উপদেষ্টাদের সেফ এক্সিটের প্রয়োজন নেই: আইন উপদেষ্টা

আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, বর্তমানে 'সেফ এক্সিট' নিয়ে নানান রকম কথাবার্তা হলেও উপদেষ্টারা ভালোভাবেই জানেন যে তাঁদের কোনপ্রকার কোনো 'সেফ এক্সিট' এর দরকার নেই।
শনিবার ( ১১ অক্টোবর) দুপুরে রাজধানীর ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে অনুষ্ঠিত 'জাতীয় মানবাধিকার কমিশন অধ্যাদেশ, ২০২৫' এর খসড়া বিষয়ক জাতীয় পরামর্শ সভার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেয়ার সময় তিনি একথা বলেন।
আরও পড়ুন: নির্বাচনকে বিলম্বিত করতেই পিআর পদ্ধতির নামে আন্দোলন হচ্ছে: মির্জা ফখরুল
উদ্বোধন অনুষ্ঠানের পর মোট চারটি অধিবেশনে উক্ত অধ্যাদেশের খসড়া নিয়ে আলোচকরা বিভিন্ন পরামর্শ তুলে ধরেন। এর আগে বিভাগীয় পর্যায়েও এই অধ্যাদেশের খসড়া নিয়ে পরামর্শ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
জাতিসংঘের উন্নয়ন সংস্থা - ইউএনডিপির আর্থিক ও কারিগরি সহায়তায় আইন মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগ এসব পরামর্শ সভার আয়োজন করে।
আরও পড়ুন: নির্বাচনে মাঠ প্রশাসনের নিরপেক্ষতা নিশ্চিতের নির্দেশনা: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
উদ্বোধন অনুষ্ঠানে আইন উপদেষ্টা আরও বলেন, "আপনারা জানেন এখন 'সেফ এক্সিট' নিয়ে নানান কথাবার্তা হচ্ছে, আমরা উপদেষ্টারা খুব নিশ্চিতভাবে জানি আমাদের কারো কোনো 'সেফ এক্সিট' এর প্রয়োজন নেই, তবে বাংলাদেশে জাতি হিসেবে আমাদের 'সেফ এক্সিট' এর প্রয়োজন আছে। "
তিনি বলেন," গত ৫৫ বছর আমরা যে দুঃশাসন, গুম ও বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড দেখলাম, দেখলাম ব্যাংক থেকে সাধারণ মানুষের আমানতের টাকা লুট হচ্ছে- এ ধরনের একটি ভয়াবহ, অসুস্থ ও আত্নধ্বংসী রাষ্ট্র কাঠামো থেকে আমাদের এ জাতির সেফ এক্সিট-এর প্রয়োজন রয়েছে ।"
তিনি বলেন, বাহাত্তরের সংবিধানে বলা হয়েছিলো যে রাষ্ট্রপতি প্রধান বিচারপতিকে স্বাধীনভাবে নিয়োগ করবেন, যেন এতে রাজনৈতিক প্রভাব না থাকে। কিন্তু আপনারা সবাই জানেন, রাষ্ট্রপতি কখনই স্বাধীনভাবে প্রধান বিচারপতিকে নিয়োগ করতে পারেননি, এদেশে সবসময় প্রধান বিচারপতি নিয়োগ পেয়েছে প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছা অনুযায়ী।
আইন উপদেষ্টা বলেন, "আমরা এমন প্রধান বিচারপতিও পেয়েছি, যারা মানবাধিকার লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দিয়েছেন। বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যবস্থা ও গণতন্ত্র ধ্বংস করার ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দিয়েছেন। যারা নিজের চোখে গুম , বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড দেখেও তা উপেক্ষা করেছেন। যেসকল বিচারক মানবাধিকার লংঘনে সোচ্চার ভূমিকা পালন করেছে, তাদের শাস্তি দিতে ব্যর্থ হয়েছেন। "
তিনি বলেন, "দুঃখজনকভাবে এমন কেউ কেউ এখনো বিচার বিভাগে রয়ে গেছে। আমরা ইনস্টিটিউশনাল রিফর্ম এর পথে কিছুটা অগ্রসর হয়েছি, পুরোটা করতে পারি নাই। পরের যারা নির্বাচিত সরকার হবেন, তাঁদের কাছে এই দায়িত্বটা থাকলো। "
আইন উপদেষ্টা বলেন, "আমরা হয়তো ভালো ভালো কিছু আইন করে যাচ্ছি কিন্তু ভালো আইন করা মানেই পুরো দেশটা বদলে যাবে সেরকম নয়। দেখা গেছে অনেক ভালো ভালো আইন করা হলেও সে আইন যে প্রতিষ্ঠানের জন্য করা হয়েছে সে প্রতিষ্ঠানই দাঁড়ায় না। আইন করার ক্ষেত্রে আমাদের কোন ব্যর্থতার ইতিহাস কম, কিন্তু প্রতিষ্ঠান করার ক্ষেত্রে আমাদের ব্যর্থতা সীমাহীন। "
ভালো প্রতিষ্ঠান গড়ার কাজটি একটি নিরন্তর প্রক্রিয়া উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমার কাছে সবচেয়ে বেশি মনে হয়েছে, প্রতিষ্ঠান গড়ার ক্ষেত্রে আমাদের অসীম সীমাবদ্ধতা রয়েছে। বিভিন্ন রকম সীমাবদ্ধতা রয়েছে। প্রতিষ্ঠান কি, সেটা আমরা বুঝিই না। আমরা ব্যক্তি বুঝি। আশা করব এই আইনটি দ্বারা সত্যিকার অর্থে একটি শক্তিশালী মানবাধিকার কমিশন আমরা প্রতিষ্ঠা করতে পারবো।
এ ভয়াবহ রাষ্ট্র কাঠামো থেকে উত্তরণের উপায় হিসেবে কিছু কিছু প্রতিষ্ঠানকে শক্তিশালী করার প্রয়োজন আছে জানিয়ে তিনি বলেন, "এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে উচ্চ আদালত ও সংসদীয় কমিটি। এবং সেই সঙ্গে আরও কিছু জবাবদিহিমূলক প্রতিষ্ঠানকে আমাদের শক্তভাবে দাঁড় করাতে হবে, যার মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। এটি করতে ব্যর্থ হলে দেশের যেকোনো মানুষ যেকোনো সময় গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার হতে পারেন।"
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনকে শক্তিশালী করার সম্পর্কে তিনি বলেন, এটি সরকার বা কোনো একক ব্যক্তির নয় বরং আমাদের সকলের দায়িত্ব।
সংশোধিত আইনটি জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের দক্ষতা বৃদ্ধি করবে এবং স্বাধীনতাকে আরো শক্তিশালী করবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
অনুষ্ঠানে আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল এর পাশাপশি এতে বক্তব্য দেন গৃহায়ণ ও গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, এটর্নী জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান, আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের সচিব ড. হাফিজ আহমেদ চৌধুরী, ড. হাফিজ আহমদ চৌধুরী, বাংলাদেশে নিযুক্ত সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত রেতো সিগফ্রেড রেংগলি, ডেনিশ দূতাবাসের ডেপুটি হেড অফ মিশন এন্ডার্স বি. কার্লসেন, ইউনাইটেড নেশনস ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রামের (ইউএনডিপি) রেসিডেন্ট রিপ্রেজেন্টেটিভ স্টেফান লিলারসহ আরো অনেকে।
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ইউএনডিপি বাংলাদেশের আইন, বিচার এবং নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা রোমানা শোয়েগার।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন আইন মন্ত্রণালয় ও জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাবৃন্দ, দেশ বিদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আগত শিক্ষক ও শিক্ষার্থী, বিভিন্ন মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠন ও সংস্থার প্রতিনিধি এবং বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী।