চোখ হারিয়েও হার মানেনি লামিম, স্বপ্ন দেখে ন্যায়ের বাংলাদেশের

২০২৪ সালের ৪ আগস্ট। খেলতে যাওয়ার অজুহাতে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিল ১৪ বছরের লামিম হাসান। ঠাকুরগাঁওয়ের নারগুন গ্রামের এই কিশোরটি সেদিন আন্দোলনে গিয়ে ফিরে এসেছে এক চোখ হারিয়ে। তবে চোখের আলো হারালেও মনোবল হারায়নি সে। বরং ভবিষ্যতের স্বপ্ন বুনছে একটি ন্যায়ের বাংলাদেশ গড়ার।
আরও পড়ুন: শরীয়তপুরে নির্যাতিত শিশুর পাশে তারেক রহমান
জুলাই-আগস্ট গণআন্দোলন চলাকালে ঠাকুরগাঁও সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারাত্মক আহত হয় লামিম। সহযোদ্ধারা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। দীর্ঘ চিকিৎসার পরও ফেরেনি তার বাম চোখের দৃষ্টিশক্তি, বরং দিন দিন জটিলতা বাড়ছে।
আরও পড়ুন: রায়পুরায় কাউকেই গ্রীন সিগন্যাল দেওয়া হয়নি বলে দাবি মনোনয়ন প্রত্যাশীদের
তবু হতাশ নয় এই কিশোর। লামিম বলেন, “আমার চোখ নেই, কিন্তু আফসোসও নেই। আমার তো শুধু চোখটা নেই, কিন্তু অনেক ভাই তো আর বেঁচেই নেই। আমি তাদের জন্য দোয়া করি। আর স্বপ্ন দেখি এমন একটা বাংলাদেশের, যেখানে অন্যায়-দুর্নীতি থাকবে না, থাকবে না বিভেদ।”
ছেলের এমন আত্মত্যাগে গর্বিত বাবা মমিনুল ইসলামও। তিনি বলেন, “লামিম যখন গুলিবিদ্ধ হয়, খবর পেয়ে হাসপাতালে গিয়ে তাকে পাই। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য দিনাজপুর, ঢাকায় নিয়ে যাই। জমি বন্ধক রেখে চিকিৎসা করিয়েছি, কিন্তু কোনো আফসোস নেই। কারণ আমার ছেলে তার চোখ দিয়ে দেশকে জাগিয়েছে।”
এখন লামিমের চোখে জটিলতা দেখা দিয়েছে। প্রয়োজন উন্নত চিকিৎসার। পরিবারের দাবি, তাকে যেন বিদেশে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়।
শুধু লামিম নয়, দেশের আরও বহু শিক্ষার্থী আন্দোলনে আহত হয়ে এখনও চিকিৎসার অভাবে ভুগছেন। আহত আন্দোলনকারী মেহরাব হোসেন বলেন, “এক বছর হয়ে গেছে কিন্তু অনেকেই এখনো সুচিকিৎসা পায়নি। যারা অঙ্গ হারিয়েছে, তাদের বিদেশে উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হোক।”
ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক ইসরাত ফারজানা জানান, জেলায় তিন শতাধিক আহত আন্দোলনকারীকে সহায়তা দেওয়া হয়েছে। বাকি আহতদের তালিকা প্রস্তুত হচ্ছে এবং উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।