এমপি আনার হত্যা
হেলিকপ্টারে পাহাড়ে অভিযান, মোস্তাফিজ ও ফয়সাল আটক
ঝিনাইদহের চাঞ্চল্যকর এমপি আনোয়ারুল আজিমকে অপহরনের পর হত্যা মামলার আসামী মোস্তাফিজুর রহমান ও ফয়সাল আলী সাজিকে পার্বত্য খাগড়াছড়ি থেকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। বুধবার দুপুরে তাদেরকে গ্রেপ্তারের পর হেলিকপ্টারযোগে ঢাকায় আনা হয়েছে। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশীদ বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তার নেতৃত্বে এই অভিযান চালানো হয়েছে।
এদিকে আনার হত্যায় জড়িত অপর আসামী গ্যাস বাবুর তিনটি মোবাইল ফোন উদ্ধারের জন্য ঝিনাইদহের একাধিক পুকুরে ডুবুরি নামিয়ে তল্লাশী চালানো হয়েছে। কিন্তু শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত মোবাইল উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।
আরও পড়ুন: শীশা বারে হত্যাকাণ্ডের জেরে চাঁদার হার দ্বিগুন করেছেন বনানী থানার ওসি
আনার অপহরণ ও হত্যার তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, সন্দেহভাজন আসামিদের মধ্যে মোস্তাফিজুর ও ফয়সাল সংসদ সদস্য খুন হওয়ার আগে গত ২ মে কলকাতায় যান। তারা দেশে ফিরে আসেন ১৯ মে। এই দুজনের বাড়ি খুলনার ফুলতলায়। খুনের পরিকল্পনা বাস্তবায়নকারী হিসেবে চিহ্নিত শিমুল ভূঁইয়া ওরফে আমানুল্লাহর বাড়িও একই এলাকায়। গত তিন জন্য মোস্তাফিজ ও ফয়সাল সাজিসহ ১০ আসামীর ব্যাংক হিসাব চেয়ে আদালতে আবেদন করে ডিবি। পরে তাদের ব্যাংক হিসাব জব্দের আবেদন মঞ্জুর করা হয়েছে। পলাতক এই দুই আসামির কাছে এমপি আনার হত্যাকাণ্ডে অনেক তথ্য-উপাত্ত রয়েছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদে অনেক তথ্য পাওয়া যাবে বলে জানিয়েছেন ডিবির তদন্ত কর্মকর্তারা।
ডিএমপির ডিবি সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের এডিসি জুনায়েদ আলম জানান, এমপি আনার হত্যার ঘাতক দলের অন্যতম দুই পলাতক আসামি ফয়সাল ও মোস্তাফিজকে ধরতে খাগড়াছড়ি ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন পাহাড়ে হেলিকপ্টার দিয়ে সাঁড়াশি অভিযান চালানো হয়। সেখানে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার(ডিবি) হারুন অর রশীদ অভিযানের নেতৃত্ব দেন।
আরও পড়ুন: এসপি হতে ৫০ লাখ টাকা ঘুষের অভিযোগে পুলিশ সুপারকে দণ্ড
এখন পর্যন্ত এমপি আনার হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বাংলাদেশে গ্রেফতার হয়েছেন ৭ জন। তারা হলেন আমানুল্লাহ আমান ওরফে শিমুল ভূঁইয়া, তার ভাতিজা তানভীর ভূঁইয়া ও সিলিস্তি রহমান। পরে গ্রেফতার হন জেলা আওয়ামী লীগ নেতা গ্যাস বাবু, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টু, মোস্তাফিজুর রহমান ও ফয়সাল আলী সাজি। এছাড়া কলকাতায় গ্রেপ্তার হয়েছেন সিয়াম হোসেন ও জিহাদ হাওলাদার।
এদিকে
ঝিনাইদহ ও কালীগঞ্জ প্রতিবেদক জানান, বুধবার হেলিকপ্টার যোগে ঝিনাইদহে গিয়ে তদন্তকারী কর্মকর্তারা কয়েকটি ডোবা-পুকুরে মোবাইল উদ্ধার অভিযান চালান। তবে সেখান থেকে মেলেনি আসামী গ্যাস বাবুর ফেলে দেয়া তিনটি মোবাইলের একটিও উদ্ধার হয়নি।
আনার হত্যা মামলার অন্যতম আসামী কাজী কামাল আহমেদ বাবু ওরফে গ্যাস বাবুকে নিয়ে মোবাইলসহ আলামত উদ্ধারে ঝিনাইদহে প্রথম দিনের অভিযান শেষ করেছে ডিবি পুলিশ। ঝিনাইদহ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ফারুক আযমের নেতৃত্বে জেলেদেরকে পুকুরে নামিয়ে অভিযান চালানো হয়। অভিযান চলাকালীন আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ঝিনাইদহ শহর কঠোর নিরাপত্তা চাদরে ঘিরে রাখা হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বুধবার সকালে ঝিনাইহদ জেলা কারাগার থেকে কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে ঝিনাইদহ শহরের পায়রা চত্বরে আনা হয় জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ সম্পাদক কাজী কামাল আহমেদ বাবু ওরফে গ্যাস বাবুকে। শহরের পায়রা চত্বরের উত্তর পাশের একটি পুকুরে জেলে নামিয়ে ফেলে দেওয়া মোবাইল উদ্ধারে অভিযান চালানো হয়। সেখান থেকে প্রাথমিক অভিযান শেষে করে, পরে শহরের স্টেডিয়াম এলাকাল অপর একটি পুকুরে অভিযান চালায় তারা। সেখানে অভিযানের এক পর্যায়ে ডিএমপির ডিবি প্রধান হারুন অর রশীদ সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন।
ওই সময় তিনি বলেন, ‘চাঞ্চল্যকর এই হত্যা মামলায় মোট ৭ জন অংশ নেয়। তাদের মধ্যে ৫ জনকে আমরা গ্রেফতার করেছি। বাকি দুজনকে গ্রেফতারের জন্য জোর প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে। তারা সাগরে বা মাটির নিচে যেখানেই থাকুক না কেন আমরা তাদেরকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হবো। কোন ভালো মানুষকে হয়রানি করা হবে না এবং অভিযুক্ত কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।’
অভিযানের সময় আনার হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা (আইও) ডিএমপির ডিবি পুলিশের সহকারী কমিশনার মাহফুজুর রহমান, ঝিনাইদহ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট ফারুক আযম, ঝিনাইদহ পুলিশ সুপার আজিম উল আহসানসহ পুলিশের পদস্থ কর্মকর্তরা উপস্থিত ছিলেন।
প্রসঙ্গত১৩ মে দুপুরেই আনারকে হত্যা করা হয়েছে। পরে ঢাকার ডিবি কলকাতায় গিয়ে নিউটাউনের সঞ্জিবা গার্ডেন থেকে কিছু মাংসের টুকরা ও পরে কলকাতার সিআইডি কিছু হাড়গোড় উদ্ধার করে। সেগুলো আনারের কিনা নিশ্চিত হতে ফরেনসিক পরীক্ষা চলছে।
আনার হত্যায় জড়িত সন্দেহে ঢাকায় ডিবির হাতে গ্রেপ্তার হন, শিমুল, সেলেস্টি রহমান, তানভীর ভূইয়া আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। পরে গ্রেপ্তার হন কাজী কামাল আহম্মেদ বাবু ও ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাঈদুল করিম মিন্টু, সর্বশেষ গতকাল গ্রেপ্তার হলেন ফয়সাল সাজি ও মোস্তাফিজুর রহমান। পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছেন কসাই জিহাদ হাওলাদার ও সিয়াম হোসেন।





