ইসরায়েলের প্রধান বিমানবন্দরে ভয়াবহ ক্ষেপণাস্ত্র হামলা

ইসরায়েলের তেল আবিবে অবস্থিত দেশটির প্রধান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর বেন গুরিয়নে ভয়ানক এক হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইরান সমর্থিত ইয়েমেনি বিদ্রোহী গোষ্ঠী হুতি। এতে ২ জন ইসরায়েলি সেনা নিহতের পাশাপাশি বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। এছারাও বিমানবন্দরের রানওয়ে কাঠামো এবং একটি যানবাহন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
রোববার (৪ মে) এ হামলার তথ্য নিশ্চিত করেছে টাইম অব ইসরাইয়েলসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গণমাধ্যম। হামলার বেশ কয়েকটি ভিডিও ইতোমধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও।
আরও পড়ুন: ভারতের বিপক্ষে রায় আন্তর্জাতিক আদালতের, স্বাগত জানাল পাকিস্তান
গণমাধ্যমগুলোর প্রতিবেদন অনুযায়ী, রোববার সকালে ইসরায়েলের মধ্যাঞ্চলে হঠাৎ করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার সতর্কতা সাইরেন বেজে ওঠে। কিছুক্ষণের মধ্যেই জানা যায়, ইয়েমেন থেকে ছোড়া বেশ কয়েকটি ক্ষেপণাস্ত্রের মধ্যে একটি তেলআবিবের বেন গুরিয়ন বিমানবন্দরের কাছেই আঘাত হেনেছে। এঘটনায় ইতোমধ্যে বিমানবন্দরের সব ফ্লাইট স্থগিত করা হয়েছে।
ইসরায়েলি মিডিয়ার খবর অনুযায়ী, হামলার সময় মধ্য ইসরায়েলজুড়ে সাইরেন বেজে ওঠে এবং লক্ষ লক্ষ মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে চলে যায়।
আরও পড়ুন: গাজায় ইসরায়েলি হামলায় একদিনে ৬৯ জন নিহত, মোট প্রাণহানি ৬০ হাজার ছাড়াল
অনলাইনে প্রচারিত আঘাতের স্থানের ভিডিওতে দেখা গেছে, ক্ষেপণাস্ত্রটি বিমানবন্দরের ঘেরের ভেতরে একটি সংযোগকারী রাস্তায় আঘাত করেছে। পাশের রাস্তায় কিছু ধ্বংসাবশেষ ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে।
এদিকে, হুথিরা তাৎক্ষণিকভাবে এই হামলার বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। তবে গাজার বিরুদ্ধে যুদ্ধের কারণে ইসরায়েলি শহরগুলোতে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোন হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইয়েমেনের সশস্ত্র আন্দোলনটি।
ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীও (আইডিএফ) নিশ্চিত করেছে, বেন গুরিওন বিমানবন্দর এলাকায় আঘাত হানা ইয়েমেনি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রটি প্রতিহত করতে ব্যর্থ হয়েছে তারা। বিমান বাহিনীর আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার এ ব্যর্থতায় তদন্তও শুরু করেছে তারা।
পাশাপাশি আইডিএফের এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, বিস্ফোরণের প্রভাবের বিষয়ে রিপোর্ট পাওয়া গেছে এবং দুই সেনা সদস্য নিহত ও বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। তদন্ত চলছে। বর্তমানে নিরাপত্তা বাহিনী ও অনুসন্ধান দল ঘটনাস্থলে অভিযান পরিচালনা করছে।
আঞ্চলিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, ইয়েমেন যদি সত্যিই হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে ইসরাইলের অভ্যন্তরে আঘাত হানে, তাহলে তা এক নতুন সামরিক বাস্তবতার সূচনা করবে। ইসরায়েলের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা যেমন ‘আয়রন ডোম’, ‘ডেভিড’স স্লিং’ বা ‘অ্যারো’ প্রযুক্তি সাধারণত সাবসনিক বা সুপারসনিক গতির ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধে সক্ষম। কিন্তু হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করা এখনো অনেক দেশের জন্যই কঠিন।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ইসরায়েলের বাণিজ্যিক, কূটনৈতিক ও সামরিক দৃষ্টিকোণ থেকে বেন গুরিয়ন বিমানবন্দর একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। সেখানে এমন একটি হামলা ইসরায়েলের জাতীয় মর্যাদা ও নিরাপত্তার ওপর সরাসরি আঘাত। এই হামলা কেবল ইসরায়েলের ভেতরের নিরাপত্তার প্রশ্ন নয়; এটি একটি বৃহৎ আঞ্চলিক সংকটের ইঙ্গিত, যেখানে ইয়েমেন, লেবানন, ইরানসহ একাধিক পক্ষ জড়িত হতে পারে। অন্যদিকে ইয়েমেনি হামলার প্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্র, জর্ডান, মিসর এবং ইউরোপীয় শক্তিগুলোর মধ্যেও উদ্বেগ ক্রমাগত বাড়ছে। কারণ, এটি মধ্যপ্রাচ্যকে আরও অনিরাপদ ও অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে।
গাজা উপত্যকার ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানিয়ে ২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে লোহিত সাগর, আরব সাগর, বাবেল মান্দেব প্রণালী ও এডেন উপসাগর দিয়ে চলাচলকারী ইসরায়েল ও এর মিত্র দেশগুলোর জাহাজ লক্ষ্য করে হামলা চালিয়ে আসছে হুতিরা। প্রায় ১৫ মাসের সংঘাতের পর চলতি বছরের জানুয়ারিতে গাজায় যুদ্ধবিরতি ঘোষণার পর হুতিরাও হামলা স্থগিত করে। তবে গত মাসে ইসরাইল নতুন করে গাজায় হামলা শুরু করলে আবারও ইসরায়েল ও সাগরে পশ্চিমা জাহাজ লক্ষ্য করে হামলা শুরু করে হুতিরা।
হুতিদের এসব হামলার প্রতিক্রিয়ায় নিয়মিত তাদের অবস্থান লক্ষ্য করে ইয়েমেনেও হামলা চালিয়ে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল। হুতি বাহিনীর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত ১৫ মার্চ থেকে এ পর্যন্ত ইয়েমেনে ১ হাজার ২০০টিরও বেশি বিমান হামলা চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। দেড় হাজারেরও বেশি মানুষ হতাহত হয়েছেন এসব হামলায়।