আগের কোটায় নিয়োগ পেতে এলজিইডিতে পাঁয়তারা

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরে (এলজিইডি) রাজস্ব খাতের আওতায় বিভিন্ন পদে আগের কোটা পদ্ধতি অনুসরণ করে অপেক্ষমাণ তালিকা থেকে নিয়োগ পেতে একটি মহল অপচেষ্টা চালাচ্ছে। তারা আগারগাঁওয়ের এলজিইডি ভবন এলাকায় অবস্থান নিয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৩ অক্টোবর) স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
আরও পড়ুন: একটি বিশেষ দল গণতান্ত্রিক চর্চাকে ব্যাহত করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে : ডা. রফিক
স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ তথ্য কর্মকর্তা পবন চৌধুরীর স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সরকারি চাকরিতে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে আগে বিভিন্ন কোটায় ৫৬ শতাংশ বিদ্যমান ছিল। কিন্তু উচ্চ আদালতের রায়ের ভিত্তিতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সরকারের বিদ্যমান কোটা পদ্ধতি সংশোধন করে গত ২৩ জুলাই প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। কিন্তু এলজিইডির বিভিন্ন পদে অপেক্ষমাণ তালিকা থেকে আগের কোটায় নিয়োগ পেতে একটি মহল অপচেষ্টা চালাচ্ছে। তারা আগারগাঁওয়ের এলজিইডি ভবন এলাকায় অবস্থান নিয়েছে।
জানা গেছে, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের রাজস্ব খাতের ১৩-২০তম গ্রেডের ১২টি ক্যাটাগরিতে (সাঁট লিপিকার কাম কম্পিউটার অপারেটর, কমিউনিটি অর্গানাইজার, সাঁট-মুদ্রাক্ষরিক- কাম- কম্পিউটার অপারেটর, হিসাব সহকারী, সার্ভেয়ার, কার্যসহকারী, ইলেকট্রিশিয়ান, মুয়াজ্জিন, অফিস সহকারী-কাম-কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক, অফিস সহকারী, অফিস সহায়ক ও নিরাপত্তা প্রহরী) ২২৩৭ পদে ২০২২ সালের গত ২৬ ডিসেম্বর নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়।
আরও পড়ুন: গুমের শিকার ৭ পরিবারের জন্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠান উদ্বোধন করল বিএনপি
পরবর্তীতে তৎকালীন সময়ে সরকার কর্তৃক নির্ধারিত কোটা পদ্ধতি অনুসরণে আবেদনকৃত প্রার্থীদের মধ্য হতে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে যোগ্য প্রার্থীদের গত ২০২৩ সালের ৫ অক্টোবর চূড়ান্ত নিয়োগ দেওয়া হয়।
২০২৩ সালের ১৭ এপ্রিল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের পরিপত্র মূলে ১৩-২০ তম গ্রেডের পদে কর্মচারী নিয়োগে অপেক্ষমাণ তালিকা সংরক্ষণের নির্দেশনায় প্রতিটি পদের বিপরীতে ১:২ অনুপাতে উত্তীর্ণ প্রার্থীদের মধ্য হতে অপেক্ষমাণ তালিকা প্রস্তুত করে সিলগালাকৃত খামে গোপনীয়তার সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনে সংরক্ষণ করা হয়।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জারিকৃত পরিপত্র মতে, নিয়োগের জন্য সুপারিশকৃত প্রার্থীদের মধ্যে কেউ চাকরিতে যোগদান না করলে বা চাকরিতে যোগদানের পর ইস্তফা দিলে শূন্য পদ পূরণের প্রয়োজন হলে সংশ্লিষ্ট ডিপিসির সভায় অপেক্ষমাণ তালিকা এবং উত্তীর্ণ প্রার্থীদের রেজাল্ট সিট উপস্থাপনপূর্বক শূন্য পদে নিয়োগের জন্য প্রার্থী সুপারিশ করতে হবে।
অন্যদিকে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের রায়ের ভিত্তিতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় আগের বিদ্যামান কোটা পদ্ধতি সংশোধন করে মেধাভিত্তিক ৯৩ শতাংশ, মুক্তিযোদ্ধা ও বীরাঙ্গনার সন্তানদের জন্য ৫ শতাংশ, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ১ শতাংশ এবং শারীরিক প্রতিবন্ধী ও তৃতীয় লিঙ্গের জন্য ১ শতাংশ করে প্রজ্ঞাপন জারি করে।
এ অবস্থায়, বর্তমান প্রেক্ষাপট এলজিইডির রাজস্ব খাতের ১২ ক্যাটাগরির পদে সরাসরি নিয়োগের লক্ষ্যে ইতোপূর্বে নির্ধারিত কোটা পদ্ধতি অনুসরণে প্রস্তুতকৃত অপেক্ষমাণ তালিকা হতে বর্তমানে নিয়োগ করা বিধিসম্মত হবে কি না অথবা বর্তমানে নির্ধারিত কোটা পদ্ধতি অনুসরণে অপেক্ষমান তালিকা পুনরায় প্রস্তুত করার প্রয়োজন হবে কি না, এ বিষয়ে সুষ্পষ্ট মতামত গ্রহণপূর্বক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা প্রয়োজন বলে মনে করে প্রশাসনিক মন্ত্রণালয়।
এদিকে বিভিন্ন প্রকল্পে কর্মরত কর্মচারীরা আপিল বিভাগের রায়ের আলোকে তাদের নিয়োগ দেওয়ার জন্য দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করছে। অতীতে সহাকরাী প্রকৌশলী, উপসহকারী প্রকৌশলী, কম্পিউটার অপারেটর, অফিস সহকারী, হিসাব সহকারী, অফিস সহায়কসহ বিভিন্ন পদে এ পদ্ধতিতে নিয়োগ দেওয়া হলেও প্রায় ৩৬শ কর্মচারী সর্বোচ্চ আদালতের রায় নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে অপেক্ষায় রয়েছেন। এলজিইডি সূত্রে জানা গেছে সাবেক প্রধান প্রকৌশলী খলিলুর রহমান তাদের নিয়োগ দিতে উদ্যোগ নিলে আওয়ামী বঙ্গবন্ধু পরিষদের নেতা প্রকৌশলী আব্দুর রশিদ, আমিরুল ইসলাম , ফিরোজ আলম তালুকদার নিয়োগের বিরোধীতা করেন। পরে প্রধান প্রকৌশলী হিসেবে শেখ মোহাম্মদ মহসিন নিয়োগ পেলে বঙ্গবন্ধু পরিষদের উক্ত নেতারা প্রধান প্রকৌশলীর সঙ্গে যোগসাজশ করে নিয়োগ বাণিজ্য করে বিভিন্ন পদে ২২৩৭ কর্মচারী নিয়োগ দেন। সম্পূর্ণ আওয়ামী দলীয় এবং অর্থের বিনিময়ে এ নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হয়েছে বলে সুস্পষ্ট অভিযোগ রয়েছে। বর্তমানে অপেক্ষায় থাকা ৩৬শ কর্মচারী মানবিক জীবন যাপন করছে।