দেশে ৩ মাসে বাড়িভাড়া বেড়েছে ৫.৮৯%

সারাদেশে ২০২৩ সালের শেষ ৩ মাসে বাড়িভাড়া বেড়েছে ৫.৮৯ শতাংশ। ২০২২ সালের একই সময়ে ভাড়া বেড়েছিল ৫.৮৬ শতাংশ। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) বাড়িভাড়া সূচকের (এইচআরআই) ২০২৩-২৪ অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকের (অক্টোবর-ডিসেম্বর) প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। পাকা, আধাপাকা, কাঁচা ও ঝুপড়ি—এই তিন ধরনের বাড়ির ভাড়া নিয়ে বিবিএস হালনাগাদ এই তথ্য প্রকাশ করেছে।
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, একটি পরিবারের মোট আয়ের ১৪ থেকে ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত বাড়িভাড়ায় ব্যয় হয়।
আরও পড়ুন: স্বর্ণের দাম নতুন রেকর্ড: প্রতি ভরি ২ লাখ ১৭ হাজার ৩৮২ টাকা
বিবিএসের জরিপের তথ্য অনুসারে, গত অক্টোবর-ডিসেম্বর কাঁচা ঘর বিভাগের ভাড়া সবচেয়ে বেশি বেড়েছে। সূচক বেড়ে হয়েছে ১১২.৪৭। এটি এর আগের বছর একই সময়ের তুলনায় প্রায় সাড়ে ৬ শতাংশ বেশি।
একইভাবে টিনের ঘর বিভাগের দ্বিতীয় প্রান্তিকে সূচক বেড়েছে ১১০.৮১। এটি আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ৬.৪ শতাংশ বেশি। পাকা ঘর বিভাগে দ্বিতীয় প্রান্তিকে সূচক বেড়েছে ১০৮.৮৮ শতাংশ, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ৫.৭৫ শতাংশ বেশি।
আরও পড়ুন: ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ১০০ কোটির বেশি হতে পারে: বিজিএমইএর পরিচালক
বিভাগীয় হিসাবে দেখা গেছে, বাড়িভাড়া সবচেয়ে বেশি বেড়েছে ঢাকা বিভাগে।
এ বিভাগে ভাড়া বৃদ্ধির সূচক বেড়েছে ১০৯.৯২ শতাংশ। এরপর রয়েছে বরিশাল বিভাগ। এ বিভাগে ভাড়া বেড়েছে ১০৯.৪০ শতাংশ। সবচেয়ে কম বাড়িভাড়া বেড়েছে সিলেট বিভাগে। এ বিভাগে বাড়িভাড়া বেড়েছে ১০৮.৬৪ শতাংশ।
জানা গেছে, বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণের আইনটি করা হয়েছিল ১৯৯১ সালে। ভাড়াটিয়াদের স্বার্থ রক্ষার নানা বিষয় এখানে উল্লেখ থাকলেও বাস্তবে আইনটির তেমন প্রয়োগ নেই। বিবিএস ২০২২ সালের খানার আয় ও ব্যয় জরিপের তথ্য অনুযায়ী, একটি পরিবারের দ্বিতীয় বৃহত্তম খরচের খাত হলো বাসাভাড়া, গ্যাস-বিদ্যুত্, পানির বিল ইত্যাদি। এই বিল খাতে একটি পরিবারের মাসে খরচ হয় চার হাজার ৪১৮ টাকা। এটি মোট খরচের ১৪ শতাংশ। তবে যেসব পরিবারের নিজের বাড়ি বা ফ্ল্যাট আছে, তাদের বাসাভাড়ার খরচ নেই। গ্রামে বাসাভাড়ার প্রচলনও নেই। তাই এই খাতে খরচ আপাতত দৃষ্টিতে কম মনে হয়।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ বিষয়ক সংগঠন কনজিউমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) তথ্য অনুযায়ী, গত ১৫ বছরে বাড়িভাড়া বেড়েছে ৬২৮ শতাংশ। গত ২৫ বছরে রাজধানীতে বাড়িভাড়া সংক্রান্ত জরিপে সংগঠনটি জানিয়েছিল, এ সময় বাড়িভাড়া বেড়েছে প্রায় ৪০০ শতাংশ। একই সময়ে নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে ২০০ শতাংশ। অর্থাত্ এ সময়ে নিত্যপণ্যের দামের তুলনায় বাড়িভাড়া বৃদ্ধির হার দ্বিগুণ।
সংগঠনটির অন্য এক পরিসংখ্যান বলছে, ঢাকার ২৭ শতাংশ ভাড়াটিয়া আয়ের প্রায় ৩০ শতাংশ, ৫৭ শতাংশ ভাড়াটিয়া আয়ের প্রায় ৫০ শতাংশ, ১২ শতাংশ ভাড়াটিয়া আয়ের প্রায় ৭৫ শতাংশ টাকা শুধু বাসাভাড়া পরিশোধে ব্যয় করে থাকে।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান বলেন, বাড়িভাড়ার উচ্চ প্রবৃদ্ধি মূল্যস্ফীতির ধারাবাহিক প্রভাবের বহিঃপ্রকাশ। এই বাড়তি খরচ কম আয়ের পরিবারগুলোর বোঝা দ্বিগুণ করে দেয়।
ভাড়াটিয়া পরিষদের সভাপতি মো. বাহারানে সুলতান বাহার বলেন, ‘বাসাভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইন কার্যকর করতে আমরা বারবার সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছি। এ ছাড়া মানববন্ধনসহ নানা কর্মসূচি পালন করেছি। তবু ভাড়াটিয়াদের কোনো কথাই শোনা হচ্ছে না।’