তেজগাঁও কলেজে পদোন্নতি-বৈষম্য: বেআইনিভাবে জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন, উপেক্ষিত এমফিল, পিএইচডি ডিগ্রিধারী

Sanchoy Biswas
বাংলাবাজার রিপোর্ট
প্রকাশিত: ১১:৫৬ পূর্বাহ্ন, ০৭ নভেম্বর ২০২৫ | আপডেট: ২:০৬ অপরাহ্ন, ০৭ নভেম্বর ২০২৫
ছবিঃ সংগৃহীত
ছবিঃ সংগৃহীত

বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ বেসরকারি কলেজ হিসেবে পরিচিত তেজগাঁও কলেজে অভ্যন্তরীণ শিক্ষকদের পদোন্নতিতে অনিয়ম এবং বৈষম্যের অভিযোগ উঠেছে। কোনো নীতিমালা অনুসরণ না করে বেআইনিভাবে পদোন্নতির অভিযোগ উঠেছে অধ্যক্ষ এবং গভর্নিং বডির বিরুদ্ধে।

গত এপ্রিলে অভ্যন্তরীণ শিক্ষকদের পদোন্নতির জন্য কলেজের বিদ্যমান পদোন্নতি নীতিমালা অনুযায়ী সহযোগী অধ্যাপক এবং সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতির জন্য দরখাস্ত আহ্বান করা হয়।

আরও পড়ুন: ঢাবিতে বিশেষ বিবেচনায় সিট বরাদ্দ: প্রশ্ন তুললেন হল সংসদের নেতারা

সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে পদোন্নতির লক্ষ্যে আবেদন জমা দেন ২৩ জন এবং সহকারী অধ্যাপক পদের জন্য আবেদন জমা দেন ৪৩ জন। আবেদনের প্রেক্ষিতে ১৮.৭.২৫ তারিখে সহযোগী অধ্যাপক পদে প্রার্থীদের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করা হয় এবং ২৪ ও ২৭ জুলাই সহকারী অধ্যাপক পদের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করা হয়।

২ আগস্ট জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে পদোন্নতি দেওয়া হয় ক্রমিক ১, ২, ৪, ৬, ৭ এবং ২২ নম্বর প্রার্থীদের। ২২ নম্বর সিরিয়ালে থাকা প্রার্থী মীর লুৎফর রহমানের কলেজ পদোন্নতি নীতিমালায় চাহিত চাকরির অভিজ্ঞতা ১৫ বছর পূর্ণ হয়নি, তারপরেও তাকে বিধি লঙ্ঘন করে পদোন্নতি দেওয়া হয়।

আরও পড়ুন: ঢাবি উপাচার্যের সঙ্গে আয়ারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত ও উত্তর আয়ারল্যান্ডের প্রথম পুলিশ ন্যায়পালের সৌজন্য সাক্ষাৎ

উপেক্ষিত হন ক্রমিক ৩-তানজিমা হিলালী, ৫-ড. মোহাম্মদ শহিদুল ইসলামসহ ৮ থেকে ২১ ক্রমিকের শিক্ষকরা। এই ২৩ জন প্রার্থীর মধ্যে ড. মোহাম্মদ শহিদুল ইসলাম একমাত্র প্রার্থী যিনি এমপিওভুক্ত, পিএইচডি ডিগ্রিধারী এবং আন্তর্জাতিক জার্নালে যার ১০টি প্রকাশনা রয়েছে।

সহকারী অধ্যাপক হিসেবে পদোন্নতি দেওয়া হয় ৭ জনকে, যাদের জ্যেষ্ঠতার ক্রম ৮৯-শামীম আক্তার খান, ৯২-সৈয়দা সামজিলা আতিক, ১০৬-মোঃ এরশাদ আলী রহমান, ১১৩-নওরিন সাজ্জাদ, ১১৯-মোঃ আসাদুজ্জামান, ১২৮-এবাদত হোসেন, ১৩২-এবিএম ফয়জুল মুবিন। পদোন্নতির ক্ষেত্রে জ্যেষ্ঠতার নীতিমালা ও পদোন্নতি নীতিমালা লঙ্ঘন করা হয়েছে।

এসব বিষয় নিয়ে কলেজের সাধারণ শিক্ষক এবং পদোন্নতি বঞ্চিতদের মধ্যে মারাত্মক অসন্তোষ চলছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে পদোন্নতি বঞ্চিত একজন শিক্ষক বাংলাবাজার পত্রিকাকে বলেন, “ড. শহিদুল ইসলাম যেহেতু ফ্যাসিস্ট দল আওয়ামী লীগ করেন, তাই সকল যোগ্যতা থাকার পরও তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়নি। কিন্তু আমরা বাকিরা কেন নিয়ম অনুযায়ী পদোন্নতি পাব না।”

তিনি আরও বলেন, “পদোন্নতি সংক্রান্ত যা সিদ্ধান্ত হয়েছে তা সম্পূর্ণ বেআইনি এবং কলেজের নিয়মকানুন লঙ্ঘন করা হয়েছে।”

দ্বিতীয় ধাপে ২৮ আগস্ট আবার সহযোগী অধ্যাপক ও সহকারী অধ্যাপক পদে মোট ৯ জনকে পদোন্নতি দেওয়া হয়। এর মধ্যে নাসরিন আক্তার সহযোগী অধ্যাপক হয়েছেন, যার পদোন্নতির শর্ত পূরণ হয়নি।

আবার তৃতীয় ধাপে ৯ অক্টোবর চুপিসারে আরও ৯ জনকে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে পদোন্নতি দেওয়া হয়, এখানেও নীতিমালা লঙ্ঘন করা হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শিক্ষক বলেন, “পদোন্নতি নিয়ে কলেজে হযবরল অবস্থা। প্রশাসন এত অনিয়ম করছেন যে, পদোন্নতির চিঠি প্রকাশ্যে দিতে লজ্জা পায়। হায়রে কলেজ, হায়রে প্রশাসন।”

এ বিষয়ে অধ্যক্ষ মহোদয়কে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি কথা বলতে রাজি হননি।