জামায়াতসহ যুগপৎ আন্দোলন করা দলগুলোর সঙ্গে এনসিপি নেই: নাহিদ ইসলাম

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম জানিয়েছেন, এনসিপি তার নিজস্ব লক্ষ্য নিয়ে এগোবে। “আমাদের সঙ্গে যাদের মতাদর্শ মিলে, তারা আমাদের সঙ্গে যুক্ত হতে পারেন। এই মুহূর্তে কোনো জোটভিক্তিক চিন্তাভাবনা নেই এনসিপির,” তিনি বলেন। নাহিদ ইসলাম বলেন, জুলাই সংস্কারের আইনি ভিত্তির জন্য গণপরিষদ নির্বাচন ছাড়া কোনো বিকল্প নেই।
শুক্রবার শহীদ আবু সাঈদ ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারে দলের তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সঙ্গে এক সমন্বয় সভা শেষে তিনি এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেন।
আরও পড়ুন: টয়লেট পরিচালনা প্রশিক্ষণে বিদেশ যাচ্ছেন ৩ কর্মকর্তা
দিনব্যাপী এই সভায় অংশ নেন জেলা-উপজেলার সমন্বয়ক কমিটির প্রতিনিধি, এনসিপির যুব উইং ‘যুব শক্তি’, গণতান্ত্রিক ছাত্রসংগঠনসহ দলটির অঙ্গ সংগঠনের প্রতিনিধিরা। সভায় আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ও সদস্য সচিব আখতার হোসেন তৃণমূল নেতাকর্মীদের সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা করেন।
নাহিদ ইসলাম বলেন, “গণপরিষদ ও জাতীয় নির্বাচন আমরা একসাথে চাই। সেই যৌথ নির্বাচনের প্রস্তুতির জন্য আমরা সবাইকে নির্দেশনা দিয়েছি। এবার প্রতিটি উপজেলায় আমরা ‘উঠান বৈঠক’ কর্মসূচি চালাচ্ছি। জাতীয় নাগরিক পার্টির ২৪ দফা কর্মসূচি নিয়ে আমরা মানুষের দুয়ারে আবারও পৌঁছাব। আগামী অক্টোবরের মধ্যে সব উপজেলা পর্যায়ে আহ্বায়ক কমিটি গঠন সম্পন্ন হবে।”
আরও পড়ুন: ৩৯ পরিদর্শককে সহকারী পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতি
তিনি বলেন, “নিম্নকক্ষে আমরা পিআর চাই না। তাই জামায়াত ইসলামীসহ যে কয়েকটি দলে যুগপৎ আন্দোলন করছে, তাদের সঙ্গে আমরা নেই। এই মুহূর্তে কোনো জোটে যাচ্ছি না। তবে উচ্চকক্ষে পিআরের মাধ্যমে সংসদকে অংশগ্রহণমূলক দেখতে চাই, এবং সেটি নিশ্চিত করে আমরা জুলাই সনদের বাস্তবায়ন দেখতে চাই।”
নাহিদ ইসলাম আরও বলেন, “আমরা নিবন্ধন পেতে যাচ্ছি। শাপলা প্রতীকের না দেওয়ার পক্ষে নির্বাচন কমিশন কোনো যথাযথ যুক্তি দিতে পারেনি। আশা করছি, আমরা শাপলা প্রতীক পাব। গণমাধ্যমই আমাদের শেষ ভরসা। আমাদের কোনো প্রতিষ্ঠান নেই, সাংবাদিকরাই ভরসা। আমরা হারাইনি, বরং দ্বিগুণ গতিতে এগোচ্ছি। মাঝের সময়টা প্রবাসীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছি।”
সভায় নাহিদ ইসলাম জুলাই মাসের গণ-অভ্যুত্থানের এক বছরের পূর্তি স্মরণ করেন। তিনি বলেন, “দল গঠনের এক বছর পর নিজেদের আত্মমূল্যায়ন, আত্মসমালোচনা এবং সামনের করণীয় নির্ধারণ করা প্রয়োজন। সাংগঠনিকভাবে আমরা যে পরিমাণ শক্তিশালী হওয়ার কথা ছিলাম, তা অর্জন করতে পারিনি। এর নানা বাস্তবতা রয়েছে। গত এক বছর বাংলাদেশ নানা অস্থিরতার মধ্য দিয়ে পার হয়েছে। গণ-অভ্যুত্থানের পর অনেক দায়িত্ব আমাদের ওপর এসেছে। আমরা আত্মমূল্যায়ন করছি, যাতে সামনে ভুল না হয়।”
তিনি বলেন, “বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়াকে দলের একটি অর্জন হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। আরও কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিগগিরই নির্বাচন হবে। গণ-অভ্যুত্থানের পর আমরা প্রথম এই দাবি তোলেছিলাম।”
নাহিদ ইসলাম বলেন, “গণতান্ত্রিক ও নিরাপদ ক্যাম্পাস নিশ্চিত করতে এবং গণ-অভ্যুত্থানে ছাত্রদের ভূমিকার স্বীকৃতি দিতে ছাত্র সংসদ নির্বাচন অপরিহার্য। এটি আমাদের একটি বড় অর্জন।”
ঢাকা ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে এনসিপি সমর্থিত প্যানেলের ফলাফলকে তিনি ‘দুঃখজনক’ আখ্যা দেন। তিনি বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ছাত্র নেতৃত্ব গড়ে উঠবে, এটা আমাদের প্রত্যাশা ছিল। কিন্তু আমরা যে প্যানেলগুলো সমর্থন দিয়েছি, তারা আশানুরূপ ফল করতে পারেনি। এজন্য আমরা ভাবছি, এই এক বছরে কী হলো, কেন পারলাম না, আমাদের ব্যর্থতা কোথায় ছিল। এ নিয়েই আত্মসমালোচনা ও আত্মমূল্যায়ন হয়েছে। তবে আমাদের সমর্থিত ছাত্র সংগঠন বা প্যানেল খুব অল্প সময় পেয়েছে রাজনীতি করার।”