তারেক রহমানের নেতৃত্বে উদ্দীপ্ত নেতাকর্মীরা

Any Akter
রাশেদুল হক
প্রকাশিত: ১২:০৮ অপরাহ্ন, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪ | আপডেট: ৯:০৪ পূর্বাহ্ন, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪
ছবিঃ সংগৃহীত
ছবিঃ সংগৃহীত

নানা নিপীড়ন ও ষড়যন্ত্রের পরও বিএনপিকে ভাঙতে পারেনি ফ্যাসিবাদি হাসিনা। দীর্ঘ ১৭ বছর হামলা-মামলা, গুম, খুন,নির্যাতন-নিপীড়নের সবচেয়ে বেশি শিকার হয়েছেন বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। এ সময় দুই শীর্ষ নেতা বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে সাজাসহ নানা ষড়যন্ত্রও মোকাবিলা করতে হয়েছে বিএনপিকে। ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি অবৈধ আমি-আর ডামি নির্বাচনে বিএনপি নেতাদের ভাগিয়ে নিতে সর্বশক্তি নিয়োগ করে ব্যর্থ হয় স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকার। বেঈমান শাহজাহান ওমর ছাড়া তেমন কাউকে ভাগাতে পারেনি তারা। নানা চাপ ও প্রলোভন থাকার পরও দল ভাঙার প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে পারেনি। দল ভাঙার তৎপরতার অংশ হিসাবে শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের গ্রেফতার, মামলা এবং সহশ্রাধিক নেতাকর্মীকে সাজাও দেওয়া হয়। নেতাদের ভোটে নিতে তৃণমূল বিএনপি, বিএনএম ও বিএসপি নামে কিংস পার্টি গঠন করা করা। এতেও সারা মেলেনি। সরকারবিরোধী আন্দোলনে থাকা বিএনপির জন্য এটিই বড় ধরনের সাফল্য ছিল। 

ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের প্রতি আস্থা এবং তার রাজনৈতিক দূরদর্শিতা ও দক্ষ নেতৃত্বের ফলে বিএনপিকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে পেরেছিলেন। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের তোড়ে ৫ আগস্ট ক্ষমতা ছেড়ে শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে গেলে আওয়ামী লীগের টানা ১৫ বছর ৭ মাসের শাসনের অবসান ঘটে। হাসিনা সরকারের পতন হলে ফের ঘুরে দাঁড়ায় বিএনপি। ভয়াবহ নিপীড়ণ ও জেল জুলুম থেকে মুক্ত হয়ে প্রাণশক্তি ফিরে পায় দলটির নেতাকর্মীরা। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের অক্লান্ত পরিশ্রম, দূরদর্শী সিদ্ধান্ত, ইতিবাচক রাজনীতি ও নিপীড়িত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর ঘটনায় আবারও সর্বস্তরের মানুষের ভালোবাসার দলে পরিণত হয়েছে দলটি। সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা অতীতের যে কোন সময়ের চেয়ে বেশি এখন উদ্দীপ্ত। 

আরও পড়ুন: উপদেষ্টাদের সততার ওপর পূর্ণ আস্থা প্রকাশ করল বিএনপি

বিএনপির সিনিয়র যুগ্মমহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেন, নিরন্তর নিপীড়নের মধ্য দিয়ে ফিনিক্স পাখির মতো জেগে উঠেছে বিএনপি। এর নেপথ্যে দেশনেত্রী খালেদা জিয়া। তার যে অদম্য সাহস এবং কোনো চাপের মুখে নতি স্বীকার না করার সহজাত বৈশিষ্ট্য, গোটা জাতি ও নেতাকর্মীদের উদ্বুব্ধ করার তার যে একটা বিশাল ক্ষমতা-মূলত এসবের প্রভাব পড়েছে। আবার উনি যখন কারাগারে যান, তখন একই কাজটা করলেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি দিনরাত পরিশ্রমের মধ্য দিয়ে এ দলকে আজ একটা ধ্বংসস্তূপের মধ্য থেকে জাগিয়ে তুলেছেন। দলের সব পর্যায়ের নেতাকর্মীকে স্কাইপের মাধ্যমে তৃণমূল থেকে জাতীয় পর্যায় পর্যন্ত কেউ তার দৃষ্টির বাইরে যেতে পারেনি। এসব মিলিয়ে এ দুজনের নেতৃত্বে এ দল আবারও পুনর্গঠিত হয়েছে, এ দল পুনরুজ্জীবিত।

বিএনপির কেন্দ্রীয় দপ্তর সূত্র জানায়, ২০০৯ সাল থেকে হাসিনা সরকারের পতনের আগ পর্যন্ত সারা দেশে দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে এক লাখ ৪১ হাজারের মতো মামলা হয়েছে। আসামি করা হয়েছে প্রায় ৫০ লাখ নেতাকর্মীকে। গত নির্বাচনের আগে বেশ কিছু মামলায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যসহ সহশ্রাধিক কেন্দ্রীয় ও মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীকে সাজা দেওয়া হয়েছে। ওই সব মামলায় নেতাকর্মীরা দীর্ঘদিন কারাগারেও ছিলেন।

আরও পড়ুন: বিএনপির কাছে নিরপেক্ষ মানুষও ভালো কিছু প্রত্যাশা করে: তারেক রহমান

তথ্য-উপাত্ত বলছে, আওয়ামী লীগ সরকারের প্রবণতাই ছিল মামলা দিয়ে নেতাকর্মীদের জেলে রাখা। দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের অনেকের বিরুদ্ধে পাঁচ শতাধিক মামলাও ছিল। দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ৩৭টি মামলা ছিল। ৫ আগস্টের পর দুই মামলায় সাজা মওকুফ করে মুক্তি দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি। আইনিভাবে মোকাবিলা করে অধিকাংশ মামলায় খালাস পেয়েছেন আপসহীন এই নেত্রী।   

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে এখনো অর্ধশতাধিক মামলা রয়েছে বলে জানিয়েছেন তাঁর আইনজীবী বিএনপির আইন সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল। তিনি  বলেন, তারেক রহমানের বিরুদ্ধে মামলার কয়েকজন বাদী মারাও গেছেন। অনেক বাদীকে বারবার সমন করেও আদালতে হাজির করা যায়নি। ফলে আইনি প্রক্রিয়া অনুযায়ী আটটি মামলা আদালত খারিজ করে দিয়েছেন। একুশে আগষ্ট মামলাসহ বেশ কয়েকটি মামলায় তার বিরুদ্ধে বিগত সরকারের দেওয়া ফরমায়েশি রায় বাতিল করেছেন আদালত। আইনিভাবে মোকাবিলা করে অধিকাংশ মামলা বাতিল বা খারিজ কিংবা খালাস পেয়েছেন তিনি।

৫ আগস্টের পর দীর্ঘ ১৭ বছর পর ঘুরে দাঁড়ায় বিএনপি। অন্তর্বর্তী সরকারকে সব ধরনের সহযোগিতা ও সমর্থন দেয় দলটি। বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষ্যে ৮ নভেম্বর রাজধানী ঢাকায় র‌্যালির মাধ্যমে শক্তি জানান দেয় বিএনপি। নয়াপল্টন থেকে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ পর্যন্ত র‌্যালিতে লাখ লাখ নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ অংশ নেন। বাংলাদেশের ইতিহাসে রাজধানীতে এত মানুষের উপস্থিতি কোনো রাজনৈতিক দলের র‌্যালিতে দেখা যায়নি। এছাড়া বেশ কয়েকটি সমাবেশ, সভা-সেমিনারও করেছে দলটি। রাষ্ট্র সংস্কারের ৩১ দফা নিয়ে বিভাগীয় পর্যায়ে কর্মশালা শেষে এখন জেলা পর্যায়ে কর্মশালা করছে, যা ব্যাপক সারা ফেলেছে জনগণের মধ্যে। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান প্রতিটি সেমিনারে ভার্চুয়ালিযুক্ত হয়ে বক্তব্য রাখছেন আবার তিনি নেতাকর্মীদের কাছ থেকে প্রশ্নও নিচ্ছেন এবং তাদের প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছেন। এর মাধ্যমে নেতাকর্মীরা কথা বলার সুযোগ পেয়ে উজ্জীবিতও হচ্ছেন। 

এদিকে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে দেশে-বিদেশে কূটনৈতিকসহ সব মহলে বিএনপির গুরুত্ব বাড়ছে। দলীয় প্রধান বেগম খালেদা জিয়া মুক্তি পাওয়ার পর বিভিন্ন দেশের হাইকমিশনার বা রাষ্ট্রদূতরা দেখা করছেন। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য,ভারত,চীন,রাশিয়া,পাকিস্তানসহ ঢাকায় বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকরা পৃথকভাবে গুলশান কার্যালয়ে বিএনপির মহাসচিবের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন।

অন্যদিকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের তারেক রহমানের দূরদর্শিতা, নানা দিকনির্দেশনা, বক্তব্য, ইতিবাচক মানসিকতা, সহনশীলতা, ধৈর্য ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সাধারণ মানুষসহ সব মহলে প্রশংসা কুড়িয়েছে। বিশেষ করে ৫ আগস্টের পরপর ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কঠোর নির্দেশনা, দূরদর্শী নেতৃত্ব এবং প্রতিহিংসার পরিবর্তে সহনশীল রাজনীতির কারণে শান্তিশৃঙ্খলা বজায় থাকে সারা দেশে। সেসময় বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের নির্দেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীশূন্য দেশে পাড়া-মহল্লায় পাহারা দিয়েছেন নেতাকর্মীরা। দুর্গাপূজায় মন্দিরে মন্দিরে পাহারা দিয়েছেন তারা। সেসময় তারেক রহমানের সেই ভূমিকা ছিল প্রশংসনীয়। শৃঙ্খলাবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছেন। ইতোমধ্যে এক হাজারেরও বেশি নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিয়েছেন। 

সাধারণ মানুষের দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে সাংগঠনিক কাজের উদ্দেশ্যে সফরকালে কোনো মোটরবহর এবং কারসহ অন্য কোনো যানবাহনে শোভাযাত্রা পরিহার ও ব্যানার-পোস্টার সরানোর নির্দেশ নেতাকর্মীদের দিয়েছেন। এছাড়া ইতোমধ্যে সাংগঠনিক জেলা ও তৃণমূলে সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি গঠন করতে ১০ বিভাগে ১০ জন সিনিয়র নেতাকে দায়িত্ব দিয়েছেন। তারা কাজও শুরু করেছেন। এ প্রসঙ্গে রুহুল কবির রিজভী বলেন, গতানুগতিক রাজনীতির বাইরে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ইতিবাচক ও পরিবর্তনের রাজনীতি জাতির সামনে নতুনভাবে আশার সঞ্চার করছে। 

মানুষের মন জয় করতে নিচ্ছেন একের পর এক যুগান্তকারী ও দূরদর্শী সিদ্ধান্ত। তিনি মনে করেন, তারেক রহমানের দূরদর্শী সিদ্ধান্ত ও রাষ্ট্র নিয়ে ভাবনা জনগণ গ্রহণ করেছে। তারেক রহমান নেতৃত্বের গুণাবলি দিয়ে প্রমাণ করেছেন, বিএনপি একটি বহুদলীয় গণতন্ত্রে বিশ্বাসী এবং উদার গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল। রাজনীতির বাইরেও আহতদের সহযোগিতা, গুম-খুন পরিবারের দায়িত্ব নেওয়াসহ নীরবে-নিভৃতে তারেক রহমানের কাজগুলোও অভাবনীয়। জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশন ও আমরা বিএনপি পরিবার সংগটনের মাধ্যমে এ কাজটি করা হচ্ছে।