যুক্তরাজ্যে গোপনে সম্পদ বিক্রি করছেন শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠরা

Sanchoy Biswas
বাংলাবাজার ডেস্ক
প্রকাশিত: ৭:৪৫ অপরাহ্ন, ২০ জুলাই ২০২৫ | আপডেট: ১:৪৫ অপরাহ্ন, ২০ জুলাই ২০২৫
ছবিঃ সংগৃহীত
ছবিঃ সংগৃহীত

ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা সরকারের ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিরা যুক্তরাজ্যে গোপনে তাদের মালিকানাধীন সম্পত্তি বিক্রি, বন্ধক কিংবা হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান ও দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল।

শনিবার প্রকাশিত এক যৌথ অনুসন্ধান প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাজ্যের জমি নিবন্ধন প্রতিষ্ঠানের তথ্য অনুযায়ী, গত এক বছরে বাংলাদেশের সাবেক সরকারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অন্তত ২০টি সম্পত্তি লেনদেনের আবেদন জমা পড়েছে। এসব আবেদনে বিক্রি, মালিকানা হস্তান্তর বা বন্ধকের প্রমাণ পাওয়া গেছে।

আরও পড়ুন: ভারতের বিপক্ষে রায় আন্তর্জাতিক আদালতের, স্বাগত জানাল পাকিস্তান

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ঢাকায় তদন্তকারীরা অনুসন্ধান চালাচ্ছেন কিভাবে সাবেক সরকার-সংশ্লিষ্ট প্রভাবশালী ব্যক্তিরা রাষ্ট্রীয় চুক্তি ও ব্যাংকিং ব্যবস্থা ব্যবহার করে লুটপাট করা অর্থ বিদেশে পাচার করেছেন এবং যুক্তরাজ্যে বিলাসবহুল সম্পত্তি কিনেছেন।

গত মে মাসে যুক্তরাজ্যের জাতীয় অপরাধ সংস্থা (NCA), যেটি ব্রিটিশ 'এফবিআই' নামে পরিচিত, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের ছেলে ও ভাতিজার নামে থাকা প্রায় ১ হাজার ৪৬৯ কোটি টাকার সম্পত্তি জব্দ করে। এরপর সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর নামে থাকা ১৭০ মিলিয়নের বেশি সম্পদও জব্দ করা হয়। যুক্তরাজ্যে তার নামে রয়েছে ৩০০টিরও বেশি অ্যাপার্টমেন্ট এবং বিলাসবহুল টাউনহাউস।

আরও পড়ুন: গাজায় ইসরায়েলি হামলায় একদিনে ৬৯ জন নিহত, মোট প্রাণহানি ৬০ হাজার ছাড়াল

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তদন্তে সাইফুজ্জামান চৌধুরীর ভাই আনিসুজ্জামান চৌধুরী এবং এক ব্রিটিশ-বাংলাদেশি ব্যবসায়ীর সম্পৃক্ততার প্রমাণ মিলেছে। আনিসুজ্জামান সম্প্রতি লন্ডনের রিজেন্টস পার্কের আশপাশে অবস্থিত ১৬৩ কোটি টাকার সমমূল্যের একটি জর্জিয়ান টাউনহাউস বিক্রি করেছেন। এছাড়া আরও তিনটি সম্পত্তির লেনদেনের জন্য আবেদন জমা দেওয়া হয়েছে।

সালমান এফ রহমানের ছেলে আহমেদ শায়ান এফ রহমান ও ভাতিজা আহমেদ শাহরিয়ার রহমানের মালিকানাধীন সম্পত্তি নিয়েও তিনটি নতুন লেনদেনের আবেদন জমা পড়েছে বলে জানিয়েছে গার্ডিয়ান।

বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আহসান মনসুর এই বিষয়ে বলেন, “আমরা জানি সম্পদ বিক্রির চেষ্টা চলছে। যুক্তরাজ্য সরকারকে আরও সম্পদ জব্দের বিষয়ে সতর্ক থাকার আহ্বান জানাই।"

এ বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মোমেন বলেন, “বিপ্লব-পরবর্তী সময়ে অনেকেই হঠাৎ সম্পদ বিক্রি বা হস্তান্তরের তোড়জোড় শুরু করেছেন। এনসিএকে আরও জবাবদিহিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানানো হয়েছে।”

যুক্তরাজ্যে লেনদেন চালিয়ে যাওয়া সন্দেহভাজন ব্যক্তিরা কীভাবে এখনো নির্বিঘ্নে ব্যবসা পরিচালনা করছেন এবং এসব লেনদেনে সহায়তা করা আইনজীবী ও পরামর্শক প্রতিষ্ঠানগুলো কতটা সতর্কতা মেনে চলছে—তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল।

বিশ্লেষকদের মতে, যুক্তরাজ্যের এই বিলাসবহুল সম্পত্তিগুলো এখন দুর্নীতিবিরোধী আন্তর্জাতিক অভিযানের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। তারা আশা প্রকাশ করেছেন, ব্রিটেনের সহযোগিতায় এসব সম্পদের বিচারিক তদন্ত ও পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া আরও জোরদার হবে।