রাস্তা নেই, দাঁড়িয়ে আছে ৫৭ লাখ টাকার সেতু

Sanchoy Biswas
সনজিত কর্মকার, চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ৫:০৩ অপরাহ্ন, ২৭ নভেম্বর ২০২৫ | আপডেট: ৬:১৫ অপরাহ্ন, ২৮ নভেম্বর ২০২৫
ছবিঃ সংগৃহীত
ছবিঃ সংগৃহীত

চুয়াডাঙ্গা আলমডাঙ্গা উপজেলার কালিদাসপুর ইউনিয়নের আসাননগর ও বকশিপুর গ্রামের মধ্যে দিয়ে বয়ে যাওয়া কুমার নদের ওপর সেতু ৫৬ লাখ ৮৯ হাজার টাকা খরচ করে নির্মাণ করা হয়েছে। কিন্তু সেতুটির দুই পাশে নেই কোনো রাস্তা। সে কারণে এ সেতু জনসাধারণের কোনোই কাজে আসছে না। রাস্তাবিহীন সেতুটি কেন বা কার স্বার্থে নির্মাণ করা হয়েছে তার উত্তর খুঁজে পাচ্ছে না এলাকাবাসী।

জানা গেছে, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের কালভার্ট কর্মসূচির আওতায় কুমার নদের ওপর ৬০ মিটার দৈর্ঘ্যের সেতু নির্মাণের কাজ দেওয়া হয় চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান শরিফুল ইসলাম ট্রেডার্সকে। বরাদ্দ ধরা হয় ৫৬ লাখ ৮৯ হাজার টাকা। ২০১৬ সালের ডিসেম্বর মাসে কাজ শুরু হয় এবং ২০১৭ সালের জুন মাসে সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ হয়। তবে সংযোগ সড়কের কাজ প্রায় ৯ বছরেও শেষ হয়নি। এদিকে বরাদ্দকৃত অর্থ দিয়ে নদীর ওপর ৬০ ফুট লম্বা সেতুর ৯০ শতাংশ কাজ সমাপ্ত হয়েছে। তবে বাকি কাজ অসমাপ্ত রেখেই বরাদ্দকৃত অর্থ উত্তোলন করা হয়েছে। বর্তমানে সেতুর মুখে মাটি ভরাটসহ নদী শাসনের কাজও অসমাপ্ত রয়েছে। এ সমস্যাগুলো সমাধান না হলে ওই এলাকার স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী, কৃষিপণ্য পরিবহন ও রোগী বহনসহ অন্যান্য কাজে মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এমনকি গ্রামীণ মানুষের আর্থ-সামাজিক অবস্থা ও জীবনযাত্রার মান উন্নত হচ্ছে না।

আরও পড়ুন: কৃষক দল নেতা খন্দকার নাসিরের অপকর্মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে তারেক রহমানের কাছে মহিলা দলনেত্রীর আবেদন

সেতুর দুই মুখে সংযোগ সড়ক তৈরি হলে আলমডাঙ্গার প্রায় ১০টি গ্রামের মানুষ এ সেতুর ওপর দিয়ে যাতায়াত করতে পারবে। অন্যথায় আলমডাঙ্গা শহরে যেতে ১০ কিলোমিটার বেশি পথ পাড়ি দিতে হবে।

স্থানীয়রা জানান, সেতুটি নির্মিত হওয়ার পর যাতায়াতের নতুন সুযোগ তৈরি হবে। কিন্তু বছরের পর বছর সড়ক না থাকায় সেতুটি পরিণত হয়েছে অব্যবহৃত কাঠামোতে। এ ওপর শুকানো হচ্ছে গরুর গোবর। রাস্তাবিহীন সেতুটি কেন বা কার স্বার্থে নির্মাণ করা হয়েছে তার উত্তর খুঁজে পাচ্ছে না।

আরও পড়ুন: ধামরাইয়ে পার্কিং করা যাত্রীবাহী বাসে রহস্যজনক আগুন

সরেজমিনে দেখা গেছে, কালিদাসপুর ও ডাউকি ইউনিয়নে বসবাসকারীরা প্রায় ৫ কিলোমিটার ঘুরে আলমডাঙ্গায় যাতায়াত করছে। সেতুটি চালু হলে একই রুটে যাতায়াত করতে মাত্র ১০ মিনিট লাগবে। এছাড়াও উপজেলার একমাত্র ব্যক্তি মালিকানাধীন বৃদ্ধাশ্রম ও একটি মাদরাসা আসাননগর-চর শ্রীরামপুর এলাকার মধ্যবর্তী স্থানে রয়েছে। রাস্তা নির্মাণ হলে যাতায়াতের সুবিধা বাড়বে।

আলমডাঙ্গা উপজেলার বকশিপুর গ্রামের কৃষক নজরুল ইসলাম জানান, সেতু থাকলেও সংযোগ সড়ক না থাকার কারণে মাঠ থেকে ফসল কেটে আনতে অনেক কষ্ট হয়। বাড়তি খরচ লাগে। মাঠজুড়ে ফসল আছে, কিন্তু আমরা তা বাজারে পৌঁছে দিতে পারছি না।

আসাননগর গ্রামের বাবুল হোসেন জানান, সেতুর দুই পাশের মানুষের জন্য যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হতো, কিন্তু সংযোগ সড়ক না থাকায় এটি এখন গলার কাঁটায় পরিণত হয়েছে।

প্রকাশ নামে একজন স্থানীয় বাসিন্দা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘সেতু আছে, কিন্তু রাস্তা নেই—এমন সেতু মানুষের কোনো কাজে আসে না। মনে হচ্ছে ৫৭ লাখ টাকা ব্যয়ের এই সেতুটি গোবর শুকানোর জায়গার জন্য নির্মিত হয়েছে।’

আলমডাঙ্গা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মৌদুদ আলম খাঁ বলেন, কয়েক মাস আগে আমি এখানে এসেছি, বিষয়টি আমার জানা ছিল না। সংযোগ রাস্তা নির্মাণের জন্য প্রকল্প গ্রহণ করা হবে। দীর্ঘদিন ধরে সাধারণ মানুষের চলাচলে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। আমরা দ্রুত সেতুর ওপর দিয়ে চলাচলের উপযোগী করার চেষ্টা করব।