বিদেশ যাওয়ার টাকা দিয়ে উল্টো বিপদে নরসিংদীর সোহেল রানা

নরসিংদী শহরতলীর চিনিশপুর ইউনিয়নের দাসপাড়া মহল্লার ওয়ারেশ সরকারের ছেলে সোহেল রানা। স্বপ্ন ছিল বিদেশ গিয়ে পরিবারের স্বচ্ছলতা ফিরে আনবে। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস সেই স্বপ্ন স্বপ্নই রয়ে গেলো। বিদেশে যাওয়ার জন্য ধার- দেনা করে দালালকে দেয়া ৪টাকা পরিশোধ করা এখন গলার কাটা হয়ে দাড়িয়েছে। এই টাকা নেয়ার জন্য পাওনাদারগণ এখন তাগাদা দিচ্ছে।
এ ঘটনায় সহল রানা বাদি হয়ে নরসিংদী আদালতে মানব পাচার আইনে একটি মামলা দায়ের করেন।
আরও পড়ুন: চাঁদাবাজি নয়, নেপথ্যে নকশা বহির্ভূত ভবন নির্মাণ কাহিনী
মামলার বিবরনে জানা গেছে, দালালের খপ্পরে পড়ে প্রতারিত হয়ে ৪ মাস জেল খেটে দেশে ফেরেন সোহেল রানা। দালাল চক্রের হাতে নির্যাতনের শিকারসহ টাকা পয়সা হারিয়ে নিঃস্ব সোহেল দেশে ফিরে টাকা ফেরত পাওয়ার আশায় দীর্ঘদিন দালাল চক্রের পিছনে ঘুরেছেন। এতে ব্যর্থ হয়ে অবশেষে আদালতের দারস্থ হয়েছেন সোহেল।
প্রতারিত সোহেল রানা জানায়, শহরতলীর দাসপাড়া এলাকার মৃত আসাব উদ্দিনের স্ত্রী ফাতেমা বেগমের মাধ্যমে পরিচয় হয় নারায়ণগঞ্জ জেলার আড়াইহাজার উপজেলা বিশনন্দী চৈতনকান্দা এলাকার আলা উদ্দিনের ছেলে দালাল দেলোয়ারের সাথে।
আরও পড়ুন: আশুলিয়ায় বকেয়া বেতনের দাবিতে দেড় ঘণ্টা সড়ক অবরোধ
দোলোয়ার হোসেন নরসিংদীর সোহেল রানাকেকে বৈধ পথে ৪ লাখ টাকার বিনিময়ে মালয়েশিয়া নেয়ার কথা বলে তার কাছ থেকে প্রথমে ৩০ হাজার টাকা ও পাসপোর্ট নেন। পরবর্তীতে ২০২৩ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি ঢাকা ব্যাংকের মাধ্যমে আরও ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা এবং নগদ ১ লাখ ২০ হাজার টাকা নেন নিয়ে নেন।
সোহেল রানা বিূেশ যাওয়ার স্বপ্ন পুরনের লক্ষে ঢাকা নয়া পল্টন এলাকায় চায়না টাওয়ারে অবস্থিত বঙ্গ ট্রাভেল এজেন্সির মালিক মনিরুল ইসলাম নিলয়ের মাধ্যমে ২০২৩ সালের ২ জুন বিমান যোগে সিঙ্গাপুর যায় সোহেল। সিঙ্গাপুর থেকে ৩ জুন বিমানযোগে কম্বোডিয়া যান। কম্বোডিয়ায় ২০/২৫ জন লোকের সাথে একটি হোটেলে অবরোদ্ধ হয় সোহেলসহ আরও কয়েকজন। পরে ১৪ জন লোক গ্রুপভিত্তিক বিকল্প রাস্তা উদ্দেশ্যে প্রায় ৭ কিলোমিটার হাটার পর একটি গাড়িতে করে প্রায় ১৭ ঘন্টা গাড়ী চালিয়ে মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ডের মাঝে একটি অজানা কক্ষে আটকে রাখা হয়।
ওখানে একদিন রেখে একটি ইঞ্জিন চালিত নৌকায় করে ২০২৩ সালের ৬ জুন থাইল্যান্ড থেকে মালয়েশিয়ায় প্রবেশ করান। সেখান থেকে দীর্ঘ ৯ ঘন্টায় গাড়ি করে মালয়েশিয়া রাজধানী কুয়ালামপুরে একটি হোটেল রাখা হয়।
পরে রাতে পাসপোর্ট ও মোবাইল ছিনিয়ে নিয়ে নির্যাতন করে তার মাধ্যমে দেশে ফোন করিয়ে ৩ লাখ টাকা মুক্তিপন দাবি করেন দালাল চক্র। টাকা দিতে সোহেল এর পরিবার ব্যর্থ হওয়ায় অবৈধ অভিবাসি হিসেবে সোহেল সহ রুমের সকলকে ৭ জুন রাতে মালয়েশিয়ার পুলিশের হাতে ধরিয়ে দেয় দালাল চক্র।
৮ জুন সোহেলের পরিবারের কাছে দালাল চক্র ডাচবাংলা ব্যাংকের মাধ্যমে ৩ লাখ ১০ হাজার টাকা গ্রহণ করলেও সোহেলের সাথে কারো কোনো যোগাযোগ নেই।
দীর্ঘ ৪ মাস জেল খাটার পর মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ হাই কমিশনের মাধ্যমে ২০২৩ সালের ৩০ শে আগষ্ট দেশে ফেরেন সোহেল। দেশে ফিরে টাকা উদ্ধারের জন্য দালাল চক্রের পিছনে ঘুরে ব্যর্থ হয়ে অবশেষে নরসিংদী জজ কোর্টে মানবপাচার অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনাল আদালতে ভূক্তভোগী সোহেল রানা বাদী হয়ে দালাল চক্রের ৫ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেন।
আদালত মামলাটি তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থ্য গ্রহনের জন্য নরসিংদী সদর থানায় হস্তান্তর করেন। এদিকে মামলা দায়েরের পর থেকে দালাল চক্রের সদস্যরা সোহেলকে মামলা প্রত্যাহার করতে নানাভাবে হুমকি দিয়ে আসছেন বলে জানায় সোহেল। এরই জের ধরে সোহেল নরসিংদী সদর মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়রি করেছেন।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত দালাল দেলোয়ার এর সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে তার ব্যবহৃত ফোন নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।
মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা নরসিংদী সদর মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আব্দুল গাফফার জানান, মামলাটির তদন্ত চলমান রয়েছে। আমরা বাদীকে নোটিশ করেছি, বাদীকে হাজির হতে বলা হয়েছে।
অভিযোগকারীকে যেই শর্তে মালয়েশিয়ায় নিয়ে কাজ দেয়ার কথা ছিল সেরকমটি ঘটেনি বলেই মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে। মামলাটির তদন্ত চলছে, আশা করছি দ্রুতই আদালতে প্রতিবেদন দেয়া সম্ভব হবে।