সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে কারখানা দখল
ব্যবসায়ী আমিনুল হক শামীমের বিরুদ্ধে দুই মামলা , তদন্তে পিবিআই

আদালতের দুটি নিষেধাজ্ঞা থাকার পরও সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে সাভারে জমি সহ কারখানা দখলের অভিযোগে ময়মনসিংহের বিতর্কিত ব্যবসায়ী সি পার্ল গ্রুপের মালিক আমিনুল হক শামীমের বিরুদ্ধে ঢাকা আদালতে দুটি মামলা দায়ের করেছেন বিশ্বজিৎ রায় ও অভিজিৎ রায়। মামলা দুটি তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য আদালত পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন কে নির্দেশ দিয়েছে। দায়িত্ব পেয়ে পিবিআই তদন্ত কর্মকর্তারা দুটি মামলার তদন্ত করছে।
ঢাকার সাভারে দিনেদুপুরে একটি কারখানা দখলের অভিযোগ উঠেছে। আদালতের স্থিতাবস্থা থাকার পরও বেঙ্গল ফাইন সিরামিক লিমিটেড নামে ওই প্রতিষ্ঠানটি দখলে নেয় সি পার্ল গ্রুপ। দখলের সময় ভুক্তভোগীরা পুলিশের সহযোগিতা চেয়েও পাননি। ঘটনাস্থলে পুলিশ উপস্থিত থাকলেও তারা ছিল নিশ্চুপ। এদিকে সন্ত্রাসীদের হুমকিতে মুল মালিক বিশ্বজিৎ পরিবার সাভারে প্রবেশ করতে পারছেন না।
আরও পড়ুন: গাজীপুরে সাংবাদিক তুহিন হত্যা: আরও দুইজন গ্রেপ্তার, মোট গ্রেপ্তার ৭
মামলার বিবরনে জানা যায় সাভার পৌর এলাকার ভাগলপুরে বেঙ্গল ফাইন সিরামিক লিমিটেড কারখানায় গত রোববার এমন ঘটনা ঘটে। কারখানা দখলের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করার সময় সন্ত্রাসীদের হামলায় আহত হন সাভারে কর্মরত দ্য ডেইলি স্টারের সংবাদদাতা ও বেসরকারি নাগরিক টেলিভিশনের প্রতিনিধি আকলাকুর রহমান আকাশ।
বেঙ্গল ফাইন সিরামিক লিমিটেডের নির্বাহী পরিচালক অভিজিৎ রায় বাংলাবাজার পত্রিকাকে বলেন, আদালতের আদেশ থাকা সত্তেও হামলাকারীরা অবৈধ ভাবে প্রতিষ্টানে প্রবেশ করে। এবং জোরপুর্বক কারখানায় কর্মরত নিরাপত্তারক্ষী এবং কর্মকর্তা, কর্মচারীদের বের করে দেয়। এ সময় তথ্য সংগ্রহ করতে যাওয়া সাংবাদিকদেরও মারধর করে দখলকারীরা।
আরও পড়ুন: গাজীপুরে সাংবাদিক তুহিন হত্যায় স্বামী-স্ত্রীসহ চারজন গ্রেপ্তার
তিনি আরও বলেন, আদালতের দুটি পৃথক স্টে অর্ডার এবং দুটি রায় থাকার পড়েও ক্ষমতাশীলরা এসব এর কোন তোয়াক্কা করে নি।
তিনি বলেন, জোর করে আমাদের প্রতিষ্ঠানটি সি পার্ল গ্রুপ দখল করে নিয়েছে। বেঙ্গল ফাইন সিরামিক লিমিটেড মোটা অঙ্কের দায় মাথায় নিয়ে ২০০৭ সালে বন্ধ হয়। এরপর আমরা একটি চুক্তির মাধ্যমে কোম্পানির ২৪ দশমিক ২৯ শতাংশ স্পন্সর শেয়ার কিনে এজিএমের মাধ্যমে কোম্পানি পরিচালনার দায়িত্ব নিই। এরপর কিছু সমস্যা থাকলেও কারখানাটিতে ২০১৯ সালে কার্যক্রম শুরু করা হয়।
অভিজিৎ অভিযোগ করেন, স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাকর্মীসহ কয়েকশ সন্ত্রাসী নিয়ে সি পার্ল গ্রুপের কর্মকর্তারা কারখানা দখল করে নেয়। তারা আমাদের সব নিরাপত্তারক্ষী, কর্মকর্তা, কর্মচারীদের বের করে দেয়। অভিজিৎ রায় জানান, এর আগে ২০১৬ সালে চুক্তি ভঙ্গের অভিযোগ তুলে আগের মালিকপক্ষ কোম্পানির মালিকানা দাবি করে আদালতে একটি মামলা করে। ওই মামলায় তার বাবা বিশ্বজিৎ কুমারকেই কারখানা পরিচালনার নির্দেশ দেন উচ্চ আদালত। ওই মামলা এখনো নিম্ন আদালতে চলমান। এরই মধ্যে গত বছর আগের মালিকপক্ষ বিক্রীত শেয়ার আবার সি পার্ল গ্রুপের মালিকপক্ষের কাছে বিক্রি করে। শেয়ার কেনার পর সি পার্ল গ্রুপের লোকজন একাধিকবার কারখানাটি দখলের চেষ্টা করে।
দখল ঠেকাতে এবং আইনি সহায়তা পেতে অভিজিৎ রায় আদালতের মাধ্যমে ১৪৫ ধারার আদেশ আনেন। আদালতের ওই আদেশ উপেক্ষা করেই রোববার কারখানাটি দখল করে সি পার্ল গ্রুপের লোকজন।
এদিকে ঢাকা স্টক এক্সচেইঞ্জের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে গেলে দেখা যায় বেঙ্গল ফাইন সিরামিক লিমিটেড এর সর্বশেষ মালিকানা শেয়ার লেনদেন হয়েছিল ২০১৩ সালের সেপ্টেবরের ৪ তারিখে এবং সেটি হস্তানতর হয়েছিল বিশ্বজিৎ কুমার রায় এর আমলে। এর পর আর কোন লেনদেন বা হস্তান্তরের রিপোর্ট অফিসিয়াল ওয়েবসিয়াটে পাওয়া যায়নি।
অভিজিৎ রায় আরও জানান, এর আগে ২০১৬ সালে সমঝোতা স্মারক (MOU) এর শর্ত ভঙ্গের অভিযোগ তুলে আগের মালিকপক্ষ কোম্পানির মালিকানা দাবি করে আদালতে একটি মামলা করে। উচ্চ আদালত ওই মামলায় তার বাবা বিশ্বজিৎ কুমার রায়কেই বেঙ্গল ফাইন সিরামিক্স এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে কোম্পানির সকল কার্যক্রম পরিচালনা করার আদেশ দেন। ওই মামলা এখনো নিম্ন আদালতে চলমান। এরই মধ্যে গত বছর আগের মালিকপক্ষ বিক্রীত শেয়ার আবার সি পার্ল গ্রুপের মালিকপক্ষের কাছে বিক্রি করে। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের সহকারী পরিচালক (এসআরআইসি), মোঃ জয়নাল আবেদীন বিবাদীগণের সাথে যোগসাজশে এবং অনৈতিক লাভের আশায় বিগত ০৫/১২/২০২৩ তারিখের পত্রে উক্ত অবৈধ শেয়ার হস্তান্তরের অনুমোদন প্রদান করেছেন। শেয়ার কেনার পর সি পার্ল গ্রুপের লোকজন একাধিকবার কারখানাটি দখলের চেষ্টা করে।
দখল ঠেকাতে এবং আইনি সহায়তা পেতে অভিজিৎ রায় আদালতের মাধ্যমে ১৪৫ ধারার আদেশ আনেন। আদালতের ওই আদেশ উপেক্ষা করেই ঘটনার দিন রোববার সকাল ৯ ঘটিকা হতে ৯.৩০ ঘটিকার সময় সি পার্ল গ্রুপের লোকজন বেঙ্গল ফাইন সিরামিক্স লিঃ এর সাং- ভাগলপুর, ডাকঘর- সাভার- ১৩৪০, থানা- সাভার, জেলা- ঢাকা স্থিত ১নং গেইটে ধাক্কা ধাক্কি করে অবৈধ প্রবেশ করতে ব্যর্থ হয় কারখানার দেওয়াল টপকে প্রায় ১০/১৫ জন গুন্ডাবাহিনী প্রবেশ করে নিরাপত্তা প্রহরীকে মারধর করে ১নং গেইট অবৈধভাবে খুলে দিয়ে প্রায় ১৫০/২০০ জন ভাড়া করা গুন্ডা বাহিনী নিয়ে ফ্যাক্টরীর ভিতরে প্রবেশ করে অফিসের স্টাফদের মারধর করে বের করে দেয়। পরবর্তীতে অফিস বিল্ডিংয়ের ২য় তলায় প্রবেশ করে অফিসের কম্পিউটার, সিসি টিভির কন্ট্রোলার ও হার্ডডিস্ক, ডিভিআর সহ প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র, রুমের তালা ভেঙ্গে চুরমার করে ফেলে, কর্মরত নিরাপত্তারক্ষী এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ফ্যাক্টরী থেকে অবৈধভাবে বের করে দিয়ে ও উক্ত সম্পত্তি নিজেদের বলিয়া প্রচার ও প্রকাশ করতঃ দাবী করে এবং পরবর্তীতে উক্ত আসবাবপত্র গুলো সন্ত্রাসী লোকজন দ্বারা নিয়ে গিয়ে কারখানাটি দখল করে নেয়।
উক্ত ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে অভিজিৎ রায় বাদী হয়ে উক্ত দুস্কৃতিকারী ও সন্ত্রাসী লোকদের বিরুদ্ধে বিগত ২৮/০৫/২০২৪ তারিখে ঢাকার বিজ্ঞ চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (সাভার আমলী) আদালত- এ ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন, ২০২৩ এর অধীনে একটি ফৌজদারী মামলা দায়ের করেন, যার মামলা নং- ৬৫৪/২০২৪।
অপরদিকে, প্রতিষ্ঠানের বর্তমান বৈধ মালিক ও পরিচালনা পর্ষদ জনাব বিশ্বজিৎ কুমার রায় ও শিল্পী রানী রায় বাদী হয়ে আগের মালিকপক্ষ, সি পার্ল গ্রুপের মালিকপক্ষ এবং বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের চেয়ারম্যান প্রফেসর শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম এবং সহকারী পরিচালক (এসআরআইসি), মোঃ জয়নাল আবেদীন-গণদের বিরুদ্ধে বিগত ৩০/০৫/২০২৪ তারিখে দন্ড বিধির অধীনে আরও একটি ফৌজদারী মামলা দায়ের করেন, যার মামলা নং- ৬৬৮/২০২৪। বিজ্ঞ আদালত উক্ত মোকদ্দমাদ্বয় বাংলাদেশ পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) এর নিকট সুষ্ঠু তদন্তের জন্য প্রেরণ করেন, যা এখনও তদন্তাধীন রয়েছে।