অবশেষে বদলি হলেও বাতিলের চেষ্টা মাউশির প্রভাবশালী এসিআর সালমার

Sanchoy Biswas
বাংলাবাজার রিপোর্ট
প্রকাশিত: ৮:২৫ অপরাহ্ন, ১০ অগাস্ট ২০২৫ | আপডেট: ৮:২৫ অপরাহ্ন, ১০ অগাস্ট ২০২৫
ছবিঃ সংগৃহীত
ছবিঃ সংগৃহীত

দশ বছর ধরে ঢাকার শিক্ষা দপ্তরে ঘুষ বাণিজ্য, প্রভাব বিস্তার ও রাজনৈতিক মুখোশ বদলের কৌশলে দাপট দেখানো মোছা. ছালমা খাতুন এবার বদলির মুখে পড়েছেন। লালমনিরহাট সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ে তাকে বদলি করা হয়েছে। এই বদলির আদেশ বাতিল করাতে নানা প্রভাব ও তদবিরে ব্যস্ত এই বিতর্কিত অফিস সহকারী।

দশ বছর ধরে ঢাকার শিক্ষা দপ্তরে ঘুষ বাণিজ্য, প্রভাব বিস্তার ও রাজনৈতিক মুখোশ বদলের কৌশলে ‘অঘোষিত সম্রাজ্ঞী’ হয়ে ওঠা মোছা: ছালমাকে গত ২৩ জুলাই লালমনিরহাট সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ে বদলি করা হয়েছে। এ খবরে শিক্ষক সমাজে স্বস্তির ঢেউ নেমেছে।

আরও পড়ুন: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে আগামী ১১ সেপ্টেম্বর (জাকসু) নির্বাচন

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা ঢাকা অঞ্চলের ডেটা এন্ট্রি অপারেটর (স্ব বেতনে: অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর) ছালমার দাপটে বহু শিক্ষক দীর্ঘদিন অতিষ্ঠ ছিলেন। আওয়ামী শাসনামলে নিজেকে ক্ষমতাসীন দলের আত্মীয় দাবি করলেও সরকার পরিবর্তনের পর তিনি বিএনপি ঘরানায় সখ্য গড়ে তোলেন। রাজনৈতিক পরিচয়কে ঢাল বানিয়ে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতি চালিয়ে গেছেন—এ অভিযোগ দীর্ঘদিনের।

গত ২৩ জুলাই বদলির নির্দেশে বলা হয়, ২৭ জুলাইয়ের মধ্যে বর্তমান কর্মস্থল থেকে অবমুক্ত হয়ে নতুন কর্মস্থলে যোগদান করতে হবে। নইলে একই দিন বিকেল থেকে তাৎক্ষণিকভাবে অবমুক্ত গণ্য করা হবে। তবে ৬ আগস্ট পর্যন্তও তিনি নতুন কর্মস্থলে যোগ দেননি। বাংলাবাজার থেকে তার মোবাইলে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, “আমি অসুস্থ, পরে কথা বলব” বলে ফোনের লাইন কেটে দেন। বারবার ফোনে চেষ্টা করলে ও তার মোবাইলে কল রিসিভ করেননি।

আরও পড়ুন: এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার পুনঃনিরীক্ষণের ফল প্রকাশ

তার সবচেয়ে আলোচিত সমালোচিত অভিযোগগুলো হল তাঁর ‘এসিআর বাণিজ্য’ নিয়ে। শিক্ষক-কর্মচারীদের বার্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদন (এসিআর) স্বাক্ষরের জন্য ৩–৫ হাজার টাকা দাবি করতেন তিনি। টাকা না দিলে ফাইল মাসের পর মাস আটকে রাখতেন, ফলে অনেকেই পদোন্নতি ও সিনিয়রিটি থেকে বঞ্চিত হয়েছেন।

এক সরকারি স্কুলের অফিস সহকারী জানান, একসঙ্গে কয়েকটি এসিআর জমা দিতে গেলে ছালমা তাকে অপমান করে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসিয়ে রাখেন এবং প্রতিটি ফাইলের জন্য ৫ হাজার টাকা দাবি করেন। দরকষাকষির পর ৪ হাজার টাকায় মিটিয়ে কাজ সম্পন্ন হয়। তাঁর ভাষ্য, “স্যারদের বলে কোনো লাভ নেই, ডিজি আমরা বানাই”—এভাবেই দাপট দেখাতেন ছালমা।

বিশ্বস্ত সূত্র জানায়, বদলি ঠেকাতে তাঁর পক্ষ হয়ে এক যুবদল নেতার পরিচয়ে পাবনার দুই দালাল মাউশির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের প্রভাবিত করার চেষ্টা চালান। তবে মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আজাদ খান ও পরিচালক ড. কে. এম. এ. এম. সোহেল স্পষ্ট জানিয়ে দেন—দুর্নীতির পক্ষে কোনো প্রভাবই গ্রহণযোগ্য নয়, আপোষ নেই।

২০১৪ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ঢাকার শিক্ষা অঞ্চলে অফিস সহকারী পদে থেকে ছালমা দাপট দেখিয়েছেন। ২০২১ সালে নানা অভিযোগে তদন্তে দোষী প্রমাণিত হয়ে ঢাকার একটি স্কুলে বদলি হলেও ২০২৪ সালের আগস্টে এক উপপরিচালকের সহায়তায় ফের ডিডি অফিসে ফিরে আসেন এবং আগের চেয়ে আরও ভয়ঙ্করভাবে দুর্নীতির রাজত্ব বিস্তার করছেন তিনি।

রাজধানীর একটি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী বলেন, “এমন দাপট সচিবালয়েও দেখা যায় না। শুধু বদলি নয়—তদন্ত ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত।”

মাউশি অফিসের কর্তৃপক্ষরা জানিয়েছে, শিক্ষা প্রশাসনকে দুর্নীতিমুক্ত রাখতে সব ধরনের অনিয়মের বিরুদ্ধে গঠনমূলক তদন্ত ও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।