চাঁদা, ছিনতাই ও আধিপত্য বিস্তার

রায়পুরায় ১০ দিনে ৩ খুন, জনমনে আতঙ্ক

Sadek Ali
আশিকুর রহমান, নরসিংদী
প্রকাশিত: ৯:১৩ পূর্বাহ্ন, ০৯ ডিসেম্বর ২০২৫ | আপডেট: ৯:৫৪ পূর্বাহ্ন, ১০ ডিসেম্বর ২০২৫
ছবিঃ সংগৃহীত
ছবিঃ সংগৃহীত

নরসিংদীর রায়পুরায় গত ১০ দিনে তিনটি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এসব হত্যাকান্ডের পেছনে রয়েছে চাঁদা, ছিনতাই ও আধিপত্য বিস্তারসহ বিভিন্ন ঘটনা।

আর এসব ঘটনাগুলো সংঘটিত হয়েছে রায়পুরা উপজেলার আমিরগঞ্জ, বাঁশগাড়ি ও নিলক্ষা ইউনিয়নে। এত অল্পসময়ের ব্যবধানে তিন তিনটি হত্যাকান্ডের ঘটনায় জনমনে দেখা দিয়েছে আতঙ্ক। প্রশ্ন উঠেছে সাধারণ মানুষের জননিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলার ওপর। 

আরও পড়ুন: টাঙ্গাইলের সাংবাদিকদের সঙ্গে নবাগত পুলিশ সুপারের মতবিনিময়

গত ২৯ নভেম্বর (শনিবার) উপজেলার আমিরগঞ্জ ইউনিয়নের সংগীতা-আমিরগঞ্জ সড়কের বদরপুর এলাকার সড়কের পাশ থেকে দিনেদুপুরে শাহাদাত হোসেন (১৪) নামে মাদ্রাসা পড়ুয়া এক কিশোরের (অটো চালক) গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার করেছে স্থানীয় পুলিশ। স্থানীয়দের ধারণা, দুর্বৃত্তরা ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে শাহাদাতকে হত্যা করে সংগীতা-আমিরগঞ্জ সড়কের বদরপুর এলাকার সড়কের লাশ পাশে ফেলে রেখে যায়।

এর ৩ দিন পর অর্থাৎ গত ২ ডিসেম্বর (মঙ্গলবার) বাঁশগাড়ী ইউনিয়নের বাঁশগাড়ি দিঘলিয়াকান্দি গ্রামে প্রাণতোষ সরকার (৪২) নামে এক স্বর্ণ ব্যবসায়ীকে রাতে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে বাঁশগাড়ি দিঘলিয়াকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে গুলি করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। স্বজন সূত্রে জানায়, দাবিকৃত চাঁদা দিতে অস্বীকার করায় ওইদিন রাতে প্রাণতোষকে নিজ ঘর থেকে ডেকে নিয়ে বাড়ির পাশে স্কুল মাঠে নিয়ে গিয়ে দূর্বৃত্তরা গুলি করে তাকে হত্যা করে।

আরও পড়ুন: টেকনাফ সীমান্তে আবারও গোলাগুলির শব্দ, বাড়িতে পড়লো গুলি

সর্বশেষ গত ৮ ডিসেম্বর (সোমবার) সকাল ১০টার দিকে নিলক্ষা ইউনিয়নের দড়িগাঁও গ্রামে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দু'পক্ষে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে প্রবাস ফেরত মামুন মিয়া (২৫) যুবক নিহত হয়েছেন। এ সময় উভয়পক্ষের অন্তত ৩০ জন গুলি ও টেঁটাবিদ্ধসহ আহত হয়েছেন। পরিবার সূত্রে জানা যায়, নিহত মামুন মিয়া কুয়েত প্রবাসী ছিলেন। তিনি ১৫ দিন পূর্বে কুয়েত থেকে পাঁচ মাসের ছুটিতে দেশে আসেন।

রায়পুরা থানার ওসি (তদন্ত) প্রবীর কুমার ঘোষ বলেন, দুই গ্রুপের আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করেই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় একজন নিহত হয়েছেন। এদের মধ্যে আত্মীয়তার সম্পর্ক রয়েছে। বর্তমানে এলাকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। সংঘর্ষ এড়াতে এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এ ঘটনায় এখনো কাউকে আটক করা যায়নি। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের দ্রুতই আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে। 

হাসনাবাদ বাজারের ব্যবসায়ী মনির হোসেন বলেন, একের পর এক হত্যাকান্ডের ফলে আমরা সাধারণ মানুষ জননিরাপত্তাহীনতায় ভূগছি। বৃহত্তর রায়পুরার আয়তন ও জনসংখ্যার তুলনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য সংখ্যা কম। এত অল্পসংখ্যক সদস্য দিয়ে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ করা অসম্ভব। সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধি, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টহল বৃদ্ধি সহ অপরাধীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনতে হবে। 

মনিপুরা বাজারের আব্বাস আলী বলেন, এসব ঘটনায় আমরা আতংকিত। পরিবার পরিজন নিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় আছি। এসব ঘটনার সাথে জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার করতে হবে। পাশাপাশি থানার সংখ্যা বৃদ্ধি করতে হবে।

এডভোকেট আরিফুল ইসলাম বলেন, সবার আগে চাই আইনের শাসন। সঠিক আইনের শাসনের মাধ্যমেই অপরাধ নিমূল করা সম্ভব। পাশাপাশি জনসচেতনতা গড়ে তুলতে হবে।