বেগম খালেদা জিয়ার ৮১ তম জন্মদিন আজ

Rashedul Hoque
রাশেদুল হক
প্রকাশিত: ১০:৫৫ পূর্বাহ্ন, ১৫ অগাস্ট ২০২৫ | আপডেট: ১০:৫৫ পূর্বাহ্ন, ১৫ অগাস্ট ২০২৫
ছবিঃ সংগৃহীত
ছবিঃ সংগৃহীত

দেশের জনপ্রিয় রাজনৈতিক নেত্রী, চারবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী, গণতন্ত্রের মা বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার ৮০তম জন্মবার্ষিকী আজ। তিনি আজ পা রাখলেন ৮১ বছরে। এবারের জন্মদিন এমন এক সময় উদযাপিত হচ্ছে যখন বিগত পতিত সরকারের রাজনৈতিক জিঘাংসায় পড়ে সাড়ে ছয় বছর ধরে অন্যায় বিচারে বিনাচিকিৎসায় গুরুতর অসুস্থ তিনি। স্বৈরাচার হাসিনা সরকার তাঁকে চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত করেন। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর বন্দী জীবন থেকে মুক্তি পেয়েছেন বেগম জিয়া। এরপর চলতি বছরের ৮ জানুয়ারি উন্নত চিকিৎসার জন্য বেগম খালেদা জিয়াকে লন্ডনে নিয়ে যাওয়া হয়। প্রায় সাড়ে সাত বছর পর ছেলে তারেক রহমানের সাথে দেখা হয় তাঁর। লন্ডনে টানা ১৭ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর লন্ডন ক্লিনিক থেকে গত ২৫ জানুয়ারি বেগম খালেদা জিয়াকে তারেক রহমানের বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়। অর্ধযুগের বেশি সময় পর এবার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ঈদ উদ্‌যাপন করেছেন বেগম খালেদা জিয়া। ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের পতনে গতবারের মতো এবারের জন্মদিনেও দলের নেতা-কর্মী-সমর্থকরা আনন্দে আপ্লুত।

দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া বাংলাদেশের চারবারের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন। ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি একক সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসেবে নির্বাচিত হয়। এরপর ১৯৯১ সালের ২০ মার্চ বেগম খালেদা জিয়া দেশের প্রথম নারী যিনি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। বিরোধী দলের দাবি এবং প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার উদ্যোগে রাষ্ট্রপতি- শাসিত থেকে সংসদীয় সরকার ব্যবস্থায় উত্তরণের লক্ষ্যে ১৯৯১ সালের ৬ আগস্ট জাতীয় সংসদে সংবিধানের ঐতিহাসিক দ্বাদশ সংশোধনী বিলে সর্বসম্মতভাবে পাশ হয়। সংসদীয় সরকার ব্যবস্থার অধীনে বেগম খালেদা জিয়া ১৯ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দ্বিতীয়বারের মতো শপথ গ্রহণ করেন। এরপর ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্ব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি জয়যুক্ত হওয়ার পর তৃতীয় বার এবং সর্বশেষ ২০০১ সালের ১০ অক্টোবর চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রীর শপথ গ্রহণ করেন বেগম খালেদা জিয়া। কেবল তিনি চারবারের প্রধানমন্ত্রীই ছিলেন তাই নয়, বিগত পাঁচটি জাতীয় নির্বাচনে তিনি দেশের মোট ২৩টি আসন থেকে সর্বাধিক ভোটে নির্বাচিত হয়েছিলেন। যা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। বেগম খালেদা জিয়া বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির চেয়ারপারসন যিনি ১৯৯১ সাল থেকে চারবার বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী এবং মুসলিম বিশ্বের দ্বিতীয় নির্বাচিত নারী সরকার প্রধান। 

আরও পড়ুন: সংস্কার করে কালক্ষেপণ করলে ভয়ংকর বিপদ ডেকে আনবে: রুহুল কবির রিজভী

জাতীয়তাবাদী শক্তির অবিসংবাদিত এই নেত্রী ১৯৪৫ সালের ১৫ আগস্ট দিনাজপুরের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার মা চন্দনবাড়ির মেয়ে তৈয়বা মজুমদার আর পিতা ফেনীর ফুলগাজির ইস্কান্দার মজুমদার। দিনাজপুরে সুরেন্দ্রনাথ কলেজে পড়ার সময় তৎকালীন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন জিয়াউর রহমানের সঙ্গে পরিণয়সূত্রে আবদ্ধ হন। জিয়া-খালেদা জিয়া দম্পতির দুই সন্তান বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান পিনু আর মরহুম আরাফাত রহমান কোকো। ১৯৮১ সালের ৩১ মে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান কিছু বিপথগামী সেনা সদস্যের হাতে শাহাদাত বরণ করেন। ততদিন অবধি সাধারণ আটপৌরে গৃহবধূই ছিলেন খালেদা জিয়াা। শেষাবধি দলের নেতা-কর্মীদের দাবির টানে ঘরের চৌহদ্দি ডিঙ্গিয়ে নামতে হয় রাজপথে।

১৯৮২ সালের ৩ জানুয়ারি দলের প্রাথমিক সদস্যপদ গ্রহণ করেন বেগম খালেদা জিয়া। ১৯৮৪ সালের ১০ মে বেগম খালেদা জিয়া বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিএনপি চেয়ারপারসন নির্বাচিত হন।  ৯০-এ স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকায় তিনি আপসহীন নেত্রী  হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠেন। স্বৈরাচারের পতনের পর নির্বাচনে জনগণ বেছে নেন তাকে। বাংলাদেশে বেগম খালেদা জিয়াই একমাত্র নেত্রী, যিনি অন্তত ১১ বার বন্দিদশা মোকাবিলা করে স্বৈরশাসকের রক্তচক্ষুকে ভ্রুকুটি করে ষড়যন্ত্র ও কুটিলতার জাল ছিন্ন করে, গণতান্ত্রিক আন্দোলনের উজ্জ্বল পতাকা ঊর্ধ্বে তুলে ধরেছিলেন এবং সফলকাম হয়েছিলেন।

আরও পড়ুন: কারাগারে খালেদা জিয়াকে নির্যাতনের অভিযোগ, জড়িতদের বিচার দাবি মির্জা আব্বাসের

বেগম খালেদা জিয়ার ওপর সবচেয়ে বড় আঘাত আসে ওয়ান ইলেভেনের সময়। ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারির সেনানিয়ন্ত্রিত সরকার ক্ষমতা কুক্ষিগত করার জন্য বেগম খালেদা জিয়া, তারেক রহমান ও আরাফাত রহমান কোকোসহ জিয়া পরিবারের ওপর নেমে আসে নির্মম উত্পীড়ন-নির্যাতনের ভয়াবহতা। বেগম খালেদা জিয়াকে বন্দি করে সাব-জেলে নিক্ষেপ করা হয়। দেশ ত্যাগে বাধ্য করতে তার ওপর নানামুখী চাপ সৃষ্টি করা হয়। তারেক রহমানকে বন্দি করে হত্যার চেষ্টা করা হয়। এই জনপ্রিয়তম নেতাকে হত্যার জন্য পঙ্গু করে দেওয়া হয়। তার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোকে বন্দি করা হয়। চলে নিপীড়ন। পরবর্তীকালে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর শুরু হয় বেগম খালেদা জিয়া-তারেক রহমান ও বিএনপি বিনাশের নীলনকশা।

তারই ধারাবাহিকতায় শেখ হাসিনার বিতর্কিত আদালত কথিত জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি বেগম জিয়াকে কারাবন্দি করেন। সেই থেকে শুরু হয় তার জেলজীবন। জেলে তাকে বিনা চিকিত্সায় জীবননাশের উপক্রম করা হয়। প্রায় দুই বছর পর ২০২০ সালের ২৫ মার্চ বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের সময় পারিবারিক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ছয় মাসের জন্য শর্তসাপেক্ষ মুক্তি পান বেগম খালেদা জিয়া। এরপর দফা-দফায় ছয় মাস করে তার মুক্তির মেয়াদ বাড়ায় সাবেক সরকার। তাকে উন্নত চিকিত্সার কোনো সুযোগ দেওয়া হয়নি। অতঃপর ফ্যাসিস্ট হাসিনার পতনকাল। গত বছর ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার পর দেশ স্বৈরাচারমুক্ত হয়। পরদিন ৬ আগস্ট রাষ্ট্রপতির আদেশে মুক্তি পান বেগম খালেদা জিয়া।

মিলাদ ও দোয়া মাহফিলের কর্মসূচি : আজ ১৫ আগস্ট শুক্রবার বেগম খালেদা জিয়া ৮১ বছরে পা দিচ্ছেন। বিগত কয়েক বছরের ন্যায় এবারও জন্মদিনে নেতাকর্মীদের কেক কাটতে নিষেধ করা হয়েছে। বিএনপির কেন্দ্রীয় দপ্তর থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আজ শুক্রবার বেগম খালেদা জিয়ার জন্মদিন উপলক্ষ্যে সুস্থতা ও দীর্ঘায়ু কামনায় এবং একই সঙ্গে ‘৭১ এর মুক্তিযুদ্ধে জীবনদানকারী শহিদগণ, ‘৯০-এর গণতান্ত্রিক আন্দোলনে ও ‘২৪-এর গণঅভ্যুত্থানে শহিদদের আত্মার মাগফিরাত ও আহতদের আশু সুস্থতা কামনায় বিএনপির উদ্যোগে ঢাকাসহ দেশব্যাপী দলীয় কার্যালয় অথবা মসজিদে মিলাদ ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। বেগম খালেদা জিয়ার জন্মদিন উপলক্ষ্যে মিলাদ ও দোয়া মাহফিল ব্যতিরেকে কেক কাটা কিংবা অন্য কোনো আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠান না করার জন্য সব নেতাকর্মীর প্রতি আহ্বান জানানো হচ্ছে। ঢাকার নয়াপল্টনে বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নিচতলায় আজ শুক্রবার বেলা ১১টায় মিলাদ ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। অনুষ্ঠানে বিএনপির সিনিয়র নেতৃবৃন্দ উপস্থিত থাকবেন।