ড. ইউনূসের ঘোষণাপত্র দেওয়ার বৈধতা নেই: ফরহাদ মজহার

কবি ও রাষ্ট্রচিন্তক ফরহাদ মজহার বলেছেন, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের জুলাই ঘোষণাপত্র দেওয়ার কোনো বৈধ আইনগত অধিকার নেই। তিনি বলেন, “ড. ইউনূস শেখ হাসিনার সংবিধানের অধীনে একজন উপদেষ্টামাত্র। তার কোনো অধিকার নেই। তিনি গণ-অভ্যুত্থানের নেতা নন, তিনি গণ-অভ্যুত্থানের ফলমাত্র।”
মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) সকালে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে গণশক্তি সভা আয়োজিত ‘জুলাই ঘোষণাপত্রে বঞ্চনা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
আরও পড়ুন: আনোয়ার হোসেন মঞ্জুকে বিদেশ যেতে দেয়া হয়নি
ফরহাদ মজহার বলেন, “আমি ড. ইউনূসকে প্রশ্ন করব, আপনি জুলাই ঘোষণাপত্র দিতে দেননি কেন? এটি জনগণের অধিকার ছিল। সেই অধিকার কেড়ে নিলেন কেন? ছাত্ররা গত বছর এবং এ বছরের শুরুতে বারবার ঘোষণাপত্র দেওয়ার চেষ্টা করেছে। আপনি তাদের তা দিতে দেননি, বরং মিথ্যা কথা বলেছেন।”
তিনি আরও বলেন, “এখন আপনি একটি ঘোষণাপত্র দিয়েছেন, যেটি নিয়ে আমি শুরু থেকেই অসন্তুষ্ট। প্রথম দিনই আমি তা প্রত্যাখ্যান করেছি। এটি আপনার দেওয়ার অধিকার নেই। আপনি সাংবিধানিক প্রতিবিপ্লব ঘটিয়েছেন, গণ-অভ্যুত্থানকে প্রতারিত করেছেন। যদি এই গণ-অভ্যুত্থান ব্যর্থ হয়, আমরা আবারও গণ-অভ্যুত্থান ঘটাব। পৃথিবীতে এমন বহু উদাহরণ রয়েছে।”
আরও পড়ুন: নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের 'গোপন বৈঠকে' অংশ: মেজর সাদিকুলের স্ত্রীর স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি
ফরহাদ মজহার বলেন, “শেখ হাসিনার ফ্যাসিস্ট সংবিধানের অধীনে যখন সরকার গঠিত হলো, তখনই আমি বলেছিলাম—একটি সাংবিধানিক প্রতিবিপ্লব ঘটে গেছে। সেই সংবিধানে গণ-অভ্যুত্থান ঢুকিয়ে আপনি হাসিনার রাষ্ট্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেছেন। আমাদের বুদ্ধিবৃত্তিক সমাজ বা সাংবাদিক মহল সেটি বুঝতেই পারেনি। এখন তার কফফারা (প্রায়শ্চিত্ত) গুণতে হচ্ছে প্রতিদিন।”
তিনি বলেন, “আমরা একটি নতুন গঠনতন্ত্র প্রণয়ন চেয়েছিলাম। কিন্তু আইনের দোহাই দিয়ে আমাদের থামিয়ে দেওয়া হয়েছে। শেখ হাসিনার সংবিধান রেখে সরকার গঠন করা যায় না। জনগণের দাবি ছিল এই সংবিধান বাতিল করা, সেটা বারবার তুলতে হবে। এখানে কোনো সমঝোতার প্রশ্নই ওঠে না।”
১৯৭২ সালের সংবিধান নিয়েও প্রশ্ন তোলেন ফরহাদ মজহার। তিনি বলেন, “জিয়াউর রহমান সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা নয়, বরং মানবিক মর্যাদা, সাম্য ও সামাজিক ন্যায়ের ভিত্তিতে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র চেয়েছিলেন। তিনি এসব আদর্শের জন্য যুদ্ধ করেছেন। কিন্তু আমাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে ১৯৭২ সালের সংবিধান, যা মূলত পাকিস্তানি ভাবধারার।”
বিএনপিকে উদ্দেশ করে ফরহাদ মজহার বলেন, “আপনারা ১৯৭২ সালের সংবিধান ধরে রাখতে চান কেন? জিয়াউর রহমান কিংবা খালেদা জিয়া তো সেটা চায়নি। তাহলে গণ-অভ্যুত্থানের পর আপনারা কেন সেই সংবিধান রেখে দিয়েছেন? বরং সংবিধান বাতিলের বদলে নির্বাচনের জন্য চাপ সৃষ্টি করছেন।”
আগামী নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “সরকারের কিছু অর্জন থাকলেও রাজনৈতিক ঐক্যের পরিবেশ এখনো সৃষ্টি হয়নি। এই পরিস্থিতিতে নির্বাচন আয়োজন গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।”
আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন গণশক্তি সভার সভাপতি সাংবাদিক সাদেক রহমান। সভা সঞ্চালনা করেন অধ্যাপক ড. দেওয়ান সাজ্জাদ। এছাড়া সভায় আরও বক্তব্য দেন: কর্ণেল (অব.) হাসিনুর রহমান, গণমুক্তি জোটের চেয়ারম্যান ড. শাহরিয়ার ইফতেখার ফুয়াদ, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এ টি এম জিয়াউল হাসান, সাবেক সচিব কাসেম মাসুদ, গণমুক্তি জোটের মহাসচিব আখতার হোসেন প্রমুখ।