রাজশাহীতে বিচারকের ছেলে হত্যায় লিমনের লোমহর্ষক স্বীকারোক্তি
রাজশাহীতে মহানগর দায়রা জজ আব্দুর রহমানের ছেলে তাওসিফ রহমান সুমনকে (১৬) কুপিয়ে হত্যার ঘটনার বিস্তারিত স্বীকারোক্তি দিয়েছেন অভিযুক্ত লিমন মিয়া (৩৫)। বৃহস্পতিবার রাতে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পুলিশের উপস্থিতিতে সাংবাদিকদের সামনে তিনি ঘটনার বিবরণ দেন।
একইসঙ্গে জানা গেছে, হামলার সাতদিন আগেই লিমনের বিরুদ্ধে সিলেটের জালালাবাদ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছিলেন আহত তাসমিন নাহার লুসী (৪৪)। তবে আদালতের অনুমতি না পাওয়ায় সেই জিডির তদন্ত শুরু হয়নি বলে জানিয়েছে পুলিশ।
আরও পড়ুন: শীশা বারে হত্যাকাণ্ডের জেরে চাঁদার হার দ্বিগুন করেছেন বনানী থানার ওসি
হাসপাতালে সাংবাদিকদের সামনে লিমন দাবি করেন, বিচারকের স্ত্রী তাসমিন নাহার লুসীর সঙ্গে তার পাঁচ বছরের পরকীয়া সম্পর্ক ছিল। প্রেমের এই সম্পর্কের জেরে লুসী তাকে হয়রানি করেছেন বলে অভিযোগ করেন তিনি।
লিমন বলেন, লুসী তার ফোন না ধরলে তিনি ‘মানসিকভাবে ভেঙে পড়তেন’। এ কারণেই তিনি রাজশাহীতে লুসীর সঙ্গে দেখা করতে আসেন। ফ্ল্যাটে ঢুকে বাদাম–পপকর্ন দেন। পরে লুসীর সঙ্গে বাইরে যাওয়ার জন্য জোরাজুরি করলে তাদের মধ্যে বাকবিতণ্ডা হয়। এ সময় লুসীর ছেলে সুমন এসে তাকে বাধা দিলে তিনি সুমনকে আঘাত করেন।
আরও পড়ুন: এসপি হতে ৫০ লাখ টাকা ঘুষের অভিযোগে পুলিশ সুপারকে দণ্ড
ঘটনার পুরো বিবরণ তিনি আর দিতে পারেননি বলে দাবি করেন। তবে এই ঘটনার ‘বিচার চান’ বলেও জানান লিমন।
গত ৬ নভেম্বর করা জিডিতে তাসমিন নাহার লুসী উল্লেখ করেন, কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের সদস্য হওয়ায় লিমনের সঙ্গে পরিচয়। লিমন আর্থিকভাবে দুর্বল হওয়ায় তিনি কখনো কখনো সাহায্য করতেন। পরে লিমন নিয়মিত অর্থ চাওয়ায় তিনি অপারগতা প্রকাশ করলে লিমন তাকে হুমকি দিতে শুরু করেন।
জিডিতে তিনি উল্লেখ করেন, ৩ নভেম্বর লিমন তার মেয়ের ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারে কল দিয়ে তাকে ও পরিবারের সদস্যদের হত্যার হুমকি দেন। এজন্য তিনি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছিলেন।
জালালাবাদ থানার ওসি শাহ মোহাম্মদ মোবাশ্বির জানান, আদালতের অনুমতি না পাওয়ায় জিডির তদন্ত শুরু করা যায়নি। লুসী তখন মেয়ের থাকার কারণে সিলেটে অবস্থান করছিলেন।
বৃহস্পতিবার দুপুরে স্পার্ক ভিউ নামের ১০ তলা ভবনের ৫ম তলার ফ্ল্যাটে প্রবেশ করেন লিমন। ভবনের দারোয়ান জানান, তিনি আগে কখনো লিমনকে দেখেননি। তবে ‘বিচারকের ভাই’ পরিচয়ে এবং রেজিস্টারে নাম–নম্বর লিখে তিনি ফ্ল্যাটে ঢোকার অনুমতি পান।
এর অল্প সময় পর ফ্ল্যাটের গৃহকর্মী দৌড়ে এসে জানান, বিচারকের স্ত্রী ও ছেলেকে কুপিয়ে আহত করা হয়েছে। পরে ভবনের বাসিন্দারা ঢুকে সুমন, তার মা লুসী এবং লিমনকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করেন।
রামেক হাসপাতালের মুখপাত্র ডা. শংকর কুমার বিশ্বাস জানান, ধারালো অস্ত্রের আঘাতে অত্যধিক রক্তক্ষরণে সুমনের মৃত্যু হয়েছে। তার শরীরের একাধিক স্থানে আঘাত ছিল।
তাসমিন নাহার লুসীর হাত, বাহু ও উরুতে গুরুতর জখম আছে। তার ডান হাতের একটি রগ কাটা গেছে। তাকে অস্ত্রোপচারের পর আইসিইউতে রাখা হয়।
লিমনের হাতে আঘাত পেলেও তা গুরুতর নয় বলে জানান চিকিৎসকরা।
রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মোহাম্মদ আবু সুফিয়ান তদন্তের জন্য ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তিনি বলেন, লিমনের পকেটে পাওয়া ড্রাইভিং লাইসেন্স দেখে ধারণা পাওয়া যায় তিনি পেশায় চালক। ঘটনাটি পূর্ববিরোধ সম্পর্কিত কিনা—তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।





