অরক্ষিত টঙ্গী-নরসিংদী-ভৈরব রেলপথ, অবাধে মানুষের বিচরণ

টঙ্গী-নরসিংদী-ভৈরবের দীর্ঘ রেললাইনের উপর নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে অবাধে মানুষ চলাচলের কারণে দিনদিন অরক্ষিত হয়ে পড়ছে দীর্ঘ এই রেলপথটি। ট্রেন চলাচলে যেমন বিঘ্ন ঘটছে তেমনি লাশের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, টঙ্গী-নরসিংদী-ভৈরববাজার পর্যন্ত প্রায় ৭০ কিলোমিটার রেলপথ নরসিংদীর বুক চিরে চা, বন্দর ও পর্যটন নগরী সিলেট, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের দিকে চলে গেছে। নরসিংদী কৃষি, শিল্প ও শিক্ষা নগরী হিসেবে গড়ে ওঠায় প্রতিদিনই বিভিন্ন জেলা থেকে মানুষ এসে রেললাইনের পাশে হাটবাজার, শিল্প প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি স্থায়ী বসতি গড়ে তুলছেন। ফলে রেললাইনে উপর অবাধে মানুষের চলাচল লক্ষ্মণীয়। টঙ্গী-ভৈরব রেলপথের নরসিংদী জোনের ঘোড়াশাল, জিনারদী, নরসিংদী, আমিরগঞ্জ, খানাবাড়ি মেথিকান্দানও দৌলতকান্দি পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি অরক্ষিত। এসব স্থানে রেললাইনের দুইপাশে হাটবাজার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ বসতিবাড়ি গড়ে ওঠায় প্রতিনিয়ত দুইপারের মানুষ অবৈধভাবে অবাধে এইসব স্থান দিয়ে অবাধে রেললাইন পারাপার হচ্ছেন।
আরও পড়ুন: ঢাকা ইস্ট-ওয়েস্ট এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প বাতিলের দাবিতে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জে মানববন্ধন
রেল কর্তৃপক্ষ ও দায়িত্বরত নিরাপত্তা কর্মীরা ওইসব মানুষদেরকে নিকটবর্তী ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার করতে অনুরোধ করলেও তারা শুনতে নারাজ। এসব অসেচতন ও খামখেয়ালির কারণে প্রতিদিনই বাড়ছে দূর্ঘটনা। ফলে প্রতিদিন বাড়ছে লাশের সংখ্যা।
রেলওয়ে পুলিশ পরিসংখ্যানে জানা গেছে, এসব অসচেতন ও অসতর্কতার কারণে চলতি বছরের ৪ মাসেই রেলে কাটা পড়ে এ পর্যন্ত ১৯ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এতবড় রেলপথ অল্পসংখ্যক নিরাপত্তা কর্মী দিয়ে রেলপথ নিরাপদ ও ট্রেন চলাচল নির্বিঘ্ন রাখতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
আরও পড়ুন: ফের ৪৮ ঘন্টার আল্টিমেটাম রবি শিক্ষার্থীদের
নরসিংদী রেল পুলিশ ফাঁড়ি ও সহকারী স্টেশন মাস্টার সূত্রে জানা যায়, টঙ্গী থেকে ভৈরববাজার পর্যন্ত প্রায় প্রায় ৭০ কিলোমিটার দীর্ঘ রেলপথ। আগে ছিল সিঙ্গেল লাইন। ২০১৬ সালে ডাবল লাইন হওয়ার সুবাদে প্রতিদিন ঢাকা-ভৈরব-কিশোরগঞ্জ- ময়মনসিংহ- ব্রাহ্মনবাড়িয়া-সিলেট-নোয়াখালী-চট্টগ্রাম হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত ৪৮ টি মেইল, এক্সপ্রেস, কমিউটার, আন্তঃনগর মিলিয়ে ৪৮টি ট্রেন চলাচল করে। ফলে আগের তুলনায় অনেকাংশে ব্যস্ত হয়ে ওঠে এই দীর্ঘ রেলপথটি। আর এই ব্যস্ত রেললাইন পারাপারে রয়েছে মাত্র ৩৩ টি বৈধ রেলগেইট। আর বাকি ৬৫টি রয়েছে অবৈধ। ব্যস্ত এই রেলপথের টঙ্গী-ভৈরববাজারের নরসিংদী জোনে চলতি বছরের জানুয়ারী থেকে এপ্রিল পর্যন্ত এই ৪ মাসে ট্রেনে কাটা পড়ে ১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। নিহতদের মধ্যে অধিকাংশকেই অজ্ঞাত লাশ হিসেবে পুলিশ দাফন করা হয়েছে। এসব দূর্ঘটনার একমাত্র কারণ চলন্ত ট্রেন থেকে উঠা-নামা, ট্রেনের ছাদে চড়া, দুই বগির সংযোগস্থলে বসে যাতায়াত করা, ট্রেনের হাতলে ঝুলে থাকা, কানে এয়ারফোন লাগিয়ে রেললাইন ধরে চলা, ছবি তোলা, রেললাইনে বসে গল্পগুজব করা, অবৈধ রেলগেইট ব্যবহার করে পারাপারের কারণেই এত অপমৃত্যু হচ্ছে বলে দাবি করেন রেলওয়ে পুলিশ।
নরসিংদী রেলওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই এমবিএম জহিরুল ইসলাম বলেন, ২০১৬ সালে টঙ্গী-ভৈরববাজার রেলপথ ডাবল লাইনে উন্নতি হয়। এতে করে ট্রেনের সংখ্যা কয়েকগুণ বৃদ্ধি পায়। দিন-রাত ২৪ ঘন্টা অর্ধশতাধিক ট্রেন তাদের গন্তব্যের উদ্দেশ্যে ছুটে চলে। আর এসব ট্রেন নির্বিঘ্নে চলাচলের জন্য ১২ জন মধ্যে মাত্র ৮ জন পুলিশ এবং নিরাপত্তা বাহিনী ৫ জন সহ মোট ১৩ জন দীর্ঘ ৭০ কিলোমিটার রেলপথের দায়িত্ব পালন করছেন। এতকম জনবল দিয়ে আমরা সবসময় অতন্দ্র প্রহরীর নেয় রাস্ট্রের সম্পদ রক্ষার পাশাপাশি যাত্রী সাধারণের নিরাপত্তা দিয়ে আসছি। স্টেশনে অবস্থানরত সকল জনসাধারণকে সতর্ক হয়ে চলাচল করতে মাইকে ঘোষণা করা হচ্ছে। ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার এবং ডানে-বামে দেখে রেললাইন পারাপারের জন্য বলা হচ্ছে। তবে রেলওয়ে পুলিশের তৎপরতায় এ রেলপথে অস্বাভাবিক মৃত্যুর হার অনেকাংশে কমে এসেছে বলে দাবি করেন তিনি। রেললাইনের উপর চলাচল, আড্ডা দেওয়া, ছবি তোলা এবং অবৈধ রেলগেইট ব্যবহার করে পারাপার না হওয়ার জন্য তিনি সকলের প্রতি আহ্বান জানান।