ব্যাংক আমানতকারীদের সুরক্ষায় ‘আমানত সুরক্ষা অধ্যাদেশ জারি

Any Akter
বাংলাবাজার ডেস্ক
প্রকাশিত: ১২:২২ অপরাহ্ন, ২৪ নভেম্বর ২০২৫ | আপডেট: ১২:২২ অপরাহ্ন, ২৪ নভেম্বর ২০২৫
ছবিঃ সংগৃহীত
ছবিঃ সংগৃহীত

দেশের ব্যাংকিং খাতে আমানতকারীদের সুরক্ষা ও জনআস্থা বৃদ্ধির লক্ষ্যে সরকার ‘আমানত সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৫’ জারি করেছে। আর্থিক খাতের স্থিতিশীলতার গুরুত্ব বিবেচনায় সংবিধানের ৯৩(১) অনুচ্ছেদের ক্ষমতাবলে রাষ্ট্রপতি এ অধ্যাদেশ প্রণয়ন করেন। এর মাধ্যমে ‘ব্যাংক আমানত বিমা আইন, ২০০০’ রহিত হয়ে নতুন ও যুগোপযোগী আইন কার্যকর হলো।

রবিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের ডিপোজিট ইন্স্যুরেন্স বিভাগ থেকে প্রকাশিত এক প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানানো হয়।

আরও পড়ুন: ব্যাংক বন্ধ হলেও তাৎক্ষণিকভাবে সর্বোচ্চ ২ লাখ টাকা ফেরত পাবেন গ্রাহক

অধ্যাদেশ অনুযায়ী, ব্যাংক কোম্পানি ও ফাইন্যান্স কোম্পানিতে রাখা আমানতের সুরক্ষা নিশ্চিত করাই নতুন আইনের মূল উদ্দেশ্য।

 ‘সুরক্ষিত আমানত’ দ্রুত ও নিশ্চিতভাবে ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা থাকবে আমানত সুরক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের আওতায় পৃথক ‘আমানত সুরক্ষা বিভাগ’ গঠন করা হবে।

আরও পড়ুন: মাস্টারকার্ড প্লাটিনাম মাল্টিকারেন্সি ডেবিট কার্ড চালু করল ব্র্যাক ব্যাংক

এই বিভাগ করবে— সদস্য প্রতিষ্ঠান থেকে নিয়মিত প্রিমিয়াম সংগ্রহ তহবিল ব্যবস্থাপনা, পরিদর্শন ও তদারকি, আমানত পরিশোধ, সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা কার্যক্রম পরিচালনা।

নতুন আইনে ব্যাংক ও ফাইন্যান্স কোম্পানির জন্য দুটি স্বতন্ত্র আমানত সুরক্ষা তহবিল গঠনের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

এই তহবিল গঠিত হবে— সদস্য প্রতিষ্ঠানের প্রদত্ত প্রিমিয়াম, জরিমানা, বিনিয়োগ আয় এবং অন্যান্য অনুমোদিত উৎস থেকে তহবিলের প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করবে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ, যা এই আইনের অধীনে ‘ট্রাস্টি বোর্ড’ হিসেবে বিবেচিত হবে।

অধ্যাদেশ অনুযায়ী— নতুন লাইসেন্সপ্রাপ্ত ব্যাংক ও ফাইন্যান্স কোম্পানিগুলোকে নির্ধারিত হারে প্রারম্ভিক প্রিমিয়াম জমা দিতে হবে বিদ্যমান সব ব্যাংক কোম্পানি স্বয়ংক্রিয়ভাবে এই আইনের সদস্য হিসেবে বিবেচিত হবে ফাইন্যান্স কোম্পানিগুলো ২০২৮ সালের ১ জুলাই থেকে সদস্যপদে অন্তর্ভুক্ত হবে ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে ঝুঁকিভিত্তিক প্রিমিয়াম আদায় করা হবে, অর্থাৎ ঝুঁকি বেশি হলে প্রিমিয়ামও বাড়তে পারে

অধ্যাদেশে কিছু নির্দিষ্ট শ্রেণির আমানতকে সুরক্ষার বাইরে রাখা হয়েছে, যেমন—সরকারি সংস্থার আমানত, বিদেশি ও আন্তর্জাতিক সংস্থার কিছু আমানত ইত্যাদি।

অন্যদিকে—সাধারণ ব্যক্তি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের আমানত ‘সুরক্ষাযোগ্য’ হিসেবে গণ্য হবে নির্ধারিত সীমার মধ্যে এসব আমানত আমানত সুরক্ষা তহবিলের মাধ্যমে সুরক্ষিত থাকবে।

কোনো ব্যাংক বা ফাইন্যান্স কোম্পানির অবসায়ন বা রেজুলেশ প্রক্রিয়া শুরু হলে—

আমানত সুরক্ষা বিভাগ সরাসরি সুরক্ষিত আমানত পরিশোধ করবে প্রয়োজনে রেজুলেশন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে ব্রিজ ব্যাংক গঠন বা তৃতীয় পক্ষের কাছে সম্পদ ও দায় স্থানান্তর করে আমানত সুরক্ষার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা যাবে।

আইন অনুযায়ী, বাংলাদেশ ব্যাংককে ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে— দেশি-বিদেশি নিয়ন্ত্রক সংস্থার সঙ্গে সমঝোতা স্মারক (MoU) সই করতেতথ্য বিনিময় করতে কারিগরি সহযোগিতা গ্রহণ করতে এবং আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসরণ করে আমানত সুরক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করতে।

নতুন আইন কার্যকর হওয়ায়—আর্থিক খাতে ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা ও সংকট মোকাবিলার সক্ষমতা বাড়বে ব্যাংকিং খাতে আমানতকারীদের সুরক্ষা ও জনআস্থা আরও বৃদ্ধি পাবে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ও ব্যাংকিং খাতে শৃঙ্খলা রক্ষায় এই অধ্যাদেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।