নরসিংদীতে লাগামহীনভাবে বাড়ছে নিত্যপণ্যের দাম, দিশেহারা নিম্ন আয়ের মানুষ

Sanchoy Biswas
আশিকুর রহমান, নরসিংদী
প্রকাশিত: ৬:১৩ অপরাহ্ন, ১৭ অগাস্ট ২০২৫ | আপডেট: ৬:১৩ অপরাহ্ন, ১৭ অগাস্ট ২০২৫
ছবিঃ সংগৃহীত
ছবিঃ সংগৃহীত

নরসিংদীর বাজারগুলোতে কয়েক দিন ধরে সব ধরনের সবজি সহ নিত্যপণ্যের দাম লাগামহীনভাবে বেড়েছে। যার প্রভাব নিম্ন ও মধ্যবিত্ত আয়ের মানুষের ওপর দেখা দিয়েছে। আলু ছাড়া সকল প্রকার সবজির দাম এখন ৮০-১২০ টাকা। শুধু সবজি নয়, দাম বেড়েছে চাল, ডাল, সয়াবিন, মুরগি, ডিম, মাছ, মাংস, পিয়াজসহ সকল পণ্যের। এতে করে সংকটে পড়েছেন নিম্ন ও সীমিত আয়ের মানুষ।

রোববার (১৭ আগস্ট) নরসিংদীর বড়বাজারসহ আশপাশের কয়েকটি বাজারে নিত্যপণ্যের এমন বাড়তি দাম দেখা যায়।

আরও পড়ুন: মহাখালীতে পেট্রোল পাম্পে আগুন, নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের ১০ ইউনিট

বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি কেজি বেগুন বিক্রি হচ্ছিল ১২০-১৪০ টাকা, যা গত সপ্তাহের তুলনায় ৭০-৮০ টাকা বেশি। এছাড়া

করলা, বরবটি, ঝিঙ্গা, ঢেঁড়শ, লতি, কাঁকরোল ৮০-১০০ টাকা, লাউ প্রকারভেদে প্রতি পিস ১০০-১৪০ টাকা। কচুরমুখী প্রতি পিস ৭০-১০০ টাকা। কচুর ছড়ি, পেঁপে ও মিষ্টিকুমড়া ৫০-৬০ টাকা কেজি। এছাড়া টমেটোর কেজি ১৫০-১৬০ টাকা ও কাঁচামরিচ ২৪০-২৮০ টাকা কেজি ধরে বিক্রি করা হচ্ছিল।

আরও পড়ুন: নারায়ণগঞ্জে নারীকে গলা কেটে হত্যা মামলার প্রধান আসামি নীরব গ্রেপ্তার

অন্যান্য পণ্যের মধ্যে সয়াবিন তেলের দাম খুচরা প্রতি লিটারে ১৮৫ টাকা এবং খোলা প্রতি লিটারে ১৭৫ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে।

মসুর ডালের দাম গত সপ্তাহের তুলনায় প্রতি কেজিতে ২০-৩০ টাকা বৃদ্ধি পেয়ে বর্তমানে মানভেদে প্রতি কেজি ১৪০-১৬০ টাকা ধরে বিক্রি করা হচ্ছে। পিয়াজের দাম বেড়ে ৭৫-৮০ টাকা প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে।

এদিকে চালের বাজারেও দেখা দিয়েছে অস্বস্তি। মোটা চাল প্রতি কেজি ৫৫-৬৫ টাকা, মাঝারি চাল ৬৫-৭৫ টাকা এবং সরু চাল (মিনিকেট/নাজির) ৭৮-৯০ টাকা।

বাজারে মাছ আগের মতোই চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে। বড় ইলিশ কেজি ২৪০০ থেকে ২৫০০ টাকা, ছোট ইলিশ ১৫০০ থেকে ১৮০০ টাকা। জাটকা ৭৫০-৮০০ টাকা।

রুই ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা, কাতলা ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা, পাঙ্গাস ৩০০ টাকা, বোয়াল ৯০০ টাকা, তেলাপিয়া ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা, শিং মাছ ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা, পাঁচমিশালি মাছ ১০০০-১২০০ টাকা, কেচকি ৬০০ টাকা, টেংরা ৮০০-১২০০ টাকা, বেলে মাছ ১২০০-১৩০০ টাকা, মাঝারি ধরনের চিংড়ি ১৪০০-১৬০০ টাকা ধরে প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে।

মাছের পাশাপাশি দাম বেড়েছে সব ধরনের মুরগির। গত সপ্তাহের তুলনায় কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৭০ টাকায়। আর প্রতি কেজি সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩২০-৩৪০ টাকায়। এছাড়া প্রতি কেজি দেশি মুরগি ৬০০-৬৫০ টাকা, সাদা লেয়ার ৩১০ টাকা ও লাল লেয়ার বিক্রি হচ্ছে ৩২০ টাকায়। জাতভেদে প্রতি পিস হাঁস বিক্রি হচ্ছে ৬০০-৮০০ টাকায়।

এদিকে পূর্বের দামেই বহাল রয়েছে গরু ও ছাগলের মাংসের দাম। প্রতি কেজি গরু ৭৫০ টাকা এবং ছাগল প্রতি কেজি ১২০০-১৩০০ টাকা।

ডিমের বাজারও চাঙ্গা। বর্তমানে এক কুড়ি লাল ডিম ২৪০ টাকা ও সাদা ডিম বিক্রি হচ্ছে ২৩০ টাকায়। এছাড়া হাঁসের ডিম এক কুড়ি ৩৮০-৩৯০ টাকা।

সবজি বিক্রেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, টানা বৃষ্টি ও জলাবদ্ধতার কারণে ক্ষেতের সবজি নষ্ট হয়ে গেছে। তাই বাজারে সবজির সংকট দেখা দেওয়ায় দাম চড়া।

মাছ বিক্রেতা বলেন, “নদীতে মাছ নেই বললেই চলে। জেলেদের কাছ থেকে যে কয়টা মাছ পাওয়া যায়, তা আবার চড়া দামে কিনতে হয়।”

ডিম বিক্রেতা বলেন, “বাজারে হঠাৎ করে বেড়েছে ডিমের চাহিদা। কিন্তু সেই তুলনায় বাড়েনি সরবরাহ। তাই খামারিরা বাড়িয়ে দিয়েছে ডিমের দাম।”

পাইকারি চাল-ডাল-পিয়াজ বিক্রেতা বলেন, “ঢাকা ও চট্টগ্রামের পাইকারি বাজারগুলোতে পণ্যের দাম ঊর্ধ্বমুখী। গত কয়েক সপ্তাহের ব্যবধানে নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। সকল পণ্য জাত অনুযায়ী কেজি প্রতি ২০-৩০ টাকা, সকল ধরনের চাল কেজি প্রতি ৮-১৫ টাকা বেড়েছে। পাশাপাশি পরিবহন খরচও বেড়েছে। এর ফলে পাইকারি ও খুচরা বাজারে সকল পণ্যের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে।”

নরসিংদী বড়বাজারে বাজার করতে আসা কাউসার মিয়া বলেন, “বাজারে দেখছি সবজি সহ সব ধরনের নিত্যপণ্যের অতিরিক্ত দাম। বিগত কিছুদিন পূর্বে সবধরনের পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে থাকলেও কী কারণে আবার হঠাৎ বাড়তি, তা বর্তমান সরকার ভালো বলতে পারবে। এভাবে নিত্যপণ্যের দাম বাড়তে থাকলে আমাদের মতো মধ্যবিত্ত ও নিম্ন আয়ের মানুষের না খেয়ে মরার মতো অবস্থা হবে। দিন যত যাচ্ছে, বাজার নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়ছে। বাজার নিয়ন্ত্রণের কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করতে কাউকে দেখা যাচ্ছে না।” তিনি আরও বলেন, “যদি এভাবে দাম বাড়ে তাহলে সাধারণ মানুষ খাবে কী?”