স্টারলিংককে সবুজ সংকেত দিলো বিটিআরসি

বাংলাদেশে স্যাটেলাইটভিত্তিক ইন্টারনেট সেবা চালু করতে লাইসেন্স পেতে সবুজ সংকেত পেয়েছে এলন মাস্কের স্পেসএক্স পরিচালিত স্টারলিংক। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) ইতোমধ্যে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের কাছে লাইসেন্স অনুমোদনের জন্য চিঠি পাঠিয়েছে।
বিটিআরসি চেয়ারম্যান মো. এমদাদ উল বারী জানান, "আমরা গত সপ্তাহেই পূর্বানুমোদনের জন্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছি। অনুমোদন পেলেই নির্ধারিত ফি নিয়ে লাইসেন্স ইস্যু করা হবে।"
আরও পড়ুন: স্ক্রিন টাইম শিশুদের মস্তিষ্কে ধারণার তুলনায় অনেক বেশি জটিল ক্ষতিকর
স্টারলিংক সার্ভিসেস বাংলাদেশ লিমিটেড গত ৭ এপ্রিল বিটিআরসির ‘নন-জিওস্টেশনারি অরবিট (এনজিএসও) স্যাটেলাইট সার্ভিসেস অপারেটরদের জন্য নির্দেশিকা’ অনুযায়ী লাইসেন্সের আবেদন করে। কোম্পানিটির স্থানীয় অফিস ঢাকার কারওয়ান বাজারে অবস্থিত।
আবেদনের পর বিটিআরসি সাত সদস্যের একটি যাচাই কমিটি গঠন করে, যারা প্রয়োজনীয় নথিপত্র বিশ্লেষণ করে লাইসেন্সের জন্য সুপারিশ করে। এরপর দুই সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল স্টারলিংকের অফিস পরিদর্শন করে এবং একই সুপারিশ দেয়। বিটিআরসির এক কর্মকর্তা জানান, এটি এ ধরনের লাইসেন্সের ক্ষেত্রে সবচেয়ে দ্রুততম সুপারিশ।
আরও পড়ুন: আপনার মোবাইলই আপনার অফিস: স্মার্টফোন দিয়ে ব্যবসা চালানোর ৭ উপায়
উল্লেখযোগ্যভাবে, গত মার্চে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনুস স্টারলিংকের বাণিজ্যিক উদ্বোধন ৯০ দিনের মধ্যে নিশ্চিত করতে নির্দেশ দেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে।
স্টারলিংক ২০২১ সাল থেকে বাংলাদেশের বাজারে প্রবেশের চেষ্টা করছে। বিটিআরসি ২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে স্যাটেলাইট ইন্টারনেটের জন্য নির্দেশিকা তৈরির উদ্যোগ নেয় এবং ২০২৪ সালের মার্চের শেষ দিকে চূড়ান্ত নির্দেশিকা জারি হয়। এর আগে, ২৯ মার্চ প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) থেকে কার্যক্রম শুরুর অনুমোদন পায়।
বর্তমানে স্টারলিংক বিশ্বজুড়ে ৬,০০০-এর বেশি স্যাটেলাইট পরিচালনা করছে এবং তিন মিলিয়নের বেশি ব্যবহারকারীকে সেবা দিচ্ছে। দুর্গম ও সংযোগবিচ্ছিন্ন এলাকায় উচ্চগতির ব্রডব্যান্ড সরবরাহে স্টারলিংক বিশেষভাবে কার্যকর।
তবে সেবার মূল্য ও প্রাথমিক যন্ত্রপাতির খরচ বাংলাদেশের মতো দেশে একটি বড় চ্যালেঞ্জ হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, যুক্তরাষ্ট্রে মাসিক ফি ১২০ ডলার হলেও আফ্রিকার কিছু অঞ্চলে এটি ভর্তুকির আওতায় ৩০-৪০ ডলার পর্যন্ত নামিয়ে আনা হয়েছে। তবে স্যাটেলাইট ডিশ ও রাউটারসহ প্রাথমিক খরচ ২০০ থেকে ৫০০ ডলার পর্যন্ত হয়।
শিল্প বিশ্লেষকদের মতে, বাংলাদেশের বাজারে স্টারলিংকের সফলতা অনেকটাই নির্ভর করবে সরকারের নীতিমালা, মূল্য নির্ধারণ কৌশল এবং স্থানীয় বাস্তবতার ওপর।
চূড়ান্ত অনুমোদন পেলেই স্টারলিংক কয়েক মাসের মধ্যেই বাংলাদেশে সেবা চালু করতে পারবে বলে আশা করা হচ্ছে, যা দেশের ডিজিটাল সংযুক্তি ও স্মার্ট বাংলাদেশ বাস্তবায়নে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ হতে পারে।