গলাচিপার পানপট্টিতে ভয়াবহ নদীভাঙন, দিশেহারা হাজারো পরিবার

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপ এবং এর প্রভাবে সৃষ্ট অস্বাভাবিক জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার পানপট্টি ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকায়। সেই সঙ্গে আগুনমুখা ও বুড়াগৌরাঙ্গ নদীর অব্যাহত ভাঙন স্থানীয়দের জীবনকে আরও দুর্বিষহ করে তুলেছে। সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, শত শত পরিবার ঘরবাড়ি ও ফসলি জমি হারিয়ে চরম দুর্ভোগে পড়েছে।
সরেজমিন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ঘূর্ণিঝড় রিমাল-পরবর্তী পরিস্থিতি ও সাম্প্রতিক নিম্নচাপের প্রভাবে সৃষ্ট উচ্চ জোয়ারের ঢেউয়ে পানপট্টি বোর্ড সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন পোল্ডার ৫৫/৩-এর অন্তত ১০-১৫ ফুট বেড়িবাঁধ ভেঙে গেছে। এতে বিবীর হাওলা, গুপ্তার হাওলা, সুতিরাম এবং খরিদাসহ বেশ কয়েকটি গ্রাম সম্পূর্ণভাবে জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে। অনেক বসতঘরে পানি ঢুকে পড়েছে, যা দৈনন্দিন জীবনযাত্রাকে ব্যাহত করছে। স্থানীয়দের দাবি, প্রায় ১৫ থেকে ২০ হাজার মানুষ এই পানিবন্দী অবস্থায় ঝুঁকিতে রয়েছে।
আরও পড়ুন: বৃষ্টির অজুহাতে সেতু নির্মাণ কাজ বন্ধ, লাপাত্তা ঠিকাদার
দীর্ঘদিন ধরে পানপট্টি ইউনিয়ন আগুনমুখা ও বুড়াগৌরাঙ্গ নদীর তীব্র ভাঙনের শিকার। বিগত কয়েক বছরে এই দুই নদীর ভাঙনে পানপট্টি বাজার, লঞ্চঘাট ও সংলগ্ন এলাকার প্রায় ২৫০০ ফুট নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। পানপট্টি লঞ্চঘাট, যা গলাচিপা ও রাঙ্গাবালী উপজেলার মধ্যে যোগাযোগের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম, সেটিও বারবার স্থান পরিবর্তন করেও রক্ষা করা যাচ্ছে না। স্থানীয় ব্যবসায়ী ও বাসিন্দারা জানান, ভাঙনের কারণে তাদের ব্যবসা-বাণিজ্য ও জীবিকা হুমকির মুখে পড়েছে।
জোয়ারের নোনা পানি প্রবেশ করায় এলাকার হাজার হাজার একর ফসলি জমি, মাছের ঘের এবং পুকুরের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। কৃষি ও মৎস্য সম্পদের ওপর নির্ভরশীল এই এলাকার মানুষের ভবিষ্যৎ নিয়ে চরম অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। অনেক ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার আশ্রয়হীন হয়ে বেড়িবাঁধ বা উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছে। তাদের অভিযোগ, পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে জিও ব্যাগ ফেলে সাময়িক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলেও তা দীর্ঘস্থায়ী সমাধান দিতে পারছে না। স্থানীয়রা প্রধানমন্ত্রীর কাছে নদী শাসনের মাধ্যমে স্থায়ী বেড়িবাঁধ নির্মাণের জোর দাবি জানিয়েছেন।
আরও পড়ুন: আসামির স্থলে ছবি প্রকাশে ছাত্রদল নেতার সংবাদ সম্মেলন
গলাচিপা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহমুদ হাসান জানিয়েছেন, ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধ দ্রুত মেরামতের জন্য উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. জাফর রানার নেতৃত্বে একটি দল ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করছে এবং ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর তালিকা প্রস্তুত করা হচ্ছে। তালিকা অনুযায়ী দ্রুত ত্রাণ কার্যক্রম শুরু করা হবে বলেও তিনি আশ্বস্ত করেছেন।
তবে এলাকাবাসীর প্রত্যাশা, কেবল ত্রাণ বা সাময়িক মেরামত নয়, পানপট্টিকে নদীর গ্রাস থেকে বাঁচাতে একটি দীর্ঘমেয়াদী ও টেকসই সমাধান অবিলম্বে গ্রহণ করা হবে।