‘জুলাই শহীদ ও যোদ্ধাদের’ স্বীকৃতি প্রদান, আজীবন ভাতার দাবিতে রাজধানীতে বিক্ষোভ

২০২৪ সালের ঐতিহাসিক জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নিহত ও আহতদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি, ন্যায়বিচার এবং আজীবন কল্যাণ নিশ্চিতের দাবিতে রাজধানীতে বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। সোমবার (১৩ অক্টোবর) সকাল ১১টায় শাহবাগ থেকে বিক্ষোভ মিছিলটি শুরু হয়ে প্রেস ক্লাব অভিমুখে অগ্রসর হয়। এতে অংশ নেন জুলাই শহীদ পরিবারের সদস্য, আহত জুলাই যোদ্ধা এবং গণঅভ্যুত্থানে অংশ নেওয়ার জুলাই যোদ্ধারা।
মিছিল থেকে বক্তারা দাবি করেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থান জাতির ইতিহাসে স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের পুনর্জাগরণের প্রতীক। এই আন্দোলনে যারা জীবন দিয়েছেন, তাঁরা জাতির “জুলাই শহীদ” এবং যারা রক্ত দিয়েছেন ও সংগ্রাম করেছেন, তাঁরা “জুলাই যোদ্ধা”। রাষ্ট্রের নৈতিক ও সাংবিধানিক দায়িত্ব তাদের স্বীকৃতি ও সুরক্ষা নিশ্চিত করা।
আরও পড়ুন: এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল প্রকাশের তারিখ ঘোষণা
এসময় বক্তারা চারটি মূল ধারা ও সংশ্লিষ্ট দাবিগুলো উল্লেখ করেন।
ধারা–০১: জুলাই শহীদ ও জুলাই যোদ্ধাদের স্বীকৃতি
আরও পড়ুন: ঢাবি ও ঢাকা কলেজ শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ: নীলক্ষেতে রাতভর উত্তেজনা
১. ২০২৪ সালের জুলাই গণঅভ্যুত্থানে জীবন উৎসর্গকারী সকল বীর সন্তানকে “জুলাই শহীদ” (জাতীয় বীর) হিসেবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিতে হবে।
২. আন্দোলনে আহত, নির্যাতিত ও সংগ্রামী নাগরিকদের “জুলাই যোদ্ধা” (বীর) হিসেবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিতে হবে।
বক্তারা বলেন, রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি শুধু একটি সম্মান নয়—এটি ইতিহাসের দায়বদ্ধতা ও জাতির আত্মপরিচয়ের অংশ।
ধারা–০২: রাষ্ট্রের অঙ্গীকার ও দায়বদ্ধতা
১. শহীদ পরিবার ও আহতদের জন্য আজীবন সম্মান, চিকিৎসা, শিক্ষা, আবাসন ও আর্থিক সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে।
২. রাষ্ট্র তাদের প্রতি পূর্ণ দায়িত্ব গ্রহণ করবে এবং সকল কল্যাণমূলক ব্যয় সরাসরি রাষ্ট্রীয় বাজেট থেকে বহন করতে হবে।
৩. আহত ও শহীদ পরিবারদের জন্য সম্মানজনক আজীবন ভাতা দিতে হবে, যা নাগরিক অধিকার হিসেবে সংরক্ষিত থাকবে।
৪. এই পরিবারগুলোর প্রতি অবহেলা, বৈষম্য বা অধিকারহরণ ঘটলে তা রাষ্ট্রদ্রোহী বা বিশেষ অপরাধ হিসেবে গণ্য করে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে।
৫. শহীদ পরিবার ও আহতদের জন্য বিশেষ আইনি সহায়তা কেন্দ্র ও কল্যাণ ট্রাস্ট গঠন করতে হবে।
বক্তারা বলেন, যাঁরা জাতির গণতান্ত্রিক মুক্তির জন্য রক্ত দিয়েছেন, তাঁদের পরিবার যেন রাষ্ট্রের কাছে অবহেলিত না থাকে।
ধারা–০৩: ন্যায়বিচার ও দায়বদ্ধতা
১. জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত দমন-পীড়ন, গুলি, নির্যাতন ও হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার মানদণ্ডে বিচার সম্পন্ন করতে হবে।
২. একটি স্বাধীন “সত্য ও ন্যায় কমিশন (Truth & Justice Commission)” গঠন করতে হবে, যেখানে প্রত্যক্ষ ভুক্তভোগী, শহীদ পরিবারের সদস্য ও আহতরা তাদের সাক্ষ্য ও অভিজ্ঞতা পেশ করতে পারবেন।
৩. কমিশনের প্রতিবেদন রাষ্ট্রীয় আর্কাইভে সংরক্ষিত থাকবে এবং জাতির ইতিহাসের অংশ হিসেবে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে উন্মুক্ত রাখতে হবে।
বক্তারা বলেন, জবাবদিহিহীনতার সংস্কৃতি ভাঙতে হলে সত্য কমিশন গঠন জরুরি। অপরাধীদের বিচার ও ইতিহাসের নথিবদ্ধতা জাতির আত্মসম্মানের প্রশ্ন।
ধারা–০৪: স্মৃতি সংরক্ষণ ও ঐতিহ্য প্রতিষ্ঠা
১. “জুলাই গণঅভ্যুত্থান” স্মরণে প্রতি বছর জুলাই গণতন্ত্র দিবস রাষ্ট্রীয়ভাবে পালন করতে হবে।
২. ঢাকা ও অন্যান্য শহরে জুলাই স্মৃতি সৌধ ও জাদুঘর নির্মাণ করতে হবে, যেখানে শহীদদের নাম, ছবি ও জীবনী সংরক্ষিত থাকবে।
৩. শিক্ষা পাঠ্যক্রমে “জুলাই গণঅভ্যুত্থান” অন্তর্ভুক্ত করতে হবে, যেন ভবিষ্যৎ প্রজন্ম এই ইতিহাস থেকে প্রেরণা পায়।
বক্তারা বলেন, এই আন্দোলন শুধু একটি রাজনৈতিক ঘটনা নয়—এটি নতুন বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক চেতনার সূচনা। তাই এর স্মৃতি প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে পৌঁছে দিতে হবে।