চুয়াডাঙ্গায় এক বছরে ৮ হাজার বিয়ে, বিচ্ছেদ সাড়ে ৫ হাজার

Sadek Ali
সনজিত কর্মকার, চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ১১:০৫ পূর্বাহ্ন, ৩১ জুলাই ২০২৫ | আপডেট: ৫:০৫ পূর্বাহ্ন, ৩১ জুলাই ২০২৫
ছবিঃ সংগৃহীত
ছবিঃ সংগৃহীত

চুয়াডাঙ্গা জেলায় আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে বিবাহবিচ্ছেদের হার। পারিবারিক অস্থিরতা, ব্যক্তিগত স্বার্থপরতা, পরকীয়া, বাল্যবিবাহ, বনিবনা না হওয়া ও মতবিরোধসহ নানা কারণে ভেঙে পড়ছে দাম্পত্য সম্পর্ক।

চুয়াডাঙ্গা জেলা রেজিস্ট্রার কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে জেলায় মোট বিবাহ হয়েছে ৮ হাজার ১০৬টি, আর বিবাহবিচ্ছেদ ঘটেছে ৫ হাজার ৫২১টি।

আরও পড়ুন: মামলায় নেই অগ্রগতি, সাড়ে তিন বছরেও চার্জশীট দেয়নি দুদক

জেলার চারটি উপজেলার বিচ্ছিন্ন পরিসংখ্যানে দেখা যায়- চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলায় বিবাহ হয়েছে ২ হাজার ২২৬টি, বিচ্ছেদ ২ হাজার ১৭৭টি। আলমডাঙ্গায় বিবাহ ২ হাজার ৪৩১টি, বিচ্ছেদ ১ হাজার ২৩৭টি। দামুড়হুদায় বিবাহ ১ হাজার ৮২৮টি, বিচ্ছেদ ৯২১টি। জীবননগরে বিবাহ ১ হাজার ৬২১টি, বিচ্ছেদ ১ হাজার ৯৬টি।

সব মিলিয়ে গত বছর জেলার চার উপজেলায় মোট বিবাহ হয়েছে ৮ হাজার ১০৬টি, আর তালাকের ঘটনা ঘটেছে ৫ হাজার ৫২১টি, যা মোট বিবাহের প্রায় ৬৮ শতাংশ।

আরও পড়ুন: ৭২ ঘন্টা আল্টিমেটাম শেষে ফের মহাসড়ক অবরোধ শিক্ষার্থীদের

চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা মুসলিম বিবাহ ও তালাক রেজিস্ট্রার কাজী সামসুল হক জানান, বিবাহবিচ্ছেদের পেছনে প্রধান কারণ হচ্ছে পরকীয়া। এছাড়া সংসারে বনিবনা না হওয়া, স্বামীর প্রবাসজীবন, পারস্পরিক অবিশ্বাসসহ নানা কারণ রয়েছে।

জেলা রেজিস্ট্রার কার্যালয় সূত্রে আরও জানা যায়, বেশিরভাগ তালাকের উদ্যোগ নারীদের দিক থেকেই আসছে। বিশেষ করে ১৮ থেকে ৩০ বছর বয়সী নারীদের মধ্যে তালাকের হার বেশি।

দাম্পত্য জীবনের এ ভাঙনের কারণে বাড়ছে সামাজিক ও মানসিক সংকট। সন্তানরা বেড়ে উঠছে অবহেলা ও অনিশ্চয়তার মাঝে।

জীবননগরের কেডিকে ইউনিয়নের দেহাটি গ্রামের আলেয়া খাতুন জানান, স্বামী মাদকাসক্ত, রোজগার করতেন না, আর কথায় কথায় মারধর করতেন। বাধ্য হয়ে তালাক দিতে হয়েছে।

চুয়াডাঙ্গা সদরের শৈলমারী গ্রামের আরিফুল ইসলাম বলেন, স্ত্রী ফেসবুকে অতিরিক্ত সময় দিত। একদিন মোবাইল কেড়ে নিলে সে রাগ করে চলে যায়। এক মাস পর ডিভোর্স লেটার পাঠায়।

জীবননগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আল-আমিন বলেন, বাল্যবিবাহ, পরকীয়া, পারিবারিক অজ্ঞতা, হিংসা ও অশিক্ষার কারণে এসব সমস্যা বাড়ছে। কাজী, ইমাম, ঘটকদের নিয়ে সচেতনতামূলক সভা-সেমিনার করছি। শিগগিরই উপজেলায় তালাকের কারণ চিহ্নিত করতে পদক্ষেপ নেব।

নারীর অধিকার নিয়ে কাজ করা গবেষক ও অধ্যক্ষ সাজেদা পারভীন বলেন, সরকার নারীর উন্নয়নে যে পদক্ষেপ নিচ্ছে, সেগুলো বাস্তবায়নে গুরুত্ব দিতে হবে। তাহলে নারীর ক্ষমতায়নের পাশাপাশি তালাকের হারও কমে আসবে।

উপজেলা আলিম মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুল খালেক বলেন, ইসলামি বিধিনিষেধ না মানা, ধর্মীয় জ্ঞানের অভাব এবং পরকীয়াই বিবাহবিচ্ছেদের প্রধান কারণ। এটা এখন মহামারির মতো ছড়িয়ে পড়েছে।