ভাতা আন্দোলনের জেরে সচিবালয়ে আতঙ্ক, বরখাস্তের শঙ্কায় কর্মকর্তা-কর্মচারীরা

Sanchoy Biswas
বাংলাবাজার রিপোর্ট
প্রকাশিত: ৪:৫১ অপরাহ্ন, ২১ ডিসেম্বর ২০২৫ | আপডেট: ৪:৫১ অপরাহ্ন, ২১ ডিসেম্বর ২০২৫
ছবিঃ সংগৃহীত
ছবিঃ সংগৃহীত

ভাতা বৃদ্ধির দাবিতে বাংলাদেশ সচিবালয়ে চলমান আন্দোলনের পরিণতিতে সেখানে চরম আতঙ্ক ও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। আন্দোলনে অংশ নেওয়া কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এখন চাকরি হারানোর ভয়ে দিন কাটাচ্ছেন। সাম্প্রতিক সময়ে ১৪ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে সাময়িক বরখাস্ত করার ঘটনায় সচিবালয়জুড়ে উদ্বেগ আরও বেড়েছে।

বিশেষ করে গত ১০ ও ১১ ডিসেম্বর সচিবালয়ে সংঘটিত আন্দোলনের সময় অর্থ উপদেষ্টাকে অবরুদ্ধ করার ঘটনায় অংশগ্রহণকারীদের চিহ্নিত করতে ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করছে একাধিক সরকারি সংস্থা। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, আন্দোলনে জড়িত আরও কর্মকর্তা-কর্মচারীকে আটক বা সাময়িক বরখাস্ত করা হতে পারে—এমন আশঙ্কায় অনেকেই নজরদারির মধ্যে রয়েছেন।

আরও পড়ুন: হাইকমিশনে হামলা নিয়ে দিল্লির বিবৃতি প্রত্যাখ্যান ঢাকার

সূত্র মতে, বরখাস্তের তালিকা আরও দীর্ঘ হতে পারে। এতে আন্দোলনে অংশ নেওয়া সাধারণ কর্মচারীদের মধ্যে ব্যাপক ভীতি ছড়িয়ে পড়েছে। কেউ কেউ নিরাপত্তাহীনতার কারণে রাতের বেলায় নিজ বাসা ছেড়ে আত্মীয়স্বজনের বাসায় আশ্রয় নিচ্ছেন বলেও জানা গেছে।

গত ১০ ডিসেম্বর দুপুর আড়াইটা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত প্রায় ছয় ঘণ্টা সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে অবরুদ্ধ ছিলেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। ভাতা বৃদ্ধির দাবিতে বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদের একাংশের নেতৃত্বে এ কর্মসূচি পালিত হয়। পরে দাবি বিবেচনার আশ্বাস দিয়ে পুলিশের সহায়তায় তিনি দপ্তর ত্যাগ করেন।

আরও পড়ুন: জরুরি সংবাদ সম্মেলন ডেকেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ওই সময় আন্দোলনকারীদের আচরণ ও ভাষা ছিল শালীনতার সীমা ছাড়ানো। অশালীন ও ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণে সেখানে উপস্থিত ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও বিব্রত হন।

পরদিন ১১ ডিসেম্বর পুনরায় আন্দোলনে নামলে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী কঠোর অবস্থান নেয়। সচিবালয় এলাকা থেকে পাঁচজনকে আটক করা হয়। পরে থানায় আটক ব্যক্তিদের দেখতে গেলে আরও সাতজনকে আটক করা হয়। এছাড়া রাতে বাসা থেকে আরও দুজনকে আটক করা হয়। তাঁদের বিরুদ্ধে ২০০৯ সালের সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা দায়ের করা হয় এবং আদালত রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

নিয়ম অনুযায়ী, ফৌজদারি মামলায় আদালত অভিযোগপত্র গ্রহণ করলে সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মচারীকে সাময়িক বরখাস্ত করা বাধ্যতামূলক। এরই ধারাবাহিকতায় গত ১৫ ডিসেম্বর সরকার ১৪ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে সাময়িক বরখাস্ত করে।

বরখাস্ত হওয়াদের মধ্যে রয়েছেন বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদের একাংশের সভাপতি বাদিউল কবীর, সহসভাপতি শাহীন গোলাম রাব্বানী ও নজরুল ইসলাম। এছাড়া বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও অফিস সহায়কসহ মোট ১৪ জনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

বরখাস্তের খবর প্রকাশের পর থেকেই সচিবালয়ের ভেতরে আন্দোলনে অংশ নেওয়া কর্মচারীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে অর্থ বিভাগের একাধিক কর্মচারী জানান, নেতাদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে তাঁরা আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন। এখন নেতারাই চাকরি হারিয়েছেন, ফলে সাধারণ কর্মচারীরা চরম দুশ্চিন্তায় রয়েছেন।

বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদের একাংশের মহাসচিব নিজাম উদ্দীন বলেন, সভাপতির একগুঁয়ে সিদ্ধান্তের কারণে নিরীহ কর্মচারীরা আজ ভয়াবহ অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছেন। অনেকেই আন্দোলনের সঙ্গে একমত ছিলেন না, এমনকি কেউ কেউ অংশ নেননি, অথচ তাঁদেরও বরখাস্ত করা হয়েছে।

অন্যদিকে পরিষদের অপর অংশের সভাপতি নুরুল ইসলাম বলেন, সরকারের শীর্ষ কর্মকর্তাদের অবরুদ্ধ করে আন্দোলন করা নৈতিকভাবে সমর্থনযোগ্য নয়। প্রথম সারির কিছু নেতার দায়িত্বজ্ঞানহীন সিদ্ধান্তের কারণেই সচিবালয়ে এই অস্বস্তিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।

ভাতা বৃদ্ধির দাবিতে শুরু হওয়া আন্দোলন এখন রূপ নিয়েছে চাকরি হারানোর আতঙ্কে। নেতৃত্বের সিদ্ধান্তের খেসারত দিতে হচ্ছে সাধারণ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের। পরিস্থিতি কোন দিকে গড়ায়—সেদিকেই তাকিয়ে পুরো সচিবালয়।