আজ জেলায় জেলায় যৌথ বাহিনীর সমন্বয় সভা
বুধবার থেকে সারাদেশে যৌথ বাহিনীর অভিযান

অবৈধ অস্ত্র গোলা বারুদ উদ্ধারে আগামী ৪ সেপ্টেম্বর থেকে রাজধানী সহ সারা দেশে এক যুগে যৌথ বাহিনীর অভিযান শুরু হবে। স্বরাষ্ট মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের রাজনৈতিক চার শাখার উপসচিব আরিফুজ্জামান স্বাক্ষরিত এক আদেশে মেট্রোপলিটন কমিশনার ও সকল জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে যৌথ বাহিনীর সাথে সমন্বয় করে অভিযান পরিচালনা করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়। একই মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে স্থগিত আগ্নেয়াস্ত্র ও গোলা বারুদ নিকটস্থ থানায় তিন সেপ্টেম্বরের মধ্যে জমা দিতে নির্দেশনা দেওয়া হয়।
আগামী বুধবার থেকে কার্যকর অস্ত্র উদ্ধার অভিযান পরিচালনার জন্য জেলা ম্যাজিস্ট্রেটএর সমন্বয়ে সশস্ত্র বাহিনীর সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনী, বিজিবি, কোস্টগার্ড, পুলিশ, র্যাব, আনসার সমন্বয়ে যৌথ অপারেশন টিম গঠন করে অভিযান চলবে।
আরও পড়ুন: বাধ্যতামূলক অবসরে ডিএমপির সাবেক ৯ ওসি
এদিকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী জানান,কোনো অভিযান পরিচালনার সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নিজেদের পরিচয় দিয়ে গ্রেফতার করতে হবে, পরিচয় না দিয়ে কোন অবস্থাতেই কাউকে গ্রেফতার করা যাবে না।
৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে পালিয়ে যাওয়ার পর থেকেই আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি হতে থাকে। লুট হয়ে যায় অনেক থানা ফাড়ি। অনেক অস্ত্র লুট হয়ে যায় গণভবন থেকে। অনেক কারাগার ভেঙ্গি বেরিয়ে আসে দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী ও জঙ্গিরা। ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণ আন্দোলনে অনেক থানা ও পুলিশ ফাঁড়ি আক্রান্ত হয়েছে। ভস্মিভূত ও ধ্বংস হয়েছে পুলিশের অনেক স্থাপনা। পুরো সক্ষমতায় ফিরেনি পুলিশ। এ অবস্থায় আইন-শৃঙ্খলার স্বাভাবিকতায় জনমনে অস্থিরতা বিরাজ করছে। মামলার আসামী হওয়ায় অনেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। পুরো দমে চালু করা যায়নি পুলিশের টহল ও তল্লাশী কার্যক্রম। নেই সন্ত্রাসী চাঁদাবাজ ও দূর্বৃত্তদের গ্রেপ্তার সাঁড়াশি অভিযান। অনেক থানা ও ফাঁড়ির অস্ত্রগার লুট এবং ধ্বংস হওয়ায় বৈধ অস্ত্র রাখার মতো পর্যাপ্ত সক্ষমতা নেই অনেক থানার। বৈধ অবৈধ ও থানা-ফাঁড়ি থেকে লুণ্ঠিত সকল ধরনের অস্ত্র উদ্ধারে বিশেষ অভিযান বা সশস্ত্র বাহিনীর সহায়তায় যৌথ অভিযান শুরুর নির্দেশনা দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আগামী ৪ সেপ্টেম্বর থেকে অবৈধ অস্ত্র গোলাবারুদ সন্ধানে যৌথ বাহিনীর এক যুগে সারাদেশে অভিযানের কথা ঘোষণা করা হয়েছে। একই সাথে অভিযানের পদ্ধতি বিস্তারিতভাবে জানিয়ে চিঠি দিয়েছে জেলা প্রশাসন ও মেট্রোপলিটন কমিশনারদের। গতকাল রোববার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের রাজনৈতিক শাখার উপসচিব আরিফুজ্জামান স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে আগামী ২ সেপ্টেম্বর পুলিশ সুপার সশস্ত্র বাহিনীর প্রতিনিধি ও গোয়েন্দা সংস্থার অন্যান্য সদস্যদের সমন্বয় কোর কমিটির সভা করার জন্য জেলা ম্যাজিস্ট্রেটদের নির্দেশনা দিয়েছে। মেট্রোপলিটন এলাকায় পুলিশ কমিশনার সংশ্লিষ্ট সকল বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থা সহায়তায় ৪ সেপ্টেম্বর থেকে অস্ত্র উদ্ধারের জন্য যৌথ বাহিনীর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। চার সেপ্টেম্বর থেকে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে অভিযান পরিচালনা অবৈধ অস্ত্র সংরক্ষণ ও হেফাজতকারী বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে মামলা দায়ের সহ আইনব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়টি জানানো হয়। আগামী ৪ সেপ্টেম্বর থেকে এই অভিযান শুরু হওয়ার তথ্যও জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে.জেনারেল জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
আরও পড়ুন: হাসিনার প্রিজম দিয়ে বাংলাদেশকে দেখায় ভারতকে মূল্য দিতে হচ্ছে
এবিষয়ে জানতে চাইলে আইজিপি মো. ময়নুল ইসলাম বলেন, 'নির্দেশনা অনুযায়ী ৩ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সকল অস্ত্র জমা দিতে হবে। এরপর কারও কাছে কোন অস্ত্র থাকলে সেটা অবৈধ বলে গণ্য হবে। ৩ সেপ্টেম্বরের পর দ্রুততম সময়ের মধ্যে আমরা সকল ধরনের বৈধ-অবৈধ লুন্ঠিত অস্ত্র উদ্ধারে অভিযান শুরু করবো। আশা করছি নিরাপত্তার ঘাটতি তৈরি হবে না। অস্ত্র উদ্ধার অভিযানে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী পুলিশ প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। মেট্রোপলিটনসহ জেলায় জেলায় জেলা ম্যাজিস্ট্রেটদের সাথে সমন্বয় করে যৌথ বাহিনীর অভিযান পরিচালনা করা হবে।'
এর আগে, গত ২৫ আগস্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের এক ঘোষণায় ‘২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত বেসামরিক জনগণকে দেওয়া সকল ধরনের আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স স্থগিত করে। একই সঙ্গে ৩ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সকল বৈধ লাইসেন্স গ্রহীতার স্থায়ী ঠিকানার থানায় অথবা বর্তমান বসবাসের ঠিকানার নিকটস্থ থানায় লাইসেন্স গ্রহীতা নিজে বা মনোনীত প্রতিনিধির মাধ্যমে জমা দিতে বলা হয়েছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ তথ্য কর্মকর্তা ফয়সল হাসান জানান, ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত সময়ে যারা অস্ত্রের লাইসেন্স নিয়েছেন তাদেরকে ৩ সেপ্টেম্বরের মধ্যে গোলাবারুদসহ আগ্নেয়াস্ত্র সংশ্লিষ্ট থানায় জমা দিতে হবে।