জারিরদোনা ও তুলাতুলি খাল খনন না হওয়ায় কমলনগরে জলাবদ্ধতা

লক্ষ্মীপুরের কমলনগরে খাল খনন ও উচ্ছেদে প্রশাসনের আংশিক পদক্ষেপে চরম দুর্ভোগে পড়েছে হাজিরহাট ও চর লরেন্স ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামের কয়েক হাজার সাধারণ মানুষ। উপজেলার সদর হাজিরহাট বাজার সংলগ্ন জারিরদোনা শাখা খাল দখলমুক্ত করতে সম্প্রতি অভিযান চালায় উপজেলা প্রশাসন।
তবে অভিযানে কেবল হাতেগোনা কয়েকটি ছোট ঘর ভাঙা হলেও খালের বড় অংশে এখনো দখলে আছে একাধিক বড় স্থাপনা। খননের নামে খালের সামান্য অংশে কিছু ময়লা পরিষ্কার করে ‘প্রাথমিক খনন কাজ’ শেষ দেখিয়ে অভিযান সমাপ্ত করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
আরও পড়ুন: বাবা লেচু মিয়ার জনপ্রিয়তা ধরে এগিয়ে যাচ্ছেন সৈয়দা আদিবা হোসেন
এরই মধ্যে টানা বৃষ্টিতে হাজিরহাট এলাকাজুড়ে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। বাজার, রাস্তাঘাট, বসতবাড়ি সব জায়গায় পানি জমে জনদুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে।
একই দুর্ভোগে পড়েছেন চর লরেন্স ইউনিয়নের তুলাতুলি খালসংলগ্ন ৪ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দারা। তুলাতুলি খালটি খননের শেষ পর্যায়ে এসে দখলদারদের বাধায় বন্ধ হয়ে যায় খননকাজ। ফলে কয়েকটি গ্রাম এখন জলাবদ্ধতার দুর্ভোগে রয়েছেন।
আরও পড়ুন: বৃষ্টির অজুহাতে সেতু নির্মাণ কাজ বন্ধ, লাপাত্তা ঠিকাদার
এতে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা।
বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) সরেজমিনে মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে টানা বৃষ্টির ফলে জলাবদ্ধতার এমন চিত্র দেখা যায়।
জানা গেছে, উপজেলা সদর হাজিরহাট বাজার ঘেঁষে বয়ে যাওয়া জারিরদোনা খালের পাড় দখল ও ভরাট করে প্রভাবশালীরা বহুতল মার্কেট, দোকানঘর ও আবাসিক ভবন নির্মাণ করেন। এক সময় এটি দিয়ে মহাজনি নৌকা চলাচল করলেও দখলদারদের কারণে খালটির অস্তিত্ব বিলীনের মুখে পড়ে। এতে করে বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে স্থানীয়দের দুর্ভোগ পোহানোর পাশাপাশি কৃষকরা অনেক ক্ষতির শিকার হয়। বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে প্রশাসন খালটি উদ্ধারে উদ্যোগ নিয়ে সরেজমিন পরিদর্শন করে ৮০ দখলদারের তালিকা তৈরি করেন। দখল ছেড়ে দিতে বারবার দেওয়া হয় উচ্ছেদ নোটিশ, করা হয় মাইকিং। কিন্তু কেউই স্থাপনাগুলো সরিয়ে নেয়নি। যে কারণে প্রশাসন বাধ্য হয়ে গত ২৫ জুন ওইসব অবৈধ দখল উচ্ছেদের অভিযান শুরু করেন। কিন্তু অভিযানে কিছু অবৈধ ছোট দোকানঘর ও বক্স কালভার্ট ভাঙা হলেও খালের বড় অংশজুড়ে অক্ষত রয়েছে প্রভাবশালী ভবনগুলো।
উচ্ছেদ অভিযানের পর খাল খননের কথা থাকলেও তা না করে খালের সামান্য অংশে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম পরিচালনা করে প্রাথমিকভাবে কাজ শেষ করে উপজেলা প্রশাসন। এতে পানির প্রবাহমান নিশ্চিত না হওয়ায় বৃষ্টিতে আবারো সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতা।
অন্যদিকে উপজেলার চর লরেন্স ও তোরাবগঞ্জ এলাকায় জলাবদ্ধতা ও বন্যা নিরসন এবং শুষ্ক মৌসুমে সেচ সুবিধা নিশ্চিত করতে “তুলাতুলি” খাল খননে উদ্যোগ নেয় বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি)। প্রায় ৮ কিলোমিটার দীর্ঘ এই খালের ৯০ ভাগ কাজ শেষ হলেও শেষ পর্যায়ে এসে অবৈধ দখলদারদের বাধার মুখে পড়ে প্রকল্পটি। এ নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পরও খালের বাকি অংশ খননের উদ্যোগ নেয়নি সংশ্লিষ্ট প্রশাসন। ফলে মৌসুমি বায়ু ও পূর্ণিমার প্রভাবে টানা বৃষ্টিতে কয়েকটি গ্রামের মানুষ এখন পানিবন্দি।
স্থানীয়রা বলছেন, “প্রশাসনের এই লোক দেখানো অভিযান ও খাল খননের নামে ভেলকিবাজির কারণে কয়েকটি গ্রামের হাজার হাজার মানুষ এখন পানিবন্দি। জারিরদোনা ও তুলাতুলি খাল পুরোপুরি উচ্ছেদ ও সঠিকভাবে খনন না হলে জলাবদ্ধতার এই দুর্ভোগ কাটবে না।”
হাজিরহাট এলাকার আবদুল করিম, আলী হায়দার ও ইসমাইল হোসেনসহ কয়েক কৃষক বলেন, হাজিরহাটের মধ্যবর্তী জারিরদোনা শাখা খালের অংশ দখলের কারণে পানি নিষ্কাশন হয় না। জলাবদ্ধতায় আমাদের সয়াবিন, ধান ও ধানের বীজতলা নষ্ট হয়ে যায়। এখনো পানির মধ্যে দুর্ভোগের মধ্যে আছি আমরা।
তুলাতুলি খালের বিষয়ে ওই এলাকার মোঃ বাশার, মোসলেহউদ্দিন ও মানিকসহ অনেকে বলেন, পুরো খালটি খননের শেষ পর্যায়ে এসে আমাদের এখানে কয়েকজন দখলদারের বাধার সম্মুখীন হয়। আমরা এর প্রতিবাদে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছি। তারপরেও খালটি আর খনন করেনি প্রশাসন। এখন আমাদের এলাকাসহ পার্শ্ববর্তী কয়েকটি এলাকা পানির নিচে।
এ বিষয়ে হাজিরহাট বাজার পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোঃ কামরুল ইসলাম বলেন, জারিরদোনা খালের ওপর অবৈধ উচ্ছেদ ও খনন কাজ কোনটাই জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী হয়নি। তাই দুর্ভোগ একটুও কমেনি বরং বেড়েছে। কয়েকটি এলাকার বাড়িঘর, রাস্তাঘাট পানির নিচে তলিয়ে গেছে।
এ বিষয়ে কমলনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোঃ রাহাত উজ জামান বলেন, "প্রত্যাশা পূরণ করার জন্য যে পরিমাণ আর্থিক সংগতি লাগবে, সে সক্ষমতা উপজেলার নেই। ডিপার্টমেন্টগুলোকে তা বলা হয়েছে। সামনের এলজিইডির প্রজেক্ট ও বিএডিসির প্রজেক্টের মাধ্যমে শীত মৌসুমে তা খনন করা হবে।"