দেবীদ্বারে জনবল ও চিকিৎসক সংকটে স্বাস্থ্যসেবা বিপর্যয়
কুমিল্লার দেবীদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক ও জনবল সংকট চরম আকার ধারণ করেছে। ফলে উপজেলার পাঁচ লক্ষাধিক মানুষের স্বাস্থ্যসেবা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
৫০ শয্যার এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রতিদিন বহির্বিভাগ ও জরুরি বিভাগে সহস্রাধিক রোগী সেবা নিতে আসেন। শয্যা সংখ্যা ৫০ হলেও অনেক সময় ভর্তি রোগীর সংখ্যা একশ ছাড়িয়ে যায়। তাঁদের ফ্লোরে দরজার পাশে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে রাখতে দেখা যায়। দরিদ্র ও স্বল্প আয়ের জনগোষ্ঠীর বড় অংশই এই সরকারি হাসপাতালের ওপর নির্ভরশীল।
আরও পড়ুন: বাগেরহাট ডিসি অফিসের উমেদার ও স্ত্রীর বিরুদ্ধে ২৩৫ কোটি টাকার মানি লন্ডারিং মামলা
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে মোট ২২ চিকিৎসক এবং তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির ১৯৫ জনসহ মোট ২১৭ পদের জনবল অনুমোদিত। এর মধ্যে ১৩ চিকিৎসক এবং ৫৩ জন অন্যান্য কর্মচারীর পদ দীর্ঘদিন ধরে শূন্য রয়েছে। অর্থাৎ বর্তমানে ৬৬টি পদ খালি।
চিকিৎসকদের ৬টি পদ শূন্য, আরও ৭ জন প্রেষণে থাকায় ১৩ জন চিকিৎসকই কার্যত অনুপস্থিত। বাকি ৮-৯ জন চিকিৎসকের মধ্যেও জরুরি বিভাগে দায়িত্বরত রাত্রিকালীন সেবাদানের পরদিন ওই চিকিৎসক ছুটিতে থাকেন, ট্রেনিং, অসুস্থতা ও অন্যান্য কারণে আরো ৩-৪ জন চিকিৎসক অনুপস্থিত থাকেন। ফলে বাকি ৪-৫ জন চিকিৎসককেই জরুরি বিভাগ, বহির্বিভাগ ও ইনডোরের শত শত রোগীর চিকিৎসা সামলাতে হয়। এ কারণে রোগীরা চরম ভোগান্তিতে পড়ছেন।
আরও পড়ুন: ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রামে ফজলুর রহমান কেন এতটা এগিয়ে
অপরদিকে জুনিয়র কনসালটেন্টের ১০ পদের মধ্যে ৭টি শূন্য। মেডিসিন, সার্জারি, গাইনি, চর্ম ও যৌনরোগ, অর্থোপেডিকস, ইএনটি, চক্ষু বিভাগসহ গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোয় চিকিৎসক না থাকায় বিশেষায়িত সেবা প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। এছাড়াও অ্যানেস্থেশিয়া ডাক্তার না থাকায় অপারেশন থিয়েটারের কাজ প্রায় অচল হয়ে আছে। জনগুরুত্বপূর্ণ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা তদবির করে প্রেষণে ঢাকাসহ বিভিন্ন হাসপাতালে চলে গেলেও ওই পদ খালি দেখানো হয় না বা বিপরীতে আর কোনো চিকিৎসক আসারও সুযোগ থাকে না।
তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের মধ্যেও ব্যাপক সংকট বিরাজ করছে। মিডওয়াইফ, ফার্মাসিস্ট, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট, স্বাস্থ্য সহকারী, অফিস সহকারী, পরিচ্ছন্ন কর্মীসহ এসব পদেই রয়েছে শূন্যতা। ফলে হাসপাতালের পরিচ্ছন্নতা ও প্রশাসনিক কার্যক্রমও ব্যাহত হচ্ছে।
স্থানীয়রা জানান, সরকারি হাসপাতালের দুরবস্থার পেছনে আরেকটি বড় সমস্যা হলো দালালচক্র ও ওষুধ কোম্পানির প্রভাব। উপজেলা সদরজুড়ে থাকা ৩৭টি প্রাইভেট হাসপাতাল ও ক্লিনিকের দালালরা দূর-দূরান্ত থেকে আসা রোগীদের ফুঁসলে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে নিয়ে যায়। সেখানে অখ্যাত কোম্পানির ওষুধ প্রেসক্রাইব করে মুনাফা হাসিল করা হয়।
এছাড়া হাসপাতালের একমাত্র অ্যাম্বুলেন্সটি স্থানীয় প্রাইভেট হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্সচালকদের চাপে কার্যত ব্যবহার বন্ধ রেখেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। ফলে স্বল্প আয়ের, দরিদ্র ও মুমূর্ষু রোগীরা সময়মতো উন্নত চিকিৎসা কেন্দ্রে নিতে না পারায় বিপাকে পড়ছেন। চিকিৎসক সংকটের পাশাপাশি ওষুধ, পরিচ্ছন্নতা কর্মী ও যন্ত্রপাতির অভাবেও স্বাস্থ্যসেবার মান দিন দিন নিচের দিকে নামছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মহিবুস সালাম খান বলেন, চিকিৎসক ও জনবল সংকটের বিষয়টি আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। জনবল পূরণ হলে পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক হবে। তবে প্রেষণে যাওয়া ৮ চিকিৎসকের বিপরীতে চিকিৎসক না পাওয়ায় এবং গুরুত্বপূর্ণ বিভাগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎস না থাকায় রোগীদের ভোগান্তি হচ্ছে।





