আদালত প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ: বিএসবি গ্লোবালের বাশারকে কিল-ঘুষি, ডিম নিক্ষেপ

Sanchoy Biswas
বাংলাবাজার ডেস্ক
প্রকাশিত: ৬:৪৯ অপরাহ্ন, ১৫ জুলাই ২০২৫ | আপডেট: ৯:৫৫ পূর্বাহ্ন, ১৬ জুলাই ২০২৫
ছবিঃ সংগৃহীত
ছবিঃ সংগৃহীত


বিএসবি গ্লোবাল নেটওয়ার্কের চেয়ারম্যান খায়রুল বাশার এবার ভুক্তভোগী অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের রোষানলে পড়েছেন। মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) আদালতে হাজির করার সময় তার ওপর কিল-ঘুষি, লাথি ও ডিম নিক্ষেপ করেন বিক্ষুব্ধরা।

আরও পড়ুন: টঙ্গীতে অগ্নিকাণ্ডে দগ্ধ ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের সর্বোচ্চ চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে

দুপুর ৩টা ২০ মিনিটের দিকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতের হাজতখানা থেকে এজলাসে নেওয়ার সময় এই ঘটনা ঘটে। আদালত প্রাঙ্গণে বাশারকে দেখতে পেয়ে উপস্থিত জনতা উত্তেজিত হয়ে ওঠেন এবং ডিম ছুড়ে মারেন। এসময় তার পরনে ছিল বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট ও মাথায় হেলমেট।

বাশারকে দ্রুত সিএমএম আদালতের তৃতীয় তলায় অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. ছানাউল্যাহর আদালতে তোলা হয়। পথে সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে থাকা অনেক ভুক্তভোগী তাকে কিল, ঘুষি, চড় ও লাথি মারেন। আদালতের সামনে উপস্থিত জনতা বাশারকে উদ্দেশ করে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজও করেন।

আরও পড়ুন: বিশ্বকে বদলাতে তরুণদের ‘থ্রি-জিরো ক্লাব’ গড়ে তোলার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার

পরে আদালত তার ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

রিমান্ড শুনানিকালে বাদীপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট জামাল উদ্দিন খন্দকার আদালতে বলেন, “বাশার ক্যামব্রিয়ান স্কুল অ্যান্ড কলেজের চেয়ারম্যান। বিদেশে পাঠানোর প্রলোভন দেখিয়ে প্রায় দুই হাজার শিক্ষার্থীর কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। তার কারণে অনেক শিক্ষার্থীর জীবন নষ্ট হয়েছে। পাঁচ কোটি টাকা খরচ করে বাশার একটি বাহিনী গঠন করেছিলেন, যারা টাকা চাইতে আসা অভিভাবকদের উপর নির্যাতন চালাতো।”

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মুহাম্মদ শামছুদ্দোহা সুমন বলেন, “বাশার শিক্ষাকে ব্যবসায় রূপ দিয়েছেন। তিনি রাষ্ট্রকে ব্যবহার করে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। তার সর্বোচ্চ রিমান্ডের আবেদন করছি।”

বাশারের আইনজীবী কাজী আনিসুর রহমান রিমান্ড বাতিলের আবেদন জানাতে গেলে আদালত কক্ষে উপস্থিত কয়েকজন ভুক্তভোগী তাকে লক্ষ্য করে চিৎকার করে বলেন, “আপনার লজ্জা নাই?” ফলে তিনি আর বক্তব্য দিতে পারেননি।

রিমান্ড মঞ্জুরের আগে বিচারক বাশারকে একাধিক প্রশ্ন করেন। বিচারক জানতে চান, “আপনি কীভাবে শিক্ষার্থীদের জীবন হুমকির মুখে ফেললেন? সন্তানদের কথা একবারও মনে পড়েনি?” কোনো প্রশ্নের জবাব দেননি বাশার।

বিচারক বলেন, “আপনার বিরুদ্ধে আনুমানিক ৭০টি মামলা হয়েছে। এত মামলা মোকাবিলা করতে গেলে সারাজীবন জেলে কাটাতে হবে।” বিচারক আরও জানতে চান, “কতটি বিয়ে করেছেন?” বাশার উত্তর দেন, “দুইটি।” পরে জানতে চাওয়া হয়, “কতজন সন্তান?” বাশার জানান, “ছয়জন।”

এর আগে সোমবার (১৪ জুলাই) সিআইডি পুলিশ তাকে ঢাকার ধানমন্ডি এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে।

তদন্ত সূত্রে জানা গেছে, খায়রুল বাশার উচ্চশিক্ষার জন্য ১৪১ শিক্ষার্থীকে বিদেশে পাঠানোর কথা বলে ১৮ কোটি ২৯ লাখ ৫৭ হাজার ৬৮০ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। অভিযোগ রয়েছে, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের বিশ্বাসের সুযোগ নিয়ে বছরের পর বছর ধরে তিনি প্রতারণা করে আসছিলেন।

বর্তমানে তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় অসংখ্য মামলা চলমান রয়েছে। পরিস্থিতি বিবেচনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বলছে, এই প্রতারণার ঘটনার গভীরতা আরও বিস্তৃত হতে পারে।