কমিটি নিয়ে বিএনপির দুই গ্রুপের দ্বন্দ্ব

প্রধান শিক্ষিকার কক্ষে তালা, চেয়ার গাছে ঝুলছে

Sanchoy Biswas
বাংলাবাজার ডেস্ক
প্রকাশিত: ৯:১৯ অপরাহ্ন, ০৮ মে ২০২৫ | আপডেট: ৬:৩৬ অপরাহ্ন, ১৩ অগাস্ট ২০২৫
ছবিঃ সংগৃহীত
ছবিঃ সংগৃহীত

ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি নিয়ে বিএনপির দুই পক্ষের দ্বন্দ্বের জেরে রাজশাহীর পবা উপজেলার নওহাটা পৌরসভার বাগধানী উচ্চবিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের কক্ষে তিন দিন ধরে তালা ঝুলছে। প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়ে আসছেন, কিন্তু নিজের কক্ষে ঢুকতে পারছেন না। গত মঙ্গলবার কক্ষে তালা দেওয়ার পাশাপাশি প্রধান শিক্ষক মঞ্জু মনোয়ারাকে লাঞ্ছিত করা হয় বলেও অভিযোগ রয়েছে।

জানা গেছে, বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ছিলেন নওহাটা পৌরসভার সাবেক মেয়র ও আওয়ামী লীগ নেতা হাফিজুর রহমান। গত বছরের ৫ আগস্ট থেকে তিনি আত্মগোপনে। পরে চলতি বছরের ৩ মার্চ কমিটির নতুন সভাপতি নির্বাচিত হন অর-রশিদ নামের এক ব্যক্তি। তিনি নওহাটা পৌর বিএনপির সভাপতি রফিকুল ইসলামের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত।

আরও পড়ুন: ভারতীয়দের গণপিটুনিতে বাংলাদেশি যুবক নিহত, আহত ৫

শিক্ষকেরা জানিয়েছেন, পৌর বিএনপির ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর নাজিম উদ্দিন মোল্লা নজির কমিটির সভাপতি হতে চাইতেন। তিনি পৌর বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাবেক মেয়র মো. মোকবুল হোসেনের ঘনিষ্ঠ। নাজিম উদ্দিন মোল্লা বিদ্যালয়ের নতুন এই কমিটি মেনে নেননি। তিনি তাঁর লোকজন নিয়ে গিয়ে প্রধান শিক্ষককে কক্ষ থেকে বের করে তালা দেন।

নাম না প্রকাশের অনুরোধ জানিয়ে শিক্ষকেরা জানান, গত মঙ্গলবার ম্যানেজিং কমিটির সভা ছিল। সভা চলাকালে কিছু ব্যক্তি তাঁর কক্ষে ঢুকে গালিগালাজ করেন, ভাঙচুর চালান এবং প্রধান শিক্ষককে মারধর করে কক্ষ থেকে বের করে দিয়ে দরজায় তালা লাগিয়ে দেন।

আরও পড়ুন: একাধিক চাঁদাবাজি মামলার পরও আশুলিয়ার বিএনপি নেতার হুমকি-ধমকি

মঙ্গলবার সকালের এ ঘটনার পর দুপুরে পবা থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন প্রধান শিক্ষক মঞ্জু মনোয়ারা। অভিযোগে নওহাটা পৌরসভার বাঘাটা গ্রামের বাসিন্দা ও পৌর যুবদলের সদস্য মো. আতাউর (৩৫); বাগসারা উচ্চবিদ্যালয়ের অফিস সহায়ক ও পৌর যুবদলের সদস্য মো. মকসেদ আলী (৩৫); সাবেক কাউন্সিলর নাজিম উদ্দিন মোল্লা (৫০) এবং বাগধানী গ্রামের মো. জমসেদের (৪০) নাম উল্লেখ করা হয়েছে যে তাঁরা ওই ঘটনা ঘটিয়েছেন। এ ছাড়া অভিযোগে অজ্ঞাতনামা আরও ১০ থেকে ১২ জনকেও আসামি করা হয়েছে।

অভিযোগে বলা হয়, অভিযুক্ত ব্যক্তিরা কক্ষে ঢুকে অকথ্য ভাষায় প্রধান শিক্ষককে গালিগালাজ করেন এবং নিষেধ করলে কক্ষের আসবাবপত্র ভাঙচুর করেন। পরে প্রধান শিক্ষককে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে বাইরে বের করে দেন। এরপর কক্ষের দরজায় তালা লাগিয়ে তাঁরা চলে যান। সেই সঙ্গে প্রধান শিক্ষক ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের হুমকিও দেওয়া হয়।

আজ বৃহস্পতিবার বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা গেছে, প্রধান শিক্ষকের কক্ষের দুটি দরজায় এখনো চারটি তালা ঝুলছে। বিদ্যালয়ের সামনে একটি গাছে ঝুলছে প্রধান শিক্ষকের চেয়ার। শিক্ষকেরা জানান, সামনের ডোবায় চেয়ারটি ফেলে দেওয়া হয়েছিল। সেখান থেকে তুলে কে বা কারা চেয়ারটি গাছে ঝুলিয়ে রেখে গেছে। এখন তাঁরা চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক মঞ্জু মনোয়ারা বলেন, ‘যাঁরা আমাকে রুম থেকে বের করেছেন, তাঁরাই চেয়ার ভেঙে ফেলে গিয়েছিল। অফিসে লাগানো তালা চারটির চাবিও তাঁদের কাছে। এটা বিএনপির অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব। ঘটনাটি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তাকে জানিয়েছি।’

বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি মামুন-অর-রশিদ বলেন, ‘সেদিন কমিটির প্রথম সভা ছিল। আমরা যাওয়ার আগেই সাবেক কাউন্সিলর নজিরের নেতৃত্বে কিছু লোক প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে। তারা প্রধান শিক্ষককে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে। ম্যাডামের মোবাইল ও চেয়ার ভেঙে দেয়। ম্যাডামের ঘরে তালা মারে বাগসারা উচ্চবিদ্যালয়ের পিয়ন মকসেদ। ওই স্কুল চলাকালে কীভাবে সে এই স্কুলে আসতে পারে? আমরা এটা শিক্ষা কর্মকর্তাকে জানিয়েছি। প্রশাসনকে অবহিত করেছি। এখনো সুরাহা হয়নি।’

অভিযুক্ত সাবেক কাউন্সিলর নাজিম উদ্দিন মোল্লা নজির বলেন, ‘স্কুল বাগধানী, আর সভাপতি বানিয়েছে দুয়ারির, সেটা অন্য এলাকা। এটা কেউ মেনে নেবে? আমরা তালা মেরেছি এটা মিথ্যা কথা। বললেই তো হলো না। শিক্ষক-ছাত্ররা শিক্ষকের বিরুদ্ধে হরতাল করছিল। আমরা সেটা দেখেছি। আমরা মারতে যাব কেন? মারার কোনো দরকার আছে? কেউ প্রধান শিক্ষককে শিখিয়ে দিয়েছে। তিনি শেখানো কথা বলছেন। আমরা জানি না।’

এ বিষয়ে পবা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুল ইসলাম বলেন, বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাকে কেন্দ্র করে সেখানে উত্তেজনা ও চেয়ার ছোড়াছুড়ির ঘটনা ঘটেছে। প্রধান শিক্ষকের কক্ষে তালা দেওয়ার অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আরাফাত আমান আজিজ জানান, ‘ঘটনার ব্যাপারে আমরা অবগত আছি। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। তালা খুলে যাবে।’