গ্রেপ্তার প্রক্রিয়া ও আটকাদেশে সরকার বিব্রত
মডেল মেঘলার আটকেই ডিবি প্রধান রেজাউল মল্লিক প্রত্যাহার

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার ও গোয়েন্দা শাখার প্রধান রেজাউল করিম মল্লিককে রোববার রাতে হঠাৎ করে গোয়েন্দা থেকে প্রত্যাহার করে সদর দপ্তরে সংযুক্ত করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় গণমাধ্যমে সরব পুলিশের গুরুত্বপূর্ণ এই প্রভাবশালী কর্মকর্তাকে প্রত্যাহার করে কোথাও পদায়ন না করে অ্যাটাস্ট করে রাখার বিষয়টি নিয়ে সর্বত্র তোলপাড় তৈরি হয়েছে। কি কারনে হঠাৎ করে এই প্রভাবশালী কর্মকর্তাকে প্রত্যাহার করা হলো।
অনুসন্ধানে জানা যায়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশেই ডিবি প্রধান রেজাউল করিম মল্লিককে প্রত্যাহার করে সংযুক্ত করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার সেখ সাজ্জাদ আলী। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও সরকারের শীর্ষ পর্যায় সূত্র নিশ্চিত করেছে সম্প্রতি গ্রেপ্তার হওয়া আলোচিত মডেল মেঘলা আলমের আটক প্রক্রিয়া যথাযথভাবে আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ না করায় সরকারের শীর্ষ মহল চরম ক্ষুব্ধ হয়। মেঘলা আলমের গ্রেপ্তারের নিন্দা জানিয়ে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনসহ বিভিন্ন সংগঠন নিন্দা জানিয়েছে। করে তাকে ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনে আটকাদের দেয়ার বিরুদ্ধে।
আরও পড়ুন: বহু বছরের গোপন প্রেমিকের কথা স্বীকার করলেন জয়া
এক সংবাদ সম্মেলনে আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা ডঃ আসিফ নজরুল সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্পষ্টভাবেই বলেছেন মডেল মেঘলা আলমের গ্রেপ্তার প্রক্রিয়া সঠিক হয়নি। মেঘলা আলম একেবারে নির্দোষ না। তার গ্রেফতার ও আটকের প্রক্রিয়া যথাযথভাবে অনুসরণ করেনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। বিষয়টি অনুসন্ধান করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য অবহিত করা হয়েছে। তারা এজন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন। এদিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশের সদর দপ্তর সূত্রের একই বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে।
আইন উপদেষ্টা বলেন, মেঘলা আলমের ব্যাপারে কিছু তদন্ত পুলিশ করছে উনার বিরুদ্ধে কিছু সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আছে তাকে বিশেষ ক্ষমতা আইনে যে প্রক্রিয়ায় গ্রেফতার করা হয়েছে সেটি সঠিক নয় উনার যদি কোন অপরাধ তাকে সেই অপরাধের পরিপ্রেক্ষিতে যথাযথভাবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। তিনি আরো বলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ডিটেনশন নিয়ে প্রচুর বিতর্ক তৈরি হয়েছে এটা নিয়ে আমরা সরকারের উচ্চ পর্যায়ে মিটিং করেছি এ ব্যাপারে বিভিন্ন মানবাধিকার প্রতিষ্ঠান ও অন্যদের বক্তব্যের বিষয়ে আমরা সচেতন আছি। উল্লেখ্য বাংলাদেশের আলোচিত মডেল মিস আথ বাংলাদেশ বিজয়ী মেঘলা আলমকে গত ৭ এপ্রিল তার বসুন্ধরার আবাসিক এলাকার বাসা থেকে গোয়েন্দা পুলিশ আটক করে। আটকের দুইদিন পর গত ১০ এপ্রিল ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তার বিরুদ্ধে ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনে ৩০ দিনের আটকাদেশ দেয়।
আরও পড়ুন: ফেসবুকে তিশার উদ্দেশে শাওন বললেন, ‘নাটক কম করো পিও’
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মডেল মেঘলা আলমকে ৭ এপ্রিল গোয়েন্দা পুলিশ আটক করলেও আদালতে হাজির করেনি। তিনদিন পর দশ এপ্রিল ঢাকার মহানগর বিচারিক আদালতে মেঘলা আলমকে হাজির করে ৩০ দিনের আটক আদেশ দেয় গোয়েন্দা পুলিশ। জাতীয় আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন , আইনবিদ ও অপরাধ বিশেষজ্ঞরা এক্ষেত্রে ই আইনি প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। গ্রেফতারের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে হাজির করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে ফৌজদারী কার্যবিধিতে। এক্ষেত্রে তার ব্যতিক্রম করে গুরুতর অপরাধ করা হয়েছে। দ্বিতীয়তঃ আটক মেঘলার বিরুদ্ধে বিদেশী রাষ্ট্রদূত ও পুলিশের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকার পরও নিয়মিত মামলা না নিয়ে কেন বিতর্কিত হাজার ১৯৭৪ সালের বহুল বিশেষ ক্ষমতা আইনের ব্যবহার করা হয়েছে।
গত ৩০ বছর ধরে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী এই আইনটির ব্যবহার করে নাই। কালো আইন হিসেবে চিহ্নিত করে ৭০ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনটি বাতিলের জন্য আমাদের দেশের সর্ব মহলে অক্ষমত রয়েছে। মেঘলা আলমের গ্রেপ্তার প্রক্রিয়া নিয়ে আইনের ব্যতিক্রম হওয়ায় দেশি-বিদেশি সমালোচনার মুখে সরকারের শীর্ষ কর্তৃপক্ষের নির্দেশনাতেই গোয়েন্দা প্রধান রেজাউল করিম মল্লিক কি প্রত্যাহার করা হয়।