জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় বেগম খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিত

Any Akter
বাংলাবাজার রিপোর্ট
প্রকাশিত: ৯:৪৫ পূর্বাহ্ন, ১১ নভেম্বর ২০২৪ | আপডেট: ৫:৫৭ পূর্বাহ্ন, ১১ নভেম্বর ২০২৪
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। ছবিঃ সংগৃহীত
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। ছবিঃ সংগৃহীত

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় ১০ বছরের সাজার বিরুদ্ধে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে করা আবেদন) মঞ্জুর করেছেন আপিল বিভাগ। একইসঙ্গে বেগম খালেদা জিয়াকে দেওয়া ১০ বছরের সাজা স্থগিত করেছেন আদালত। সোমবার আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলামের নেতৃত্বে তিন বিচারপতির বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

এরআগে রায়ের বিরুদ্ধে বেগম খালেদা জিয়ার করা পৃথক লিভ টু আপিলের (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) ওপর আদেশের জন্য এ দিন ধার্য করেন আপিল বিভাগ।  শুনানি নিয়ে আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলামের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আপিল বিভাগ রোববার আদেশের এ দিন ধার্য করেন।

আরও পড়ুন: অসহায় পরিবারের দুই শিশুকে চিকিৎসা সহায়তা ও অটোরিকশা দিলেন তারেক রহমান

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি বিশেষ জজ আদালত-৫ রায় দেন। রায়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড দেওয়া হয়। এ রায়ের বিরুদ্ধে একই বছর হাইকোর্টে আপিল করেন বেগম খালেদা জিয়া। এ আপিলের ওপর শুনানি শেষে ২০১৮ সালের ৩০ অক্টোবর হাইকোর্ট রায় দেন। রায়ে বেগম খালেদা জিয়ার সাজা বাড়িয়ে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর ২০১৯ সালে আপিল বিভাগে পৃথক দুটি লিভ টু আপিল করেন বেগম খালেদা জিয়া।

পৃথক লিভ টু আপিল ৩ নভেম্বর আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে ওঠে। সেদিন আদালত পৃথক লিভ টু আপিল আপিল বিভাগে শুনানির জন্য ১০ নভেম্বর তারিখ ধার্য করেন। এর ধারাবাহিকতায় পৃথক লিভ টু আপিল শুনানির জন্য ওঠে।

আরও পড়ুন: একটি গোষ্ঠী মব সন্ত্রাসকে ক্যানসারে পরিণত করেছে: রিজভী

আদালতে বেগম খালেদা জিয়ার পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন ও আইনজীবী কায়সার কামাল শুনানি করেন। রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান ও দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পক্ষে আইনজীবী আসিফ হাসান শুনানিতে অংশ দেন। 

এ সময় বেগম খালেদা জিয়ার পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এএম মাহবুব উদ্দিন খোকন, এম বদরুদ্দোজা ও মো. রুহুল কুদ্দুস কাজল এবং আইনজীবী গাজী কামরুল ইসলাম, জাকির হোসেন ভূঁইয়া, মাকসুদ উল্লাহ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

শুনানিতে বিচারিক আদালত একতরফা রায় দিয়েছেন উল্লেখ করে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন বলেন, বিএনপির চেয়ারপারসনকে এ মামলায় বিচারিক আদালত ৫ বছর সাজা (কারাদণ্ড) দেন। হাইকোর্ট তা বাড়িয়ে ১০ বছর করেন। কীভাবে সাজা বাড়ানো হলো, তা উপস্থাপন করতে চান বলে শুনানিতে উল্লেখ করেন তিনি। এরপর বেগম খালেদা জিয়ার আইনজীবী কায়সার কামাল হাইকোর্টের রায়ের অংশবিশেষ উপস্থাপন করেন।

মামলার এজাহার, অভিযোগপত্র ও বিচারিক আদালতের রায়ের অংশবিশেষ তুলে ধরে দুদকের আইনজীবী আসিফ হাসান বলেন, ‘এখানে টাকা আত্মসাতের কিছু দেখা যাচ্ছে না। ফান্ড মুভ হয়েছে। টাকা অ্যাকাউন্টে জমা আছে। আত্মসাতের কিছু নেই।’ 

বিচারিক আদালতে বেগম খালেদা জিয়ার ৩৪২ ধারায় দেওয়া বক্তব্য শুনানিতে তুলে ধরেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান। তিনি বলেন, বেগম খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রীর এতিম তহবিলসংক্রান্ত কোনো অনুদান গ্রহণ বা বিতরণের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন না বলা হয়েছে। কবি কাজী নজরুল ইসলামের রাজবন্দির জবানবন্দির একটি প্রতিফলন ওই বক্তব্যে এসেছে। 

এরপর কয়েকটি যুক্তি তুলে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন বলেন, সাজা বাড়িয়ে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ে আইনের ত্রুটি রয়েছে এবং ভ্রান্তধারণাপ্রসূত। শুনানি নিয়ে আদালত সোমবার আদেশের জন্য দিন রাখেন। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। ৬ আগস্ট জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট ও জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় দণ্ড মওকুফ করে বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেওয়া হয়। 

এরপর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে করা আপিল শুনানির পূর্বপ্রস্তুতি হিসাবে পেপারবুক তৈরির জন্য অনুমতি চেয়ে বেগম খালেদা জিয়ার আবেদন ৩ নভেম্বর মঞ্জুর করেন হাইকোর্টের একটি দ্বৈত বেঞ্চ। হাইকোর্টে ২০১৮ সালে বেগম খালেদা জিয়া আপিলটি করেন।