সেখানে জীবন চলে নদীর খেয়ালে

নাগেশ্বরী চরাঞ্চলের অবহেলিত শিশুরা

Sadek Ali
এম সাইফুর রহমান, নাগেশ্বরী প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ৫:০৬ অপরাহ্ন, ৩১ মে ২০২৫ | আপডেট: ৮:৪১ অপরাহ্ন, ১৩ অক্টোবর ২০২৫
ছবিঃ সংগৃহীত
ছবিঃ সংগৃহীত

কুড়িগ্রাম জেলায় ১৬ নদ-নদী বেষ্টিত চরাঞ্চলগুলো যেন একেকটি 'প্রান্তিকতার দ্বীপ'। সেখানে জীবন চলে নদীর খেয়ালে, মৌসুমী বন্যা আর ভাঙনের আশঙ্কায়। কুড়িগ্রাম জেলার নাগেশ্বরী উপজেলার এমনই কয়েকটি চরে সম্প্রতি ঘুরে দেখা গেল সবচেয়ে অবহেলিত ও ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে এখানকার শিশুরা। তাদের জীবনজুড়ে রয়েছে দারিদ্র্য,স্বাস্থ্যঝুঁকি, শিক্ষার অভাব, অনিরাপদ আশ্রয় এবং মানসিক অবসাদ।

চরাঞ্চলের ছেলেমেয়েরা যেন জন্ম থেকেই নানান বৈষম্যের শিকার। অথচ, তাদেরও স্বপ্ন আছে। আছে ভালোবাসা পাওয়ার, শেখার এবং সুস্থভাবে বেড়ে ওঠার আকাঙ্খা। চরের শিশুরা সাধারণত কোনো নিয়মিত স্বাস্থ্যসেবার আওতায় আসে না। ঠিকমতো টিকা পায় না, অপুষ্টি ও পানিবাহিত রোগে ভোগে বছরের পর বছর। চর এলাকায় পাকা রাস্তা নেই, হাসপাতালে পৌঁছাতে হয় নদী পেরিয়ে। মূলত, অনেক সময়েই সময়মতো চিকিৎসা পাওয়া সম্ভব হয় না। অপুষ্টি, ডায়রিয়া, চর্মরোগ এসব যেন এখানকার শিশুদের নিত্যসঙ্গী। চরাঞ্চলের শিক্ষাব্যবস্থা খুবই নাজুক। অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নেই, আবার স্কুলে পৌঁছাতে হয় দুর্গম পথ পেরিয়ে।

আরও পড়ুন: কমলনগরে বৃদ্ধার লালসার শিকার ৫ বছরের শিশু, এলাকাজুড়ে তোলপাড়

বিশেষ করে মেয়ে শিশুদের ক্ষেত্রে বাল্যবিবাহ এবং গৃহকর্মে যুক্ত হওয়া খুবই সাধারণ ঘটনা। অপ্রতুল শিক্ষা সুযোগের কারণে এই শিশুরা ভবিষ্যতের সম্ভাবনা হারিয়ে ফেলছে আগেই। প্রায়শই নদীভাঙনে বসতভিটা হারানো চরবাসী পরিবারগুলো টিকে থাকে জরাজীর্ণ ঘরে, যা শিশুর স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার জন্য মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ। কোন কোন চরগুলোতে এখনো বিদ্যুৎ পৌঁছেনি, নিরাপদ পানির উৎস কম, নেই স্যানিটেশন ব্যবস্থা। শিশুরা খালি পায়ে হাঁটে, গরমে জলন্ত বালুতে, বর্ষায় কাঁদা ও পানিতে সিক্ত হয়ে বেড়ে ওঠে।

চরের শিশুরা বঞ্চিত হয় খেলাধুলা, বই পড়া, সৃজনশীলতা বিকাশের সুযোগ থেকে। তাদের শৈশব হয়ে ওঠে প্রাপ্তবয়স্কদের মতো চাপপূর্ণ ও বিষন্ন। খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক কার্যক্রম এবং কিশোর সংগঠন গড়ে না উঠলে এই শিশুরা ভবিষ্যতে আত্মবিশ্বাস ও সক্ষমতা হারিয়ে ফেলবে। চরের শিশুরা আমাদের শহরের শিশুর মতোই স্বপ্ন দেখে। তারাও চায় বই হাতে স্কুলে যেতে, খেলতে, হাসতে, ভালোবাসতে। রাষ্ট্র ও সমাজের যৌথ দায়িত্ব হলো তাদের এই অধিকার নিশ্চিত করা। প্রয়োজন শুধু আন্তরিকতা ও কার্যকর উদ্যোগ। তাহলেই চরাঞ্চলের এই শিশুরাও একদিন দেশের সম্পদ হয়ে উঠবে।

আরও পড়ুন: গোপালগঞ্জে ‘ছেলের হাতে’ মা খুন