ভূমিকম্প আতঙ্কে ঢাবি-ছবি বন্ধ ঘোষণা

হল ছাড়ছেন অনেকে, অনীহা কিছু শিক্ষার্থী

Sanchoy Biswas
বাংলাবাজার রিপোর্ট
প্রকাশিত: ৭:১২ অপরাহ্ন, ২৩ নভেম্বর ২০২৫ | আপডেট: ৭:১২ অপরাহ্ন, ২৩ নভেম্বর ২০২৫
ছবিঃ সংগৃহীত
ছবিঃ সংগৃহীত

গত কয়েকদিন ধরে ভূমিকম্প আতঙ্কে ভুগছেন দেশবাসী। পাঁচ দশমিক সাত মাত্রার ভূমিকপের ভয়াবহতায় রাজধানীতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বেশ কিছু ভবন। এতে দেশজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে, যেখানে রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৫.৭ এবং কেন্দ্রস্থল ছিল নরসিংদীর মাধবদী। এটি শুধুমাত্র দেশে নয়, বরং পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেও অনুভূত হয়েছে।

এরই মধ্যে সারা দেশে ভূমিকপের পর উদ্ভূত জরুরি পরিস্থিতিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) এবং পুরান ঢাকার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তে অনেকে স্বস্তি প্রকাশ করলেও শিক্ষার্থীদের মধ্যে রয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। সাময়িকভাবে হল ত্যাগের নির্দেশ নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজন হলেও এটি আবাসন সংকটের দীর্ঘমেয়াদি সমাধান নয়।

আরও পড়ুন: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬টি হল পরিদর্শন করেছেন বুয়েটের বিশেষজ্ঞরা

এর আগে, শনিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সাইফুদ্দিন আহমেদ বলেন, রোববার বিকাল ৫টার মধ্যে শিক্ষার্থীদের হল ছেড়ে দিতে হবে। হলগুলো ঠিকঠাক করে পরে বিশ্ববিদ্যালয় আবার চালু করা হবে। তিনি বলেন, হলের রুমে রুমে গিয়ে (ভূমিকপের কারণে হওয়া) ড্যামেজ অ্যাসেস করতে হবে। ইঞ্জিনিয়াররা বলেছেন চার সপ্তাহ বন্ধ রাখতে হবে, তবে বিশ্ববিদ্যালয় দুটি সপ্তাহ পরীক্ষা করবে।

২১ নভেম্বর সারা দেশে স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ ভূমিকপ অনুভূত হয়। এ ঘটনায় ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় ১০ জন মারা যান। আহত হয়েছেন কয়েকশ’ মানুষ। ভূমিকপটির উৎপত্তিস্থল ছিল নরসিংদী। এর পর শনিবার সকাল ১০টা ৩৬ মিনিটে নরসিংদীর পলাশ উপজেলায় ৩ দশমিক ৩ মাত্রার ভূমিকপ রেকর্ড করা হয়। শনিবার সন্ধ্যা ৬টা ৬ মিনিটে একটি ভূ-কম্পন হয়, যার মাত্রা ছিল ৩ দশমিক ৭। উৎপত্তিস্থল ছিল রাজধানীর বাড্ডা। পরে আবহাওয়া অধিদফতর জানায়, প্রায় একই সময়ে এক সেকেন্ড ব্যবধানে আরও একটি কম্পন হয়েছে, যার মাত্রা ছিল ৪ দশমিক ৩। উৎপত্তিস্থল ছিল নরসিংদী।

আরও পড়ুন: দাবি আদায়ে শিক্ষকদের আল্টিমেটাম: আজ থেকে লাগাতার কর্মবিরতি

এদিকে, রোববার থেকে হল ছাড়তে শুরু করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। সকাল থেকেই প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে বিভিন্ন হলের শিক্ষার্থীরা হল ত্যাগ করছেন। পরপর দুইদিনে ৪ দফা ভূমিকপ পরবর্তী জরুরি পরিস্থিতিতে আগামী ৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ও হল ত্যাগের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। ভূমিকপের আতঙ্কে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা, তবে মিশ্র প্রতিক্রিয়াও রয়েছে।

অনেক শিক্ষার্থী বলছেন, এমন পরিস্থিতিতে বাধ্যতামূলক হল ত্যাগের নির্দেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের আবাসন সংকটের স্থায়ী সমাধান নয়। বিশেষ করে বাইরে থাকবার সুযোগ বা বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় যাদের টিউশন বা অন্য গুরুত্বপূর্ণ কাজ আছে তারা বিপাকে পড়েছেন।

কবি জসীম উদ্দীন হলের আবাসিক শিক্ষার্থী ফাইয়াজ উদ্দিন বলেন, শিক্ষার্থীরা আতঙ্কিত। বারবার ভূমিকপ আমাদের মনে ভিতি জন্ম দিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নির্দেশনা অনুযায়ী হল ছাড়ছি। তারা যেসব কাজ করতে চেয়ে তা ১৫ দিনে করে দেখাক।

জহুরুল হক হলের শিক্ষার্থী সাব্বিরুল ইসলাম বলেন, ঢাবির অনেক শিক্ষার্থী হল ছাড়তে চায় না। অনেকের কাছেই হল বাদে ঢাকায় থাকার কোনো জায়গা নেই। নিজেদের ক্লাস পরীক্ষা বন্ধ হলেও অনেকের টিউশন, চাকরি, প্রি-শিডিউলড কাজের কারণে তারা এখন হল ছাড়ার নির্দেশে সংকটে আছে।

এদিকে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) বিভাগীয় শহরগুলোর উদ্দেশ্যে বাস সার্ভিস চালু করেছে। অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী আছিয়া আক্তার রেমিজা বলেন, অনেক শিক্ষার্থীর বাড়ি যাওয়ার জায়গা নেই। যাদের বাড়ি শহরে, তাদের জন্য হল তুলনামূলক বেশি নিরাপদ।

মহসিন হল প্রাধ্যক্ষ ড. মো. সিরাজুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, শিক্ষার্থীদের মতো তাদের অভিভাবকরাও ভীষণ উদ্বিগ্ন। তাই সকাল ৫টার মধ্যেই সবাইকে হল ছাড়তে বলা হয়েছে।

ডাকসুর ছাত্র পরিবহন সম্পাদক আসিফ আব্দুল্লাহ বলেন, বিভাগীয় শহরগুলোতে বাস সার্ভিস দেওয়া শুরু হবে। শিক্ষার্থীদের প্রয়োজন ও চাহিদার ভিত্তিতে বাস বরাদ্দ করা হবে।

প্রভোস্ট স্ট্যান্ডিং কমিটির সূত্রে জানা গেছে, শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার বিষয়ে বেলা ১২টা ৯ মিনিটে বৈঠক চলছে। সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হলে তা জানানো হবে। ততক্ষণ পর্যন্ত হল ছাড়ার নির্দেশ বহাল থাকবে।

ঢাবির পরিবহন ম্যানেজার কামরুল হাসান জানান, শিক্ষার্থীদের বাড়তি চাহিদা সামাল দিতে প্রায় সব রুটে ট্রিপ সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। তবে রবিবার থেকে শিক্ষার্থীদের জন্য কোনও বাস সার্ভিস চালু থাকবে না।

স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. মাজহারুল ইসলাম শাহীন এবং ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. কামরুল ইসলাম জানান, দেশের ভূমিকপ পরিস্থিতি বিবেচনা করে কলেজ বন্ধ রাখা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা বন্ধ থাকায় পাঁচ দিনের ছুটি দেওয়া হয়েছে।