আটাবের বিতর্কিত ধারা বাতিলের দাবিতে গণস্বাক্ষর কর্মসূচি
বাংলাদেশের ট্রাভেল এজেন্সি খাতের স্বার্থবিরোধী কয়েকটি ধারা বাতিল ও ট্রাভেল এজেন্টদের ন্যায্য অধিকার নিশ্চিতের দাবিতে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ সমাবেশ ও গণস্বাক্ষর কর্মসূচি পালন করেছে ‘আটাব সাধারণ সদস্যবৃন্দ’।
রোববার (২৩ নভেম্বর) সকালে রাজধানীর জোনাকি কনভেনশন হলে আটাব সাধারণ সদস্যদের উদ্যোগে আয়োজিত এই প্রতিবাদ সমাবেশ ও গণস্বাক্ষর কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেটসহ বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বিপুল সংখ্যক ট্রাভেল এজেন্সি মালিক অংশগ্রহণ করেন।
আরও পড়ুন: এমডি নিয়োগে কঠোর শর্ত: অভিজ্ঞতার মানদণ্ড কড়াকড়ি করল বাংলাদেশ ব্যাংক
সমাবেশে বক্তারা বলেন, বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের সময় গড়ে ওঠা বিভিন্ন সিন্ডিকেট বন্ধ করতে সরকারকে কঠোর আইন প্রয়োগ করতে হবে, তবে এসব আইন যেন সাধারণ ব্যবসায়ির ক্ষতির কারণ না হয়। অংশগ্রহণকারীরা স্পষ্টভাবে ক্ষোভ জানিয়ে বলেন—নির্বাচিত অঞঅই কমিটি মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার আগেই বাতিল না করা হলে আজকের এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হতো না, এবং ব্যবসাবান্ধব নয় এমন ধারা আইনে যুক্ত হত না। সকলে বিতর্কিত এই ধারাগুলো প্রত্যাহারের দাবী জানান।
সমাবেশে বক্তব্য রাখেন ইমামুদ্দিন, দিদারুল হক, তোহায়া চৌধুরী, লায়ন নুরুল আলম, মহসিন, সানি, সুমন টিপু, গাজী সালাউদ্দিন প্রমুখ। বক্তারা সবাই একযোগে খসড়া আইনের বিতর্কিত ধারা বাতিল করে ট্রাভেল ট্রেডকে রক্ষার দাবি জানান। এ সময় সমাবেশে গণস্বাক্ষর কর্মসূচির মাধ্যমে সংগৃহীত স্বাক্ষরসমূহ সোমবার প্রধান উপদেষ্টার নিকট স্মারকলিপির সাথে সংযুক্ত করে প্রেরণের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
আরও পড়ুন: সাহাবুদ্দিনকে আর্থিক সুবিধা দিতে ডাচ-বাংলার নিত্যনতুন কত কৌশল
সমাবেশে সংগঠনের সাধারণ সদস্যদের পক্ষে কথা বলেন আটাবের সাবেক সভাপতি আবদুস সালাম আরেফ। শুরুতেই তিনি “ট্রাভেল এজেন্সির নিবন্ধন ও নিয়ন্ত্রণ খসড়া আইন”-এর ওপর তীব্র উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, এই খসড়া আইনে কিছু ধারা রয়েছে যা দেশের ট্রাভেল ট্রেডের জন্য চরম ক্ষতিকর। বিশেষ করে অফলাইন ট্রাভেল এজেন্সির জন্য ১০ লক্ষ টাকা জামানতের প্রস্তাব, এক এজেন্সির সাথে অন্য এজেন্সির ক্রয়-বিক্রয় নিষিদ্ধ করা, এবং জেল-জরিমানা বৃদ্ধির প্রস্তাব—সবকিছুই অযৌক্তিক, অবাস্তব ও ব্যবসাবান্ধব নয়। কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশের ট্রাভেল ও ট্যুরিজম খাত ইতিমধ্যেই কঠিন সময় অতিক্রম করছে। এমন আইন প্রণয়ন হলে লাখো মানুষের জীবিকা হুমকির মুখে পড়বে। সরকারের উচিত উদ্যোক্তাদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে একটি গ্রহণযোগ্য নীতি প্রণয়ন করা।
সমাবেশে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ দাবি স্পষ্টভাবে উপস্থাপন করা হয়:
১. অফলাইন ট্রাভেল এজেন্সিদের জন্য ১০ লক্ষ টাকা জামানতের প্রস্তাব বাতিল, যা ক্ষুদ্র-মাঝারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে ব্যবসা থেকে সরিয়ে দেবে।
২. এজেন্সি-টু-এজেন্সি টিকেট ক্রয়-বিক্রয় নিষিদ্ধের বিধান প্রত্যাহার, কারণ এটি যাত্রী সেবা ব্যহত করবে ও ছোট এজেন্সিদের কর্মহীন করবে ও পুরো ট্রেডকে ঝুঁকির মুখে ফেলবে।
৩. অতিরিক্ত জেল ও জরিমানা বৃদ্ধির ধারা বাতিল করে পূর্বের বিধান বহাল রাখা, যাতে অপ্রয়োজনে হয়রানি ও প্রশাসনিক চাপ বৃদ্ধি না পায়।
সমাবেশে আটাবের সাবেক মহাসচিব মিসেস আফসিয়া জান্নাত ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, আমরা অতীতে দায়িত্বে থাকাকালীন সময়ে ট্রাভেল ট্রেডের উপর আরোপিত যেকোনো নেগেটিভ বিষয় দৃঢ়ভাবে প্রতিহত করেছি। আজ দুর্ভাগ্যজনকভাবে যখন ট্রেডের এমন সংকটময় অবস্থা, তখন সরকারের সঙ্গে বার্গেনিং করার মতো শক্তিশালী অঞঅই কমিটি অনুপস্থিত। তিনি আরও অভিযোগ করেন, আটাবের কমিটি বাতিল করে সংগঠনকে দুর্বল করার একটি সিন্ডিকেট-চালিত নীলনকশা বাস্তবায়নের চেষ্টা চলছে, যা পুরো ট্রাভেল শিল্পের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে।





