নেত্রকোনায় আওয়ামী লীগ নেতাসহ ৪৩৬ জনের নামে মামলা

Sadek Ali
হৃদয় রায় সজীব, নেত্রকোনা প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ৯:৩০ অপরাহ্ন, ০৩ জুলাই ২০২৫ | আপডেট: ১০:২৪ অপরাহ্ন, ০৯ অগাস্ট ২০২৫
ছবিঃ সংগৃহীত
ছবিঃ সংগৃহীত

এক বছর আগে বিএনপি কার্যালয়ে হামলা-ভাঙচুরের অভিযোগ এনে নেত্রকোনার খালিয়াজুরি উপজেলায় আরও একটি মামলা হয়েছে। গতকাল বুধবার উপজেলার সদর ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি মজলু মিয়া বাদী হয়ে থানায় মামলাটি করেন।

বিশেষ ক্ষমতা আইনে করা এই মামলায় ১৮৬ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও ২৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে। এতে প্রধান আসামি করা হয়েছে নেত্রকোনা-৪

আরও পড়ুন: ভোলায় শুল্ক ফাঁকি দেওয়া অবৈধ সিগারেটসহ আটক ৩

(মোহনগঞ্জ-মদন-খালিয়াজুরি) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য সাজ্জাদুল হাসানকে। ২ নম্বর আসামি করা হয় খালিয়াজুরি উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও বিজিএমের সাবেক পরিচালক রব্বানী জব্বারকে। আসামিদের মধ্যে আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীর পাশাপাশি সরকারি-বেসরকারি চাকুরিজীবী এবং সাংবাদিকও আছেন। 

মামলায় ৫১ নম্বর আসামি করা হয়েছে যুগান্তরের খালিয়াজুরি উপজেলা প্রতিনিধি ও উপজেলা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি শফিকুল ইসলামকে। তিনি সিদ্দিকুর রহমান বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের অফিস সহকারী। আর ১০৬ নম্বর আসামি করা হয়েছে সকালের সময় উপজেলা প্রতিনিধি মৃণাল কান্তি দেবকে। সরকারি চাকুরিজীবীদের মধ্যে ১৩ নম্বর আসামি করা হয় মো. শাহিন মিয়াকে। তিনি স্বাস্থ্য সহকারী হিসেবে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত। আর ২০ নম্বর আসামি করা হয় রাজন তালুকদারকে। তিনি বারহাট্টা উপজেলায় খাদ্য গুদামে নিরাপত্তা প্রহরী হিসেবে কর্মরত। এ ছাড়া ১৮৬ নম্বর আসামি আবদুল মোনায়েমকে। তিনি নূরপুর বোয়ালী দাখিল মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক। ২৬ নম্বর আসামি আদিল মিয়া সিদ্দিকুর রহমান বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের অফিস সহায়ক। ২৭ নম্বরে করা আসামি আসাদুল ইসলাম খালিয়াজুরি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের অফিস সহায়ক। ৫৭ নম্বরের আসামি রফিকুল ইসলাম প্রাথমিক শিক্ষক সংগঠন কালবে সরকারি ব্যবস্থাপক হিসেবে কলমাকান্দায় কর্মকর্তা। 

আরও পড়ুন: ভারতীয় চোরাচালান ধরতে গিয়ে নৌকা ডুবে বিজিবি সদস্য নিখোঁজ

এজাহারে বাদী উল্লেখ করেছেন, গত বছরের ১৬ জুলাই বেলা ১২টা ২০ মিনিটে খালিয়াজুরি উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির প্রথম সভা দলীয় কার্যালয়ে চলাকালে এক নম্বর আসামির হুকুমে ২ নম্বর থেকে ১০ নম্বর আসামিদের নেতৃত্বে উল্লেখিত আসামিরা অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে ভয়ভীতি দেখানোসহ দলীয় কার্যালয় ভাঙচুর চালিয়ে সভা পণ্ড করে দেয়। এ ছাড়া রাস্তা বন্ধ করে ১৫টি মোটরসাইকেল ও তিনটি ইজিবাইক  যানবাহন ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। ওই ঘটনায় কিছুটা দেরিতে হলেও তিনি মামলাটি করেছেন।

এ বিষয়ে আজ বৃহস্পতিবার সকালে বাদী মজলু মিয়া মুঠোফোনে বলেন, ‘দলীয়ভাবে সিদ্ধান্ত হয় মামলা করতে হবে। তাই আমি মামলার বাদী হয়েছি। অপর প্রশ্নে তিনি উত্তর না দিয়ে ফোন কেটে দেন। এরপর বেশ কয়েকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।’

গত বছর আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর ১৭ আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত জেলায় আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে অন্তত ৬০টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় ছয় হাজারের মতো আসামি করা হয়েছে। এরমধ্যে অন্তত ডজনখানেকের মত পেশাদার সাংবাদিককে আসামি করা হয়েছে। 

মামলার আসামি সাংবাদিক শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এজাহারে যে সময় ও ঘটনা উল্লেখ করা হয়েছে, সে সময় আমি উপস্থিত ছিলাম না। আমাকে অহেতুক রাজনীতির তকমা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। আমি কোন রাজনৈতিক সংগঠনের সঙ্গেও যুক্ত নই। সাংবাদিক মৃণাল কান্তি দেবও জানান তাঁকে শুধু শুধু হয়রানি করার জন্যই আসামি করা হয়েছে। এরকম কোন ঘটনা তার জানা নেইও এবং এর সঙ্গে তিনি সম্পৃক্তও নন। 

খালিয়াজুরি প্রেসক্লাবের আহ্বায়ক মো. হাবিবুল্লাহ  বলেন, শফিকুল ইসলাম ও মৃণাল দেব তাঁরা পেশাদার সাংবাদিক। সহিংসতাসংক্রান্ত অপরাধের অভিযোগ এনে তাঁদের এভাবে আসামি করা স্বাধীন সাংবাদিকতার পরিপন্থী। এটা তাঁদের জন্য অত্যন্ত মানহানিকর ও অসম্মানজনক। আমি এই ঘটনার তীব্র নিন্দা এবং প্রতিবাদ জানাচ্ছি। আশা করছি আইন শৃঙ্খলা বাহিনী বিষয়টি নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।’

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে খালিয়াজুরি উপজেলা  বিএনপির সভাপতি আবদুর রউফ স্বাধীন বলেন, মামলায় আসামিদের বিষয় আমার জানা নেই। বাদী আমার সঙ্গে পরামর্শ করেননি। এ নিয়ে আমাকে অনেকেই ফোন করছেন। আপনি আমাদের সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রহমানের কাছ থেকে জানলে ভালো হয়। তিনি সব কিছু বলতে পারবেন। তবে মাহবুবুর রহমানের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। 

খালিয়াজুরি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুগবুল হোসেন আজ সকালে বলেন, মামলার পর অভিযান চালিয়ে তিনজন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত আছে। অবশ্য এর মধ্যে বেশ কয়েকজন আসামি অন্য মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে রয়েছেন।