ত্রাণে বাধা দিচ্ছে ইসরায়েল

গাজায় খাদ্য সংকট ‘বিপর্যয়কর’ পর্যায়ে: ডব্লিউএইচও প্রধান

Sadek Ali
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ১০:২১ পূর্বাহ্ন, ২৪ অক্টোবর ২০২৫ | আপডেট: ১০:২১ পূর্বাহ্ন, ২৪ অক্টোবর ২০২৫
ছবিঃ সংগৃহীত
ছবিঃ সংগৃহীত

জাতিসংঘের স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) জানিয়েছে, যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার দুই সপ্তাহ পরও গাজায় খাদ্য সংকট ‘বিপর্যয়কর’ অবস্থায় রয়ে গেছে। সংস্থার প্রধান টেড্রোস আধানম গেব্রিয়েসাস বলেন, যতটুকু ত্রাণ ঢুকছে, তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। ফলে ক্ষুধার মাত্রায় কোনো পরিবর্তন আসেনি।

আন্তর্জাতিক ত্রাণ সংস্থাগুলোও জানিয়েছে, ইসরায়েল এখনো মানবিক সহায়তা প্রবেশে বাধা দিচ্ছে। 

আরও পড়ুন: কানাডার সঙ্গে সব বাণিজ্য আলোচনা বন্ধের ঘোষণা ট্রাম্পের

বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।

জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডঋচ) জানায়, প্রতিদিন গাজায় ২,০০০ টন খাদ্য ঢোকার কথা থাকলেও বাস্তবে প্রবেশ করছে মাত্র ৭৫০ টন। কারণ, ইসরায়েল এখন পর্যন্ত কেবল দুইটি সীমান্ত ক্রসিং — কেরেম শালোম (দক্ষিণে) ও কিসুফিম (কেন্দ্রে) — খোলা রেখেছে।

আরও পড়ুন: পশ্চিম তীর দখল পরিকল্পনায় ইসরায়েলের নিন্দায় ১৫ আরব ও মুসলিম রাষ্ট্র

ডব্লিউএইচও প্রধান বলেন, গাজায় যা কিছু প্রবেশ করছে তা মানুষের মৌলিক পুষ্টি চাহিদা পূরণে যথেষ্ট নয়। অন্তত এক-চতুর্থাংশ মানুষ, যার মধ্যে ১১,৫০০ গর্ভবতী নারী রয়েছেন, তীব্র ক্ষুধার মুখে।

জাতিসংঘ জানিয়েছে, গাজার অপুষ্টির প্রভাব প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে চলবে। বর্তমানে গাজায় নবজাতকদের ৭০ শতাংশই অকাল জন্ম বা কম ওজনের, যেখানে যুদ্ধের আগে এই হার ছিল ২০ শতাংশ।

প্যালেস্টিনিয়ান কৃষি উন্নয়ন সংস্থা (চঅজঈ)-এর কর্মকর্তা বাহা জাকউত জানান, যুদ্ধবিরতির পরও গাজার অবস্থা ভয়াবহ। কিছু বাণিজ্যিক ট্রাকে বিস্কুট, চকোলেট, সোডা ঢুকছে, কিন্তু বীজ, জলপাই বা পুষ্টিকর খাবার এখনো নিষিদ্ধ।

তিনি আরও বলেন, এই জিনিসগুলো শিশু ও নারীদের জন্য ন্যূনতম পুষ্টি মান পূরণ করতে পারে না। গাজায় এখন এক কেজি টমেটোর দাম ১৫ শেকেল (প্রায় ৪.৫০ ডলার), যা আগে ছিল মাত্র ১ শেকেল।

৪১টি আন্তর্জাতিক সংস্থা, যেমন অক্সফাম ও নরওয়েজিয়ান রিফিউজি কাউন্সিল, এক খোলা চিঠিতে অভিযোগ করেছে, ইসরায়েল ইচ্ছাকৃতভাবে ত্রাণ প্রবেশে বাধা দিচ্ছে।

তারা জানায়, ১০ থেকে ২১ অক্টোবর পর্যন্ত আন্তর্জাতিক এনজিওগুলোর ৯৯টি ত্রাণ অনুরোধ এবং জাতিসংঘের ৬টি অনুরোধ ইসরায়েল প্রত্যাখ্যান করেছে। প্রত্যাখ্যাত ত্রাণের মধ্যে ছিল তাঁবু, কম্বল, খাদ্য ও পুষ্টি সরঞ্জাম, শিশুদের পোশাক, স্যানিটেশন সামগ্রী এবং ওষুধপত্র।

বুধবার আন্তর্জাতিক আদালত (ওঈঔ) রায় দিয়েছে, ইসরায়েলকে গাজার মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণের ব্যবস্থা নিতে হবে। আদালত স্মরণ করিয়ে দিয়েছে, খাদ্য ও ত্রাণ অবরোধ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের লঙ্ঘন।

ডব্লিউএইচও ও অন্যান্য সংস্থা বলছে, আমাদের সরঞ্জাম প্রস্তুত, কর্মীরা প্রস্তুত, এখন কেবল দরকার প্রবেশাধিকার। ইসরায়েলকে তার মানবিক ও আইনি বাধ্যবাধকতা পালন করতে হবে।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ইসরায়েলি হামলায় এ পর্যন্ত ৬৮,২৮০ জন নিহত এবং ১,৭০,৩৭৫ জন আহত হয়েছে। অন্যদিকে, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলায় ইসরায়েলে নিহত হয় ১,১৩৯ জন, এবং ২০০ জনেরও বেশিকে বন্দি করা হয়।