কিশোরগঞ্জে বজ্রপাতে ৬ বছরে ৬৪ জনের মৃত্যু

Sadek Ali
মো. ফরিদ রায়হান, কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ৩:২৬ অপরাহ্ন, ০৩ মে ২০২৫ | আপডেট: ৮:১৬ অপরাহ্ন, ১৩ অগাস্ট ২০২৫
ছবিঃ সংগৃহীত
ছবিঃ সংগৃহীত

কিশোরগঞ্জে গেল ৬ বছরে বজ্রপাতে মারা গেছে ৬৪ জন মানুষ। এসময় আরো অর্ধশত মানুষসহ আহত হয়েছে অনেক গবাদি পশু। নিহতদের মধ্যে রয়েছে নারী, পুরুষ ও শিশু। তবে, বেসরকারি হিসাবে মৃত ও আহতের সংখ্যা আরো বেশি।

প্রতি বছর এই সময় গীষ্ম মৌসুমে দেশের নদ-নদী, খাল-বিল, হাওর-বাওর, পুকুরে মাছ ধরতে গিয়ে, কৃষি জমিতে চাষবাদ, হাওরে গরু চড়ানো, নদী বা হাওরে নৌকা চালানো ও বাড়ির আঙ্গিনায় গৃহস্থালি কাজ করার সময় বজ্রপাতে এসব মানুষ মারা গেছে। গত বছর কিশোরগঞ্জে বজ্রপাতে মৃত্যু ও আহতের সংখ্যা কমলেও চলতি বছর এপ্রিল মাসে একদিনে ৫জনসহ ৭ নারী পুরুষ নিহত হয়েছে।

আরও পড়ুন: শিল্প কারখানায় উৎপাদন ব্যাহত, জনজীবন বিপর্যস্ত, লোকসানের মুখে ব্যবসায়ীরা

বাতাসে সিসার পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়া, জনজীবনে ধাতব পদার্থের ব্যবহার বৃদ্ধি, মুঠোফোন নেটওয়ার্কের রেডিয়েশন, লোকালয়ে উঁচু গাছের সংখ্যা কমে যাওয়া, জলবায়ু পরিবর্তন ও ভূমন্ডলের তাপমাত্রা বাড়াসহ নানা কারণে বজ্রপাতে মৃত্যু সংখ্যা বাড়ছে।

হাওরাঞ্চলে সাধারণত এপ্রিল থেকে জুন মাস পর্যন্ত বজ্রপাতের আঘাত তুলনামূলক বেশি হয়। এ সময় সর্তকতা অবলম্বন করে নিরাপদে থাকলে এই মৃত্যু অনেকাংশে এড়ানো সম্ভব বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

আরও পড়ুন: জিম্মি করে মুক্তিপন আদয়ের অভিযোগে বিএনপি নেতাসহ আটক ৫

কিশোরগঞ্জ ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যালয় সূত্র জানায়, কিশোরগঞ্জের বিভিন্ন উপজেলায় ২০২০ সালে জেলায় বজ্রপাতে মারা গেছেন ১১ জন, ২০২১ সালে ১৬ জন, ২০২২ সালে ১০ জন, ২০২৩ সালে ১৫ জন, ২০২৪ সালে ৬ জন। চলতি বছর (৩০ এপ্রিল পর্যন্ত) ৪ জন (স্থানীয় ভাষ্য ৭ জন) মারা গেছে।

তবে, স্থানীয়রা জানান এই মৃত্যুর সংখ্যা আরো বেশি হবে। চলতি বছর ১ মে পর্যন্ত অষ্টগ্রামে ২ জন, ইটনায় ১ জন, কটিয়াদিতে ১ জন, পাকুন্দিয়া ১ জন, মিঠামইন ১ জন ও বাজিতপুরে ১ জনসহ ৭ জনের মৃত্যু হলেও, সরকারি তালিকায় রয়েছে ৪ জনের নাম।

হাওরাঞ্চলের সাধারণ মানুষ জানায়, কৃষক ও জেলেদের নিরাপত্তা কয়েক কিলোমিটার দূরে দুরে বজ্রনিরোধক দণ্ডসহ ‘কৃষক ও জেলে শেল্টার সেন্টার’ নির্মিত হলে তাদের আতংক কমবে, হ্রাস পাবে বজ্রপাতে অপমৃত্যুর সংখ্যা।

সরকার বজ্রপাতে মৃত্যুবরণ করা ব্যক্তির পরিবারকে ২৫ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়। কিন্তু, সরকারি সাহায্যের বিষয়টি প্রচারণার অভাবে, অনেক ভোক্তভোগীরা জানেই না, যে কারণে এই সহায়তা বঞ্চিত হচ্ছেন অনেক ভোক্তভোগী পরিবার।

আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার সূত্রে জানায়, বজ্রপাত শুরুর ৪০-৪৫ মিনিট পূর্বে অবগত হওয়া যায়। কিন্তু, এই সময়ের মধ্যে মানুষকে অবহিত করা খুবই কষ্টকর। আবার, সর্তক বার্তা পেলেও নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়া সম্ভব হয় না। টান্ডার এ্যারেস্টার (বজ্রনিরোধক যন্ত্র) স্থাপনের মাধ্যমে নিহতের সংখ্যা কমিয়ে আনা সম্ভব। কিশোরগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে ইতিমধ্যে ২৫টি বজ্রনিরোধক দণ্ড স্থাপন করা হয়েছে।

নিকলী প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. জাহিদুল ইসলাম মাসুম মুঠোফোনে বলেন, হাওরাঞ্চলে বজ্রনিরোধক দণ্ডের অভাব ও অসচেতনার জন্য বজ্রপাতে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। আমার জানামতে হাওরে নিহতদের প্রায় ৭০ভাগ কৃষক ও জেলে। পর্যাপ্ত বজ্রনিরোধক দণ্ডসহ ‘শেল্টার সেন্টার স্থাপন ও জনসচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে মৃত্যুর সংখ্যা কমিয়ে আনা যেতে পারে।

এই বিষয়ে অষ্টগ্রাম সদর ইউপি চেয়ারম্যান সৈয়দ ফাইয়াজ হাসান বাবু বলেন, ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে অষ্টগ্রাম হাওরে একটি দ্বিতল ‘কৃষক ও জেলে শেল্টার সেন্টার’ নির্মাণ করেছি। এতে, বিস্তৃর্ণ হাওরের কৃষক ও জেলেরা উপকৃত হচ্ছে। প্রতি এক-দেড় বর্গ কিলোমিটার দূরত্বে আরো বজ্রনিরোধদণ্ডসহ শেল্টার সেন্টার স্থাপন করতে সরকার এগিয়ে আসতে হবে।

মিঠামইন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. ওবায়দুল ইসলাম খান অপু বলেন, বজ্রপাতকালীন বিস্তৃর্ণ হাওরে কোন আশ্রয়ের ব্যবস্থা নেই। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কৃষক-জেলে কাজ করে। তাদের নিরাপত্তায় নির্দিষ্ট দুরত্বে ‘কৃষক ও জেলে শেল্টার সেন্টার’ ও বজ্রনিরোধক দণ্ড স্থাপন জরুরি।

কিশোরগঞ্জ জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. বদরুদ্দোজা বলেন, মার্চ- এপ্রিল মাসে ঘন ঘন বজ্রপাত হয়, এই সময় নিরাপদ আশ্রয়ে থাকার মাধ্যমে প্রাণহানি রোধে সবাইকে সচেতন হতে হবে। আপাদত বজ্রনিরোধক দণ্ড স্থাপনের কোন প্রকল্প নেই। তবে, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে ২৫ হাজার টাকা সহায়তা করা হচ্ছে।