গুজব ছড়িয়ে ভাঙচুর চালালে আইনগত ব্যবস্থা নেব: পুলিশ মহাপরিদর্শক

Sanchoy Biswas
গাজীপুর জেলা সংবাদদাতা
প্রকাশিত: ৪:৫৪ অপরাহ্ন, ১৩ মার্চ ২০২৫ | আপডেট: ৯:৫৮ অপরাহ্ন, ১২ অগাস্ট ২০২৫
ছবিঃ সংগৃহীত
ছবিঃ সংগৃহীত

পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম শিল্প খাতের সকল স্টেক হোল্ডার, শ্রমিক নেতৃবৃন্দসহ সকলের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, আপনারা কোন গুজবে কান দেবেন না। শ্রমিক ভাই-বোনেরা আপনারা নিজ কর্মস্থলের ক্ষতি করবেন না। ভাঙচুর করে নিজেদের প্রিয় কর্মস্থলের কোনো ধরনের ক্ষতি হতে দিবেন না। আমরা দেখেছি গুজব ছড়াবার কারণে অনিয়মতান্ত্রিক ও ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম চালানো হয়। যদি এরকম গুজব ছড়িয়ে ভাঙচুর চালানো হয় তাহলে আমরা সকল ক্ষেত্রে যারা এরকম ধ্বংসাত্মক কাজ করবে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেব।

বৃহস্পতিবার সকালে গাজীপুর ভোগড়া বাইপাস এলাকায় শিল্পাঞ্চল পুলিশ-২ এর হেডকোয়ার্টারে সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে মিডিয়া ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেন তিনি ।

আরও পড়ুন: কিশোরগঞ্জে নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন নিয়ে বিএনপি'র দুই গ্রুপের সংঘর্ষ

তিনি বলেন, কোনোভাবেই রাস্তা অবরোধের মত কোনো ধরনের জনদুর্ভোগের কাজ করা যাবে না। আমরা আশা করি, সাধারণ জনগণ, শিল্প এলাকার বাসিন্দাসহ আমাদের সকল সদস্য নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করতে আমাদের পুলিশকে সহযোগিতা করবেন। 

সমাজের সকলের প্রতি আহবান জানিয়ে পুলিশ মহাপরিদর্শক বলেন, আপনারা পুলিশকে সহায়তা করুন, কাজের পরিবেশ তৈরি করুন। পুলিশকে প্রতিপক্ষ ভাববেন না, পুলিশের প্রতি আক্রমণ করবেন না, আইন ও সংবিধানের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করুন। দেশ গঠনে আমাদেরকে দেশের সেবা করার সুযোগ  দিন ।

আরও পড়ুন: সৌন্দর্যের স্বর্গরাজ্য ভোলাগঞ্জের সাদা পাথর কোথায় গেল?

তিনি আরও বলেন, ঈদের ছুটিতে ঢাকা থেকে লক্ষ লক্ষ মানুষ বহির্গমন হন। বিপুলসংখ্যক মানুষ ঈদ উদ্‌যাপনের জন্য বাইরে যান। তাদের এই আনন্দযাত্রায় যেন কোন বিঘœ না ঘটে, তার জন্য শিল্প পুলিশ, ট্র্যাফিক পুলিশ, গাজীপুর মেট্টোপলিটন পুলিশ, ঢাকা মেট্টোপলিটন  বিভিন্ন পুলিশ নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। আমার অনুরোধ শ্রমিক ভাই ও বোনেরা, আপনারা দাবি আদায়ের জন্য রাস্তা আটকাবেন না। তাহলে লক্ষ লক্ষ মানুষের দুর্ভোগের কারণ হয়। আপনারা তাদের বছরের এই একটা আনন্দযাত্রায় বিঘœ হয়ে দাঁড়াবেন না। এ ধরনের কার্যকলাপ যেই করবে, আমরা এ বিষয়ে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত কঠোর পদক্ষেপ নেব।

পুলিশ প্রধান বলেন, শ্রম মন্ত্রণালয়ের সভায় সিদ্ধান্ত নেয়য়া হয়েছিল যে- শ্রমিকদের ফেব্রুয়ারি মাসের বকেয়া বেতন, ঈদের বোনাস ও মার্চ মাসের আংশিক বেতন আগামী ২০ রমজানের মধ্যে পরিশোধ করা হবে। আমি সকল শ্রমিক ভাই-বোনদের প্রতি এই প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি তাদের এই ন্যায় সঙ্গত পাওনা আদায়ের জন্য সকল পক্ষের সাথে আলোচনায় আছি এবং  সবসময় আপনাদের পাশেই থাকবো।

এর আগে তিনি বিশেষ কল্যাণ সভায় পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখেন। ওই সভায় তিনি বলেন,  ৫ আগস্টের আগে কি অবস্থা ছিল সেটা আপনারা জানেন। আমাদের কিছু কিছু সদস্য, যারা মোস্ট সিনিয়র অফিসার ছিলেন, তাদের অতি উৎসাহ ও তাদের রাজনৈতিক আনুগত্যে, তিনি বলেন, সরকারি কর্মচারী আমি, আমার কীসের রাজনৈতিক আনুগত্য থাকবে? আমি কোনো আওয়ামী লীগ-বিএনপি কিছু বুঝি না। ওনাদের রাজনৈতিক আনুগত্যের জন্য, অমিমৃষ্যকারীতার জন্য পুরো পুলিশ কলঙ্কিত হয়েছে। সারা বিশ্ব এখন বলে, বাংলাদেশ পুলিশ এত নির্মম কীভাবে হল।

তিনি বলেন, আমাদের যা করার কথা ছিল কিছুই আমরা করিনি বরং আমরা মানুষের বিরুদ্ধে গেছি। এটা কিছুসংখ্যক লোকের উচ্ছাবিলাস, অন্ধ এবং অন্যায় রাজনৈতিক আনুগত্যের জন্য এটা হয়েছে।  এর জন্য আমাদের অনেককে জীবন দিতে হয়েছে কর্তব্য কাজ করতে গিয়ে। আমাদের যে লোকগুলি মারা গেছে এটা ঊর্ধ্বতনদের ভুলের জন্য হয়েছে।  এই দায়ভার তো যিনি জীবন দিয়েছেন তার নয়, এ দায়ভার তো যিনি অর্ডার করেছেন তার। তাদেরকে (ঊর্ধ্বতনদের) অবশ্যই পানিশমেন্ট পেতে হবে এটা আমি বিশ্বাস করি। যারা এই অন্যায় করেছেন তাকে অবশ্যই শাস্তি পেতে হবে। যিনি বাধ্য হয়ে এই কাজটা করেছেন আমার বিশ্বাস আদালত থেকে উনি ন্যায় বিচার পাবেন।

আমি মনে করি, ৫ই আগস্টের পরে মানুষ আগে যেভাবে আমাদেরকে দেখেছে, হঠাৎ করে তারা আমাদেরকে বন্ধু মনে করবে না। এজন্য প্রতিদিন আপনারা মূল্য দিচ্ছেন, এখনো পুলিশ জায়গায় জায়গায় যাচ্ছে ,কাজ করতে যাচ্ছে, আইন প্রয়োগ করতে যাচ্ছে সেখানে আক্রমণের শিকার হচ্ছে । আসামি ছিনিয়ে নিচ্ছে। আইন না মানার একটি প্রবণতা চলে আসছে । কারণ তারা মনে করছে পুলিশ তারা গণবিরোধী কাজ করেছে, এখন আমরা আমাদের মত চলব। পুলিশ লাগবে না। এটা সম্পূর্ণ ভুল ধারণা।    একটা সভ্য দেশ পুলিশ ছাড়া চলতে পারে না। পৃথিবীর কোথাও এই দৃষ্টান্ত নাই, এদেশের মানুষকে এটা বুঝতে হবে। যারা বুদ্ধিমান তারা এটা বুঝেন। তবে কিছু অবুঝ এবং কিছু মানুষ আছে যারা মনে করছে, যে পুলিশ আইন প্রয়োগ করতে যাচ্ছে তারা আমাদের প্রতিপক্ষ। দেশের অপরাধ দমন করা যদি না হয়, শৃঙ্খলা যদি ফিরিয়ে না আনা হয়, তাহলে কোন নাগরিক থাকতে পারবে ? ১৮ কোটি লোকের একজনও ঘুমাতে পারবে? আপনারা লক্ষ্য করছেন যখন অপরাধ রেড়ে যায় তখন রকম শুরু হয়। তখন মানুষকে রাত জেগে নিজেদের পাহাড়া দিতে হয়। এ দায়িত্বটা তো আমার।

আমি দেশবাসীকে আহ্বান জানাই, আমাদেরকে কাজ করতে দেন, অনুগ্রহ করে আমাদের উপর আক্রমণ করবেন না। উই আর হেয়ার ফর দি সোসাইটি, ফর দি কান্টি। নইলে কীভাবে সমাজে স্থিরতা আসবে।  কীভাবে আমরা নীডডফুল, ইফেকটিভ একটা ইলেকশনের দিকে আগাবো। স্টেবেলিটিতো আমাকে আনতে হবে। আমাকে কেন কাজ করতে দিচ্ছেন না। এটা টোটাললি যুক্তিহীন কাজ। এখনতো আবেক তারিত হওয়ার কিছু নেই। পুলিশতো মানুষের শক্র নয়। উই হেভ টু ওয়ার্ক ফর দি কান্টি। উই হেভ টু মেক ইট হেপেন। 

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশের এডিশনাল ইন্সপেক্টর জেনারেল সিবগাতুল্লাহ। উপস্থিত ছিলেন, ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি একেএম আওলাদ হোসেন, গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার ড. মোহাম্মদ নাজমুল করিম খান, ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশের ডিআইজি ইসরাইল হাওলাদার, ডিআইজি আবু কালাম সিদ্দিক, গাজীপুর ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ  সুপার একেএম জহিরুল ইসলাম প্রমুখ