চক্রের কাছে অসহায় জেলেরা
মেঘনায় ধরা পড়ছে ইলিশ, দাম নাগালের বাইরে

দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর লক্ষ্মীপুরের রামগতি-কমলনগরে মেঘনায় জেলেদের জালে ধরা পড়তে শুরু করেছে রূপালি ইলিশ। দীর্ঘদিন পর কাঙ্ক্ষিত ইলিশ ধরা পড়ায় জেলেদের চোখমুখে হাসির ঝিলিক বাড়ছে। তবে ইলিশের দাম এখনো সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। বাজারে ইলিশ আসতে শুরু করায় জেলেদের মধ্যে স্বস্তি লক্ষ করা গেলেও চক্রের থাবায় ইলিশ চলে যাচ্ছে দেশের বাইরে। এতে ইলিশ নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন জেলেরা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রামগতি উপজেলার টাংকিবাজার মাছঘাটে প্রতিদিন গড়ে ৮-১০ টন, আলেকজান্ডার ঘাটে ছয় থেকে সাড়ে ছয় টন, রামগতি বাজার ঘাটে ছয়-সাত টন, কমলনগরের মতিরহাটে তিন-চার টন, লুধুয়া ঘাটে দুই-তিন টন ও মাতাব্বরহাট ঘাটে আড়াই টনের মতো ইলিশ ধরা পড়ছে। মাছঘাটের জেলেদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। দীর্ঘ আড়াই মাস পর এখন নদীতে ইলিশ আসতে শুরু করেছে। জেলেদের জালেও ধরা পড়ছে।
আরও পড়ুন: বিএনপির ৪৭তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে সুনামগঞ্জে বর্ণাঢ্য র্যালী ও আলোচনা সভা
উপজেলার বিভিন্ন ইলিশের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, কাঙ্ক্ষিত ইলিশ ধরা পড়ার পরও বাজারে দাম কমছে না। এ বছর ভরা মৌসুমেও ইলিশের দাম ক্রেতাদের নাগালের বাইরে। এ ক্ষেত্রে প্রতিটি মাছঘাটে রয়েছে শক্তিশালী সিন্ডিকেট। তারা নানা অজুহাত দেখিয়ে ইলিশের দাম বাড়াতে থাকে। ইলিশ সংকট ও বাড়তি দাম দেখানো এসব চক্রের কারসাজি বলে জানায় স্থানীয় লোকজন। মেঘনাতীরের প্রতিটি মাছঘাটে রয়েছে শক্তিশালী সিন্ডিকেট।
এরা নদী থেকে মাছ আসার আগেই দাম নির্ধারণ করে রাখে, যাতে সাধারণ মানুষ মাছ ক্রয় করতে না পারে। পরে চড়া মূল্যে ইলিশ বিক্রি করে দূরের মোকামগুলোতে।
আরও পড়ুন: পাবনার উন্নয়নে চার দফা দাবিতে ১৫ দিনব্যাপী গণস্বাক্ষর কর্মসূচির উদ্বোধন
জালে ইলিশ ধরা পড়লেও দাম সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। সম্প্রতি লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলায় মেঘনা নদীতে।
এ কারণে ইলিশের দাম কোনোভাবেই থামানো যাচ্ছে না। এদের সঙ্গে জড়িত আড়তদার, দাদন ব্যবসায়ী ও মাছঘাট কমিটি। চক্রের কাছে অনেকটা অসহায় জেলেরা। সারাদিন নদীতে থেকে কাঙ্ক্ষিত ইলিশ ঘাটে আনার সঙ্গে সঙ্গে সিন্ডিকেট কম দামে সব ইলিশ ক্রয় করে আড়তে নিয়ে আসে। সেখানে ইলিশের দাম হাঁকা হয় চড়া মূল্যে, যাতে সাধারণ মানুষ কিনতে না পারে। পরে মজুদ করে ওই ইলিশ দূরের মোকামগুলোতে চড়া দামে বিক্রি করে।
জানা যায়, প্রতি বছর জুন থেকে অক্টোবর পর্যন্ত সময়টাকে ইলিশের ভরা মৌসুম ধরা হয়। এ সময়ে মেঘনা নদীতে জেলেদের জালে বিভিন্ন আকারের ইলিশ ধরা পড়ার কথা থাকলেও আড়াই মাস ধরে সেই কাঙ্ক্ষিত ইলিশ ধরা পড়েনি। চলতি সপ্তাহে মোটামুটি ইলিশ ধরা পড়তে শুরু করেছে।
জেলে, আড়তদার ও মাছ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমানে এক কেজি সাইজের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে দুই থেকে আড়াই হাজার টাকায়, ৬০০ থেকে ৮০০ গ্রামের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ৫০০ থেকে দুই হাজার টাকায়, ৩০০ থেকে ৪০০ গ্রামের ইলিশের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮০০ থেকে এক হাজার টাকায়।
রামগতি বাজারের মাছ ব্যবসায়ী নিজাম মাঝি বলেন, 'মাছ এখন ধরা পড়তে শুরু করছে। আশা করি দামও কমতে শুরু করবে। তবে মাছঘাটগুলোতে থাকা সিন্ডিকেট ভাঙতে হবে।'
আলেকজান্ডার ঘাটে মাছ কিনতে আসা আবু বকর মিয়া বলেন, 'বাজারে পর্যাপ্ত পরিমাণ ইলিশ মাছ আছে। তবে দাম বেশি। তাই চলে যাচ্ছি।'
কমলনগর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা তুর্য সাহা বলেন, 'ইলিশের দাম স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক বেশি। আমরা মাছঘাটগুলো পরিদর্শন করব। সিন্ডিকেট যদি থাকে, অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'
রামগতি উপজেলার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা সৌরভ-উজ-জামান বলেন, 'ঘাটে কয়েকটি চক্রের বিরুদ্ধে ইলিশ নিয়ে কারসাজির খবরও পাচ্ছি। প্রয়োজনে মাছঘাটগুলোতে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে।'