সাদা পাথর রক্ষায় প্রশাসনের ৫ দফা সিদ্ধান্ত

সিলেটের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অন্যতম স্থান ‘সাদা পাথর’ এলাকায় অব্যাহত পাথর লুটপাট রোধে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে গৃহীত হয়েছে ৫ দফা গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত।
বুধবার (১৩ আগস্ট) সন্ধ্যায় সিলেট সার্কিট হাউজে অনুষ্ঠিত এক সমন্বয় সভায় এসব সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। সভায় সিলেট জেলা ও বিভাগীয় প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সিলেটের জেলা প্রশাসক শের মাহবুব মুরাদ সাংবাদিকদের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
আরও পড়ুন: রায়পুরায় কাউকেই গ্রীন সিগন্যাল দেওয়া হয়নি বলে দাবি মনোনয়ন প্রত্যাশীদের
সিদ্ধান্তগুলো হলো, জাফলং ইসিএ ও সাদা পাথর এলাকায় ২৪ ঘণ্টা যৌথ বাহিনী দায়িত্ব পালন করবে। গোয়াইনঘাট ও কোম্পানীগঞ্জে যৌথ বাহিনীর সহায়তায় পুলিশের স্থায়ী চেকপোস্ট স্থাপন ও সার্বক্ষণিক তদারকি নিশ্চিত করা হবে। অবৈধ ক্রাশিং মেশিনে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে তা বন্ধে অভিযান চলবে। পাথর চুরিতে জড়িতদের শনাক্ত করে গ্রেপ্তার ও আইনের আওতায় আনা হবে। চুরি যাওয়া পাথর উদ্ধার করে পূর্বের অবস্থানে ফিরিয়ে নেওয়া হবে।
সাম্প্রতিক সময়ে প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা এবং প্রভাবশালী মহলের লাগামহীন দখলদারিতে সাদাপাথরসহ সিলেটের একাধিক পাথর কোয়ারি হারিয়ে যাওয়ার মুখে পড়ে। প্রাকৃতিক সম্পদের এই লুটপাটের ঘটনায় উদ্বিগ্ন হয়ে ওঠে পরিবেশবিদ, স্থানীয় বাসিন্দা ও পর্যটকরা।
আরও পড়ুন: কুলাউড়ায় গ্রাম পুলিশদের বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ কোর্সের উদ্বোধন করলেন জেলা প্রশাসক
উল্লেখ্য, গত বছরের ৫ আগস্ট থেকে স্থানীয় রাজনৈতিক দলগুলো পাথর কোয়ারিগুলো খুলে দেওয়ার দাবিতে আন্দোলনে নামেন। জামায়াত, বিএনপি, এনসিপি ও চরমোনাই পীরের নেতৃত্বে মানববন্ধন, সংবাদ সম্মেলন, ধর্মঘটসহ নানা কর্মসূচি পালিত হয়। এসব দলের অভিযোগ ছিল, ভারতের স্বার্থে বিগত সরকার কোয়ারি বন্ধ রেখেছে। অন্যদিকে সরকারপক্ষ দাবি করে, পাথর উত্তোলনের ফলে ঘনঘন বন্যার ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে।
এই অবস্থার সুযোগ নিয়ে প্রশাসনের নির্লিপ্ততায় রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় গড়ে ওঠে ‘পাথর খেকো’ চক্র। রাতের অন্ধকারে তারা দাপটের সঙ্গে চালিয়ে যায় পাথর লুট।
গণমাধ্যমে এসব লুটপাটের সংবাদ প্রকাশিত হলে দেশব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি হয়। বিষয়টি নিয়ে মুখ খোলেন অন্তর্বর্তী সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। হতাশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, “চার বছর পরিবেশকর্মী হিসেবে সিলেটে পাথর উত্তোলন বন্ধ রাখতে পেরেছি, এখন উপদেষ্টা হয়েও পারলাম না।”
এরপর সিলেট জেলা প্রশাসন নড়েচড়ে বসে। গঠন করা হয় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি। পাশাপাশি সুশীল সমাজ ও পরিবেশবাদী সংগঠনগুলোও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে।
এই প্রেক্ষিতে বুধবার ‘সাদা পাথর’ এলাকা পরিদর্শনে যায় দুদকের সিলেট কার্যালয়ের উপপরিচালক রাফী মোহাম্মদ নাজমুস সাদাতের নেতৃত্বে ৯ সদস্যের তদন্তদল। তদন্ত শেষে দুদক জানায়, এই লুটপাটে প্রভাবশালী ব্যবসায়ী, উচ্চপদস্থ ব্যক্তি ও স্থানীয়দের সম্পৃক্ততা থাকতে পারে।
তারা আরও জানায়, দূরবর্তী কার্যালয়ের কারণে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয়নি। তবে যাদের যোগসাজশে পাথর লুট হয়েছে, তাদের শনাক্ত করে তদন্ত প্রতিবেদন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে পাঠানো হবে। এই লুটপাটে স্থানীয় প্রশাসনের ভূমিকা ও সম্ভাব্য যোগসাজশ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও পর্যটনের সম্ভাবনাময় স্থান সাদা পাথর রক্ষায় এই ৫ দফা সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছে স্থানীয় বাসিন্দা ও পরিবেশবাদীরা।