উপবৃত্তি পেলেও শিক্ষার্থীদের দিতে হচ্ছে বেতন
নাজিরপুরে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে দুর্নীতি-অনিয়মের অভিযোগ

স্বেচ্ছাচারীতা, দুর্ব্যবহারসহ নানা দূর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে পিরোজপুরের নাজিরপুর সদর বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক প্রশান্ত কুমার হালদারের বিরুদ্ধে।
ওই বিদ্যালয়ের ১২ জন শিক্ষার্থী অভিভাবক গত (১৬ জুলাই) উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ করে অভিযোগপত্র দিয়েছেন।
আরও পড়ুন: নারায়ণগঞ্জ সোনারগাঁয়ে ২০০ বছরের পুরোনো কাইকারটেক হাট
অভিযোগে দেখা যায়, প্রধান শিক্ষক অত্র বিদ্যালয়ে যোগদানের পর থেকে শিক্ষার্থীদের নিকট থেকে ভর্তি ফি, সেশন চার্জ অন্যান্য সকল প্রতিষ্ঠানের থেকে অতিরিক্ত টাকা আদায় করেন। তারই ধারাবাহিকতায় অত্র বিদ্যালয়ের উপবৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের নিকট থেকে অর্ধ বার্ষিক পরীক্ষার ফি বাবদ ৬ষ্ঠ থেকে ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত ৪ শত টাকা করে আদায় করেন এবং প্রতি শিক্ষার্থীর নিকট থেকে মাসিক বেতন ১ শত পঞ্চাশ টাকা( ১৫০) অর্থাৎ ৫ মাসের বেতন মোট ৭ শত পঞ্চাশ টাকা ( ৭৫০) জমা রশীদ ব্যতীত আদায় করেন। (যাহা সমন্বিত উপবৃত্তি কর্মসূচি বহির্ভূত) উপবৃত্তি নীতিমালার ১০ নং ক্রমিকে বর্ণিত আছে কোন অর্থ কোন প্রকার আদায় করা যাবে না। প্রতিষ্ঠান প্রধান বিভিন্ন কৌশলে শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে বিভিন্ন পরীক্ষার সময় উপবৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীসহ সব শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বেতন ও পরীক্ষার ফি আদায় করেন। এছাড়া শিক্ষার্থী অভিভাবকরা ২০২৪ সালের আয়-ব্যয় হিসাব সম্পর্কে জানতে চাইলে কত টাকা আয় এবং কত টাকা কি কি খাতে ব্যয় হয়েছেন উত্তরে তাদের সাথে খারাপ ব্যবহার করেন বলে অভিযোগ পাওয়া যায়।
তাছাড়া অত্র বিদ্যালয়ের গণিত ও বিজ্ঞান শিক্ষক নিয়োগ থাকলেও তারা ৬ষ্ঠ ও ৭ম শ্রেণির গণিত ও বিজ্ঞান বিষয়ে পাঠদান করান খন্ডকালীন শিক্ষক নিত্যানন্দ মন্ডলকে দিয়ে। তিনি একজন মানবিক বিভাগের ছাত্র। বিজ্ঞান ও গণিত শিক্ষকেরা লাইব্রেরীতে বসে থাকেন এবং মানবিক বিভাগে পড়ালেখা করা একজন ছাত্রকে দিয়ে গণিত, বিজ্ঞান ও ইংরেজি বিষয়ের পাঠদান করাচ্ছেন। তার মানে ছাত্রদের ভালো কিছু না শিখিয়ে তিনি প্রাইভেট পড়ানোর জন্য এই ফন্দি তৈরী করে দিয়েছেন প্রধান শিক্ষক। বিদ্যালয়ের খন্ডকালিন শিক্ষক নিত্যানন্দ মন্ডল গত প্রায় ১৪ বছর ধরে ওই বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করে আসছেন। বিদ্যালয়ের নিয়মিত শিক্ষক না হয়েও এমন কি তার শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও তিনি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে উৎকোচ দিয়ে ৬ষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির গনিত সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ন বিষয় ক্লাস নিয়ে থাকেন। তার এমন ক্লাস নেয়া নিয়ে এ পর্যন্ত বিভিন্ন শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা বিভিন্ন সময় অভিযোগ দিলেও প্রধান শিক্ষককে ম্যানেজ করে তিনি বহাল তবিয়তে সেখানে পাঠদান করে আসছেন। বিদ্যালয়ে শিক্ষকদের পদ পুরোপুরি থাকলেও প্রধান শিক্ষক আর্থিক সহযোগীতা নিয়ে চাকুরীরত শিক্ষকদের পরিবর্তে তাকে দিয়ে পাঠদান করাচ্ছেন। এমন কি বিভিন্ন শিক্ষকরা তাকে দিয়ে বিভিন্ন পরীক্ষার খাতা মূল্যায়ন করান।
আরও পড়ুন: পটুয়াখালীতে সেনা-পুলিশের যৌথ অভিযানে গাঁজা ও ইয়ার গানসহ যুবক আটক
এছাড়া আরো অভিযোগ করে বলেন বিদ্যালয়ের ইংরেজি শিক্ষক দেবব্রত ৬ষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ইউনিক আইডির কাজের জন্য প্রতি শিক্ষার্থীদের নিকট থেকে ৮০ টাকা করে নেন। উক্ত ইউনিক আইডি বাবদ সরকার কর্তৃক প্রদান করা হলেও তিনি শিক্ষার্থীদের নিকট থেকে টাকা আদায় করেন। বিদ্যালয়ের সকল শিক্ষকের ঠিকমত পাঠদান না করার কারণে সকল শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট শিক্ষকের দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হচ্চে এবং বাড়তি টাকা গুণতে হচ্ছে অভিভাবকদের।
খন্ডকালীন শিক্ষক নিত্যানন্দ তিনি প্রতি শিক্ষার্থীকে তার কাছে প্রাইভেট পড়াতে চাপ প্রয়োগ করেন এবং যারা তার কাছে প্রাইভেট পড়ে না তাদেরকে বার্ষীক পরীক্ষায় ফেল করিয়ে দেয় বলেও অভিযোগ করেন, এমনকি তার কাছে যারা প্রাইভেট পড়ে তাদেরকে বার্ষিক পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস করে পড়ান এবং তারা ভালো রেজাল্ট করেন।
এদিকে প্রশান্ত কুমার হালদারের পকেটে বিদ্যালয়ের দোকান ভাড়া বাবদ প্রতিমাসে যায় প্রায় লাখ টাকা। উপজেলা সদরে নাজিরপুর সদর হাসপাতালের সম্মুখে অবস্থিত এ বিদ্যালয়। এ বিদ্যালয়ে নিজস্ব ২৬ টি দোকান (ভিটি) রয়েছে এর মধ্যে ৫ টি রয়েছে ডায়াগনেষ্টিক সেন্টার (ল্যাব),২১ টি দোকান যাহার মাসিক ভাড়া প্রায় ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা। এছাড়া প্রতিটি দোকানে রয়েছে লক্ষ লক্ষ টাকা জামানত (অগ্রীম) হিসাবে তার নেই কোন হদিস।
এ নিয়ে প্রধান শিক্ষক প্রশান্ত কুমারের নিকট সাংবাদিকরা জানতে চাইলে তিনি বাহানা করে দেখাচ্ছেন না কোন হিসাব,বলেন মাসে দোকান ভাড়া পাই ৫০ হাজার টাকা তার ৪৫ হাজার টাকা শিক্ষকদের মাঝে বন্টন করে দেই। আবার কোন কোন মাসে দোকান ভাড়া বাকী ও থাকে। জামানতের টাকার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কোন সদোত্তর না দিয়ে বলেন আপনাদের কাছে এত হিসাব দিতে পারব না বলে সাংবাদিকদের অনৈতিক প্রস্তাব করেন।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো: জহিরুল আলম বলেন, দোকান ভাড়ার টাকা ব্যক্তিগত ভাবে ভোগ করার কোন সুযোগ নাই, এটা আইন বর্হিভূত। বিদ্যালয়ের দোকান ভাড়ার টাকা উন্নয় খাদে কাজে লাগাবে। আমার কাছে একটি অভিযোগ এসেছে এটি তদন্ত চলমান রয়েছে।
এদিকে জানুয়ারী মাসে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তির জন্য নিয়েছেন ১৭ শত থেকে ১৮ শত টাকা। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নির্ধারণ করে দিয়েছেন ৮৫০ টাকা। অতিরিক্ত ফি দিয়ে যারা ভর্তি হয়েছে তাদের বাকী টাকা ফেরত দেওয়ারও নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু কাউকে তোয়াক্কা না করে সেই অতিরিক্ত কোন টাকা তিনি কাউকেই ফেরত দেননি। কিনেছেন ডায়গনেষ্টিক সেন্টারও মর্ডান ডায়াগনেষ্টিক সেন্টার এর অংশিদার বানিয়েছেন নিজের স্ত্রীকে। এদিকে তার স্ত্রী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক।
আ’লীগের আমলে সাবেক মন্ত্রী এ্যাড.শ.ম রেজাউল করিম এমপির মেজ ভাই এস এম নজরুল ইসলাম বাবুলের হাত ধরে ২৫ লক্ষ টাকা ঘুষ দিয়ে হয়েছেন প্রধান শিক্ষক। স্থানীয়ভাবে জনরব রয়েছে ঘুষের টাকা উত্তোলনের জন্য দোকান ভাড়ার টাকা পকেটে নিচ্ছেন প্রধান শিক্ষক।
এদিকে দোকান ও ল্যাবের মালিকরা বলছেন নিয়মিত ভাড়া মাস শেষ হওয়ার আগেই পরিশোধ করি এবং অগ্রীম হিসাবে আমাদের কাছ থেকে ল্যাব প্রতি ৪ থেকে ৫ লাখ এবং দোকান থেকে ২ থেকে ৪ লাখ টাকা পর্যন্ত নিয়েছেন স্কুল কর্তৃপক্ষ।
এবিষয়ে বিদ্যালয়ের এডহক কমিটির সভাপতি মো: আবু হাসান খান বলেন, আমি এডহক কমিটির নতুন সভাপতি, প্রধান শিক্ষক আমাকে এই দীর্ঘ ৬ মাসের মধ্যে এখনো কোন হিসাব বুঝিয়ে দিতে পারে নাই, দোকান ভাড়া এবং দোকানেরঅগ্রীম জামানত এর টাকা কোথায়। আমি দূর্নীতিবাজকে প্রশ্রয় দেই না, আমি নিজে ও দুর্নীতি করি না কাউকে করতেও দিব না, আমি এর তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহন করাব।
এবিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাজিয়া শাহনাজ তমা বলেন, অভিযোগ পেয়েছি তদন্তের জন্য মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের কাছে দেওয়া হয়েছে তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।