা ইউনিয়নের রাধাকান্তপুর গ্রামের বুক চিরে বয়ে গেছে ভৈরব নদ। নদের ওপর ব্রিজ না থাকায় বাঁশের সাঁকোয় পারাপার হতে হয় বুড়িপোতা ইউনিয়নের অন্তত তিন গ্রামের মানুষদের।
সরেজমিনে দেখা গেছে, মেহেরপুর শহরসহ অনান্য এলাকায় আসা-যাওয়ার জন্য ভৈরব নদের দু’পাড়ের মানুষের এই বাঁশের সাঁকোই তাদের একমাত্র ভরসা। আশপাশে আট কিলোমিটারে নেই কোনো ব্রিজ। চলাচলের জন্য প্রতিবছর চাঁদা তুলে নির্মাণ করা হয় বাঁশের সাঁকো। বছর পার হতে না হতেই বাঁশ পচে নষ্ট হয়ে যায়। সাঁকো নির্মাণে খরচ হয় লক্ষাধিক টাকা। সাঁকো পার হয়ে শহরে যেতে সময় এবং অর্থ দুটোই ব্যয় হয়। ভারী যানবাহন চলাচল না করতে পারায় রোগী বহন নিয়ে স্বজনদের পড়তে হয় নানা বিড়ম্বনায়। অনেক দূরের রাস্তা ঘুরে আসতে হয় শহরে। এতে সময়মতো কৃষিপণ্য বাজারজাত করতে না পারায় বাজারমূল্য বঞ্চিত হন ওই পারের কৃষক। পরিবহন খরচও বাড়ে দ্বিগুণ।
আরও পড়ুন: শিল্প কারখানায় উৎপাদন ব্যাহত, জনজীবন বিপর্যস্ত, লোকসানের মুখে ব্যবসায়ীরা
এলাকাবাসীর অভিযোগ, নির্বাচনের সময় জনপ্রতিনিধিরা প্রতিবারই আশ্বাস দিলেও আজও আলোর মুখ দেখেনি ব্রিজ নির্মাণ কাজ। এ কারণে তাদের দুর্ভোগও যেন শেষ হচ্ছে না। তবুও আশায় বুক বেধে আছেন তারা। দ্রুত ব্রিজ নির্মাণ হলে ভুক্তভোগীদের দুঃখ ঘুচবে এমন প্রত্যাশায়।
স্থানীয় রিকশাচালক হারুন মিয়া জানান, প্রতিদিন বাঁশের সাঁকো দিয়ে যাত্রী নিয়ে পারাপার হতে হয়। মনে সব সময় ভয় কাজ করে কখন যেন ভেঙে পড়ি পানিতে। তবুও উপায় না থাকায় এদিক দিয়েই যাতায়াত করি।
আরও পড়ুন: জিম্মি করে মুক্তিপন আদয়ের অভিযোগে বিএনপি নেতাসহ আটক ৫
ওই এলাকার বৃদ্ধা সিরাজ উদ্দিন জানান, বাঁশের সাঁকো ভেঙে মাঝে মধ্যেই মানুষ আহত হন। কিছুদিন আগেও সাইকেল নিয়ে পার হতে গিয়ে নিফাজ উদ্দীন নামের এক বৃদ্ধ সাইকেলসহ পানিতে পড়ে যায়। পরে স্থানীয়রা ছুটে গিয়ে তাকে উদ্ধার করেছে। দীর্ঘ ৫৪ বছর ধরে আমরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হচ্ছি। দ্রুত এখানে একটি ব্রিজ নির্মাণ দেখে যেতে চান তিনি।
স্থানীয় মুদি দোকানদার জালাল উদ্দীন জানান, বর্ষার সময় নৌকায় পার হতে হয়। পানি কমে গেলে বাঁশের সাঁকোই ভরসা। জরুরি ভাবে চিকিৎসা নিতে শহরে গেলে এখানে অনেক সময় দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। আমাদের এই দুর্দশা দূর করতে সরকারি সহযোগিতা খুবই প্রয়োজন।
স্কুলশিক্ষক মজিবর রহমান বলেন, আমাদের অনেক সরকার প্রতিনিধি প্রতিশ্রুতি দিলেও তা এখনও বাস্তবায়ন হচ্ছে না। রাধাকান্তপুর ভৈরব নদে একটি ব্রিজ নির্মাণ হলে দু’পাড়ের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হবে।
বুড়িপোতা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুর রউফ মুকুল এ প্রতিবেদক’কে বলেন, বেশ কয়েকবার জমি জরিপের কাজ করেছে এলজিইডি। ঢাকা থেকে একটি টিম এসে জায়গা পরিদর্শন করেছে বহুবার। কিন্তু তারপর আর এগোইনি। আমাদের আর্থসামাজিক উন্নয়নে ব্রিজটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
সদর উপজেলা নির্বাহী প্রকৌশলী সাব্বির উল ইসলাম ‘বাংলাবাজার পত্রিকাকে জানান, আমরা কয়েকবার প্রস্তাব পাঠিয়েছিলাম, কিন্তু বরাদ্দ পাইনি। বন্দর গ্রামের অসাধু কিছু মানুষের আপত্তির কারণে কাজটি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
জেলার স্থানীয় সরকার বিভাগের (এলজিইডি) নির্বাহী প্রকৌশলী সাখাওয়াত হোসেন বলেন, “আমরা কয়েকবার প্রস্তাব পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু প্রকল্পের অনুমোদন হয়নি। জনগনের দাবির প্রতি গুরুত্ব দিয়ে আবারও প্রকল্প পাঠানো হয়েছে।”