বগুড়ায় প্রায় ৩৫২ বছরের প্রাচীন মধুগঞ্জেশ্বরী কালীপূজা অনুষ্ঠিত

Sanchoy Biswas
বগুড়া প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ৭:২৮ অপরাহ্ন, ১৯ অক্টোবর ২০২৫ | আপডেট: ১০:৫৭ অপরাহ্ন, ১৯ অক্টোবর ২০২৫
ছবিঃ সংগৃহীত
ছবিঃ সংগৃহীত

বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার সাদুল্যাপুর গ্রামে প্রতি বছরের ন্যায় এবছরও কার্তিক মাসের অমাবস্যায় অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী শ্রীশ্রী মধুগঞ্জেশ্বরী কালী পূজা।

আগামী ২০শে অক্টোবর সোমবার বাংলা ১৪৩২ সনের ০৫ই কার্তিক অমাবস্যা তিথীতে শিবগঞ্জ উপজেলায় প্রতি বছরের ন্যায় এবছরেও ঐতিহ্যবাহী শ্রীশ্রী মধুগঞ্জেশ্বরী কালী মাতার পূজা ও মেলা অনুষ্ঠিত হবে।

আরও পড়ুন: ইসলামী আন্দোলন ক্ষমতায় গেলে প্রত্যেক নাগরিকের জানমালের গ্যারান্টি দেওয়া হবে: মুফতি ফয়জুল করীম

অত্র এলাকার হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকের মতে, এটি উত্তরবঙ্গের অন্যতম ও বাংলাদেশের মধ্যে ব্যতিক্রমধর্মী একটি কালী পূজা। প্রাচীনতম এই পূজায় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজার হাজার ভক্তবৃন্দ তাদের মানত দান ও পূণ্য লাভের আশায় সমবেত হয়। শুধু দেশ নয়, প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকেও ভক্তবৃন্দ ও দর্শনার্থীরা পূজা দর্শনের জন্য আসেন এবং মানত হিসাবে পাঠা, কবুতর, ফলমূল, মুখা, পূজার অর্ঘসহ বিভিন্ন সামগ্রী প্রদান করেন।

পূজার বিশেষ বৈশিষ্ট্যগুলোর মধ্যে রয়েছে পাঠা লুট—বলিকৃত পাঠা লুটের উদ্দেশ্যে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ছুঁড়ে ফেলা হয়, এবং শক্তি খাটিয়ে নির্দিষ্ট সীমানা অতিক্রম করলে পাঠা তাদের হয়। এছাড়া থান লুট, যেখানে পূজার স্থানে বা প্রতিমার সামনে হোম-যজ্ঞ শেষে প্রতিটি প্রার্থীর পছন্দমতো প্রসাদ নেওয়া যায়। কালী প্রতিমার উচ্চতা প্রায় ১১.৫ ফুট, যা জমিদার বাড়ি থেকে শত শত নারী-পুরুষের শোভাযাত্রার মাধ্যমে মন্দিরে আনা হয়।

আরও পড়ুন: নোয়াখালীতে বিএনপি-শিবির সংঘর্ষে আহত ৪০

সাদুল্যাপুর গ্রামের প্রবীণ ব্যক্তি ও মধুগঞ্জেশ্বরী কালী মাতা মন্দিরের বর্তমান ম্যানেজিং সেবাইত নারায়ণ চন্দ্র সরকার বলেন, “আমি বাপ-দাদার আমল থেকে এই পূজা দেখেছি। আজ থেকে প্রায় ৩৫২ বছর আগে মধুসুদন ভাদুরী নামের এক ব্যক্তি এই পূজা প্রতিষ্ঠা করেন এবং তার নাম অনুসারে মধুগঞ্জেশ্বরী কালী মাতা নামকরণ হয়। পরবর্তীতে জমিদার রমন বিহারী সরকার পূজা পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং সেই ধারাবাহিকতায় আজ আমরা এটি পরিচালনা করছি।”

পূজা পরিচালনা পর্ষদের সদস্য সচিব প্রভাষক নয়ন সরকার বলেন, “এটি একটি অতি প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী কালী পূজা, আমরা এই বংশের পঞ্চম প্রজন্ম। সকল প্রস্তুতি প্রায় শেষ, আশা করছি এবছরের পূজা উৎসব সফলভাবে সম্পন্ন হবে।”

প্রতিমা শিল্পী বিপুল চন্দ্র সরকার জানান, প্রতিমার কাজ প্রায় শেষ, শুধুমাত্র রঙ ও টুকি-টাকি কাজ বাকি আছে। নির্ধারিত সময়ে প্রতিমার কাজ সম্পূর্ণ হবে।

শিবগঞ্জ পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সুবীর দত্ত বলেন, “শ্রীশ্রী মধুগঞ্জেশ্বরী কালী পূজা উত্তরবঙ্গ এবং সমগ্র বাংলাদেশের মধ্যে একটি ব্যতিক্রমধর্মী পূজা। প্রতিবছর এখানে প্রায় ২৫–৩০ হাজার ভক্ত ও দর্শনার্থী অংশগ্রহণ করে।”

উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) জানান, প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী এই কালী পূজা সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে উদযাপন হবে এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সার্বিক সহযোগিতা করবে।